রবিবার, ৪ মার্চ ২০১৮

‘সফলতার দ্যুতি ড. জেবউননেছা’

Home Page » ফিচার » ‘সফলতার দ্যুতি ড. জেবউননেছা’
রবিবার, ৪ মার্চ ২০১৮



কিছু মানুষ পৃথিবীতে জন্মলাভ করে সমাজকে আলোকিত করার লক্ষ্যে। সমাজের মানুষগুলোর দুঃখ দুর্দশাকে নিয়ে ভাবতে। এসব মানুষগুলো জ্ঞানে গুণে শিক্ষায় আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়। তাঁেদর সহজ সরল জীবন, বিনয়,নম্রতা দৃষ্টি কেড়ে নেয় সকলের চোখে। তাঁদের বাহ্যিকতা দেখে বোঝার উপায় নেই তারা কতটা গুণী। জেবউননেছা তেমনই একজন ব্যক্তিত্য।‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’ নামে খ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলার শীতলক্ষ্যার তীর ঘেঁষে ‘সাহিত্য পল্লী’ নলুয়া । সেই পল্লীতে ০৭ ফেব্রুয়ারী,১৯৮০,২৩ মাঘ,১৩৮৬,১৯ রবিউল আউয়াল ১৪০০ হিজরী সনে সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে করিম ভিলা,সাত্যিাংগন,৭২ নলুয়া সড়কে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জেবউননেছা। তাঁর পিতা নারায়ণগঞ্জের ষাট দশকের বিশিষ্ট কবি ও নাট্যকার, চত্বর সাহিত্য স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ও ১২ টি গ্রন্থের প্রণেতা আলহাজ্ব মুঃ জালাল উদ্দিন নলুয়া। মাতা ‘অলংকার’ কাব্যগ্রন্থ ও ‘বেলা শেষের তারা’ উপন্যাসের লেখক এবং ‘এম.এ কুদ্দুস শ্রেষ্ঠ মা, ২০১৩’ পদক প্রাপ্ত আলহাজ্ব লুৎফা জালাল। বাবা ও মা উভয়েই বাংলা একাডেমীর সদস্য এবং সংস্কৃতি অঙ্গনে বিভিন্ন সম্মাননায় অভিষিক্ত। তাঁর পিতামহ লিয়াকত হোসেন ওরফে কানু মিয়া সরদার বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রাপ্ত ছবি ‘জাগো হুয়া সাভেরা’র অভিনেতা এবং ঢাকা জাজের প্রাক্তন জোরার ছিলেন এবং পিতামহী কাশ্মিরী বেগম দেশের বিখ্যাত কলামিষ্ট, রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও ‘ছায়ানটের’ প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ওয়াহিদুল হক সাহেবের ফুফু। নারায়ণগঞ্জের ত্রিশ দশকের কবি ‘বাংলার পরিণাম’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কবি এম.এ মালেক তাঁর পিতামহের মামাত ভাই।

ড. জেবউননেছা

জেবউননেছা’র পিতা ১৯৬৯ইং সন থেকে দিনলিপি লিখেন। তারই ধারাবাহিকতায় জেবউননেছার শিশুকালের কিছ দুর্লভ স্মৃতি পাওয়া যায়। যেমন : তিনি ২৭.০৫.১৯৮৪ ইং তারিখে প্রথম নিজ হস্তে তাঁর নাম লিখেন। এরপর থেকে শুরু হয় তাঁর লেখাপড়া। সংস্কৃতি ও অধ্যয়ন দুই বহতা নদীর মত বয়ে গেছে তাঁর জীবনে। যে নদীর শ্রোত তাঁর জীবন নদী থেকে সাগরে মিশেছে।
বাবার দিনলিপি থেকে জানা যায়, জেবউননেছা শিশু আবৃত্তিকার হিসেবে সাহিত্য সংস্কৃতি জগতে প্রবেশ করেন। বাবা মা সাহিত্যানুরাগী ছিলেন বলে শিশুকাল থেকে বিশিষ্ট গুণীজনদের সংস্পর্শে তিনি আসেন। বাবার দিনলিপি থেকে জানা যায়, জেবউননেছার প্রতিটি জন্মদিনে তাঁদের ‘সাহিত্যাংগনে’ ঘরোয়া সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত হতো। সে সকল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিকবৃন্দ। পয়ত্রিশোর্ধ জেবউননেছ’ার জীবন কর্ম নিয়ে লিখতে বসে খানিকটা থমকে দাঁড়াতে হয়েছে। কোনদিক দিয়ে শুরু করা যায় তা ভেবে। তাই তাঁর জীবনকর্ম বিভিন্ন ভাগে সংক্ষিপ্তকারে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো।

শৈশব ও কৈশোরে জেবউননেছা :

জেবউননেছা’র বাবার দিনলিপি ১৩.০১.১৯৮৫ ইং তারিখ ও ১৫.০২.১৯৮৫ ইং তারিখ থেকে জানা যায় তিনি পাঁচ বছর বয়স না হতেই কবিতা আবৃত্তিতে পরষ্কার লাভ করেন।
এ প্রসঙ্গে তারঁ মা কবি লুৎফা জালাল ‘অলংকার’ কাব্যগ্রন্থে ‘আমাদের জেবউন’ কবিতায় লিখেন-

‘আমার একটি মেয়ে নামটি তাঁর জেবউন
তার যে আছে ভাই হরেক রকম গুণ,
অনেক রকম কবিতা জানে ভালো আবৃত্তিকার
পাঁচে পা না দিতেই পেয়েছে দুটি পুরষ্কার”।

মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি ৪১ লাইনের কবিতা মুখস্থ আবৃত্তি করে পুরস্কার লাভ করেন। এরপর থেকে তাঁর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ছয় বছর বয়সে ‘জাতীয় শিশু কিশোর প্রতিযোগিতা’য় লাভ করেন পুরস্কার। একই সময়ে সেরা হন জাতীয় শিশু সাহিত্য প্রতিযোগিতাতে ও। স্কুলে পড়ার সময় রচনা প্রতিযোগিতা, বক্তব্য প্রতিযোগিতায় ও পুরষ্কার লাভ করেন। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে অর্জন করেন শতাধিক পুরষ্কার। তাছাড়া, অভিনয়,গল্প বলা, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় তিনি বহুবার পুরস্কৃত হন। জেবউননেছার ধারাবাহিক সাফল্যের উপর ভিত্তি করে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘পালক,শ্রাবণ,৯৭ সংখ্যায় তাঁর এগার বছর বয়সে ‘শিশু শিল্পী’ সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জেবউননেছা’কে সাংবাদিক যাযাবর মিন্টু তাঁর ‘স্বাধীনতার লড়াই’ গ্রন্থটি এক ঝাঁক শিশুর সাথে তাঁকে  উৎসর্গ করেন।
শিক্ষাজীবনে জেবউননেছা :
জেবউননেছা মাত্র ছয় বছর বয়সে তৃতীয় শ্রেণীতে বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৯৪ সনে লেটার সহ ষ্টার মার্ক পেয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ন হন নারায়ণগঞ্জের আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় থেকে । তারই ধারাবাহিকতায় উক্ত বিদ্যালয়ের সদ্য প্রতিষ্ঠিত কলেজে আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ১৯৯৬ ইং সনে মানবিক বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ন হন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে বি.এস.এস (সম্মান) প্রথম শ্রেণী লাভ করেন এবং এম.এস.এস পরীক্ষায় ও প্রথম শ্রেণীতে লাভ করেন। অতঃপর লোক প্রশাসন বিভাগ থেকেই সুশাসন বিষয়ে এম.ফিল ডিগ্রী অর্জন করেন।  তিনি ভারতের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ‘এনার্জি এ্যান্ড গভর্ন্যান্স’ বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা  করে পি-এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করেছেন।  শিক্ষকতার পাশাপাশি তাঁর নিজস্ব গবেষণা চলছে পুরোদমে। বেশ কিছু গবেষণা বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

লেখালেখির জগতে জেবউননেছা (শিক্ষাজীবন থেকে বর্তমান ):  ড. জেবউননেছার লেখা বই

ছাত্রজীবনে অধ্যয়নের পাশাপাশি জেবউননেছা’র লেখালেখিতে বিচরণ দৃষ্টি কেড়ে নেয়। মাত্র বার বছর বয়সে লেখালেখিতে হাতেখড়ি হয় জেবউননেছা’র । ২৬.০৪.১৯৯২ইং তারিখে ‘বৃষ্টির ছড়া’ নামক চার লাইনের কবিতা প্রথম লিখেন। যে ছড়াটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘প্রতিভা বিকাশ’ ম্যাগাজিনে শ্রাবণ,১৩৯৭ সংখ্যায় মুদ্রিত হয়। অতঃপর প্রথম অনুগল্প ‘অসহায় পথশিশু মিনির গল্প’ লিখেন ২২.০৫.১৯৯৪ইং তারিখে যে গল্পটি নন্দিনী প্রকাশনা থেকে অণুগল্প সমগ্র ‘অতশী’ তে প্রকাশিত হয়েছে। ২৫.০৫.১৯৯৪ ইং তারিখে ‘জীবনের পরিহাস ’ নামক প্রথম প্রবন্ধ লিখেন। এরপর থেকে অবিরল ধারায় লিখে যাচ্ছন। তবে প্রবন্ধ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে লিখতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। শখের বশে মাঝে মধ্যে কবিতা ও লিখেন। সমসাময়িক সমাজের প্রেক্ষাপটে প্রবন্ধ গুলো নিয়মিত প্রকাশ করে যাচ্ছেন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে। বাংলাদেশ বেতারে ‘মহানগর’ ম্যাগাজিনে তাঁর রচিত অর্ধশত প্রতিবেদন ‘জীবন ও জীবিকা’ পর্বে প্রচারিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ে । এছাড়া ও তিনি ‘বেতার বাংলা’ পত্রিকার শিল্প সংস্কৃতি প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। বেতারে অনুষ্ঠিত বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে কথক হিসেবে ও দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবনে তাঁর লেখা দৈনিক ইনকিলাব,দৈনিক আজকের কাগজ,দৈনিক নওরোজ,দৈনিক সমাচার,দৈনিক মানবজমিন,দৈনিক প্রাইম এবং স্থানীয় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে দৈনিক সমকাল,দৈনিক যুগান্তরসহ জাতীয়,স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি সমাজের সমসাময়িক প্রেক্ষাপটগুলো লিখে যাচ্ছেন। তাঁর লেখালেখির জগতের প্রচ্ছন্ন সম্ভাবনা অনুভব করে তাঁর পিতা ১০.০৬.২০০৮ ইং তারিখে‘ভবিষ্যতের কবি’ শিরোনাম কবিতার এক পর্যায়ে লিখেন-
‘জেবুন সহজ সরল
জেবুন মায়ের ছবি
জেবুন সে যে অবিরল
ভবিষ্যতের কবি ’।
বাবার ভবিষ্যতদ্বাণী সঠিক হয়েছে। তাইতো জেবউননেছা “মুক্তিযুদ্ধ: বুদ্ধিজীবীর দৃষ্টিকোণ ও অভিজ্ঞতা” ও ‘আলোকিত নারীদের স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ’ নামক দুটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। তিনি “সুশাসন: বাংলাদেশের সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের তুলনামূলক সমীক্ষা” নামক গবেষণা গ্রন্থ,‘রোদেলা দুপুর’ নামক একটি কাব্যগ্রন্থ এবং ‘লক্ষ্যা থেকে পিয়াসী’ নামক একটি ব্যতিক্রমধর্মী ও তথ্যমূলক ভ্রমণ কাহিনী প্রকাশ করেন প্রান্ত প্রকাশন থেকে। ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী’ নামক গ্রন্থটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে।একুশ ভিত্তিক নাটক ‘বাংলা আমার বাংলা’ সম্পাদনা করেন এবং গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে অনন্যা প্রকাশনী থেকে। কাব্যগস্খন্থ ‘পথের নীল ধুলো’ এবং সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু,একুশ ও নির্বাচিত কবিতা’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন ঊষার দুয়ার প্রকাশনী থেকে। তিনি বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ কর্তৃক প্রকাশিত ‘সাহিত্যে অর্জনে বাংলাদেশের নারী,২য় খন্ডের’ ,নূরজাহান বেগম স্মারক গ্রন্থে সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । এছাড়া ও তাঁর নিজস্ব ডিসিপ্লিন সম্পর্কিত গবেষণাভিত্তিক লেখা বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং আর ও লেখা প্রকাশের অপেক্ষায়। তাঁর রচিত গবেষণাগ্রন্থ তাছাড়া, তাঁর রচিত প্রায় ১০০ এর অধিক প্রকাশিত অপ্রকাশিত প্রবন্ধ নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়।

সাংগঠনিক সম্পৃক্ততায় জেবউননেছা (শিক্ষাজীবন ও বর্তমান) :

ব্যক্তিগত সাফল্যের ধারাবাহিকতা তাঁকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। হাইস্কুল ও কলেজে তাঁর সৃজনশীল কর্মকান্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরবর্তীতে সকল ক্ষেত্রে পরিব্যপ্তি লাভ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত বুদ্ধি চর্চার সুযোগকে ও পুরোপুরি কাজে লাগান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন লেখাপড়ার পাশাপাশি রমনা সাংস্কৃতিক সংগঠন, রমনা আবৃত্তি সংসদ, ইনজেনাস গ্রুপ ফর এডুকেশন ঢাকা, রোটার‌্যাক্ট ক্লাব অব শ্যামলী পাইওনিয়ার ঢাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাইটার্স ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ, বেগম রোকেয়া বিতর্ক অঙ্গন, বাঁধন এবং বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কোর এ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে জেবউননেছা হয়ে উঠেন পরিচিত এক নাম।

জেবউননেছা শিক্ষাজীবনে যেমন সাংগঠনিক সম্পৃক্ততায় যেমন সফল ছিলেন। এখন ও ঠিক তেমনভাবে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে আছেন।
তিনি উপদেষ্টা: মাদক বিরোধী সচেতন ছাত্র সমাজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় লিও ক্লাব অব লিবার্টি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক এডমিনিষ্ট্রেশন ডিবেটিং ক্লাব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ষ্টুডেন্ট এসোসিয়েশন অফ নারায়ণগঞ্জ ,সহ সাংগঠনিক সম্পাদক: ঢাকা ইউনিভার্সিটি পাবলিক এডমিনিষ্ট্রেশন এ্যালামনাই এসোসিয়েশন আজীবন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় রোকেয়া হল এ্যালামনাই এসোসিয়েশন,ঢাকা ইউনিভাসির্িিট এক্স ষ্টুডেন্ট এসোসিয়েশন অফ নারায়ণগঞ্জ., চয়ন সাহিত্য ক্লাব। নির্বাহী সদস্য: জাতীয় সাহিত্য পরিষদ। যুগ্ম সম্পাদক- পেশাজীবী নারী সমাজ। সাহিত্য সম্পাদক- নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র, আজীবন সদস্য- এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ,বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ,নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতি,বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনি। নেটওয়ার্ক শিক্ষক- মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর। রেজিষ্টার্ড গ্রাজুয়েট- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আহবায়ক,ই - গভর্ন্যান্স প্লাটফর্ম ফর বাংলাদেশ ।শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক: বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ ।

পারিবারিক জীবনে জেবউননেছা:
বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের কন্যা জেবউননেছা। বাবা-মায়ের আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসায় জেবউননেছা যেন ধন্যা। অপরদিকে,তারঁ পিতা তাঁেক নিয়ে অনেক কবিতা লিখেন। এর মধ্যে ‘প্রিয় সন্তান ’ কবিতার শিরোনামে দেখা যায় তিনি কতটা আদরের কন্যা,সোহাগে ধন্যা-
‘জেবার ডাকে জীবনটাকে
লাগে কত ভালো
খোদার দান,প্রিয় সন্তান
আঁধারের আলো’।

জেবউননেছা চাপাঁইনবাবগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আলহাজ্ব অধ্যাপক মুহাঃ জারজেস হোসেন সাহেবের কনিষ্ঠ পুত্র মোঃ মবিন উদ্দিনের সাথে ২০০৪ সনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মবিন উদ্দিন গ্রীণ হেরিটেজ প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। মবিন উদ্দিন জেবউননেছা’কে উদ্দেশ্য করে লিখেন-

‘দায়িত্বশীল স্ত্রী,করিৎকর্মা বউ
তাঁর জন্য হৃদয়ে ভালোবাসার ঢেউ।

সংসার জীবনে জেবউননেছা: একমাত্র পুত্র আসির আনজার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এবং একজন বইপোকা।। আসির আনজার জেবউননেছা’কে নিয়ে লিখেন।
‘আমার মা সব কাজে সেরা
তাঁর জন্য ভালোবাসা হৃদয় ঘেরা’।

সন্তান ও সংসারের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল জেবউননেছা সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জাপানে বৃত্তির সুযোগ পেয়ে ও তিনি পিএইচডি করতে যাননি। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে উচ্চতর গবেষণা করার চিন্তা ও করেননি। বেছে নিয়েছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতকে। তিনি মনে করেন, মানুষের জীবন তখনই সফল হয় যখন তার সন্তান মানুষের মত মানুষ হয়। কেননা মাতা পিতার প্রতিচ্ছবি সন্তানের মধ্যে প্রকাশ পায়। দায়িত্বশীল সংসার দেখাশোনা,সন্তানের লেখাপড়া,নিজের পড়াশোনা, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি দায়িত্ব,সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সম্পৃক্ততা,বন্ধুবৎসলতা,অতিথিবৎসলতা,শ্বশুড়বাড়ীর দায়িত্ব,সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন,কারো বিপদে অর্থ ও মানসিক সাহায্য দিয়ে সাধ্যমত চেষ্টা করা যেন জেবউননেছার ধর্ম। মিশুক ও সামাজিক জেবউননেছা বিয়ের অল্প সময়ের মধ্যে শ্বশুড়বাড়ীর হৃদয়ে ঠাঁই নেন। তাঁর শ্বশুড়ের নিজ হস্তে ২১.১২.২০০৪ ইং তারিখে জেবউননেছা’র স্বামী মোঃ মবিন উদ্দিনকে দেয়া লিখিত পত্র থেকে সেটির প্রমাণ পাওয়া যায়,চিঠির এক পর্যায়ে তঁর শ্বশুড় চাপাই নবাবগঞ্জ সরকারী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ আলহাজ¦ অধ্যাপক মুহাঃ জারজেস হোসেন লিখেন,‘জেবার মত বুদ্ধিমতী মেয়ে তোমাকে সবকিছুতেই সাহায্য করতে পারে বলে আমি মনে করি’।

অত্যন্ত উদার মনের ব্যক্তিত্ব জেবউননেছা’র রচিত গ্রন্থগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জেবউননেছা তাঁর প্রথম গ্রন্থটি তাঁর শিক্ষাগুরু প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোহাব্বত খান’কে উৎসর্গ করেন। দ্বিতীয় গ্রন্থটি তার বাবা, মা ও সন্তানকে উৎসর্গ করেন। তৃতীয় গ্রন্থটি তাঁর পিতামহী ও শ্বশুড়কে উৎসর্গ করেন। চতুর্থ গ্রন্থটি তাঁর পিতামহকে এবং পঞ্চম গ্রন্থটি তার স্বামীকে এবং ষষ্ঠ গ্রন্থটি তারঁ শাশ্বড়ীকে উৎসর্গ করেন। জেবউননেছা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিশ্বাস করেন এবং অন্যদিকে যথেষ্ঠ ধর্মভীরু ও বটে। বাবার দিনলিপি থেকে জানা যায়, জেবউননেছা মাত্র আট বছর আট মাসে পবিত্র কোরান শরীফ পড়া শেষ করেন এবং সূরা ইয়াসীন তাঁর মুখস্থ। প্রতিদিনের দিনসূচীতে তাঁর প্রথম সূচী ‘সূরা ইয়াসীন’ আবৃত্তি করা। যা তিনি গত বিশ বছর যাবৎ নিয়মিত আবৃত্তি করে যাচ্ছেন। বিশ বছরে একদিন ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মহান আল্লাহর কৃপায় তিনি যে কাজে হাত দিয়েছেন তাতেই তিনি সফল হয়েছেন।

কর্মজীবনে জেবউননেছা :

ভাগ্যবতী জেবউননেছার কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ যেন সকালের ঝলমলে রোদের মত। এম.এস.এস পরীক্ষায় উত্তীর্ন হবার ২১ দিনের মধ্যে তিনি ইএনডিপি’তে জেন্ডার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করে তাঁর কর্মময় জীবন শুরু করেন। তারপর আর থেমে থাকেননি। একে একে চাকুরী পরিবর্তন করে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি বাড়িয়েছেন । যথাক্রমে তিনি বিয়াম মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। অতঃপর তিনি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশনে সহকারী পরিচালক ( প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১০ সনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগে যোগদান করেন।  বর্তমানে তিনি সহযোগী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান । তিনি যতগুলো প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেছেন। সকল স্থানে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলেন। তিনি বিয়াম মডেল কলেজ এবং গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন। তাইতো তাঁর বিদায় বেলায় ছাত্র-ছাত্রীরা কেঁদে  বুক ভাসিয়েছেন কেঁদেছেন তিনি ও । তিনি ও ছাত্র ছাত্রীদের প্রচন্ড রকমের ভালোবাসেন। তাইতো তাঁর রচিত ভ্রমণ কাহিনী ‘লক্ষ্যা থেকে পিয়াসী’ গ্রন্থের এক পর্যায়ে তিনি লিখেন ‘ছাত্রছাত্রীরা আমার প্রাণ,আমার হৃদয়। স্বীকার করছি তাদের খুব শাসন করি। কঠিন বকাঝকা দেই। কিন্তু অকপটে এটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, তাদেরকে আমি কতটা ভালোবাসি। হৃদয়স্থানে তাদের জন্য যে ভালোবাসা আছে। তা দেখা যায়না, যায়না স্পর্শ করা।’ এতটুকু বুঝতে বাকী নেই যে,জেবউননেছা কতটা মমতাময়ী শিক্ষক।

গুণীজনদের আশীর্বাদে জেবউননেছা :
বাবা - মা সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন বলে জেবউননেছা শিশুকাল থেকেই বিশিষ্ট গুণীজনদের সান্নিধ্য পান। তাঁর সংরক্ষিত অটোগ্রাফের ডায়েরীতে দেখা যায় প্রায় ৫০ এর অধিক গুণীজন তাকেঁ আশীর্বাদ করেছেন। শুধু তাই নয় প্রায় বিশ এর অধিক কবিতা তাঁেক নিয়ে লিখেছেন বিশিষ্ট গুণীজনেরা। উল্লেখযোগ্য অটোগ্রাফের মধ্যে দেখা যায় বিশিষ্ট কবি শামসুর রাহমান ২৮.১১.১৯৯৭ ইং তারিখে লিখেন,‘প্রিয় জেবুন্নেছা,মানবতার জয় হউক,সফল হউক তোমার জীবন।’ কবি আসাদ চৌধুরী ১৪.১১.২০১০ই তারিখে তাঁদের বাড়ীতে আসেন এবং সেদিন জেবউননেছাকে লিখেন-‘জেবু শুধু মেধাবী ছাত্রীই নয়,বরং সাংস্কৃতিক বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করেন সহজেই। জীবন সাফল্যের হোক,সুখের হোক এই কামনা করি।’ বেগম রোকেয়া পদক প্রাাপ্ত বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের উপদেষ্টাপ কবি বেগম রাজিয়া হোসাইন লিখেন ‘জেবউননেছা আমাদের লেখালেখির জগতে বিশেষ করে কবিতার আঙ্গিনায় একটি প্রতিশ্রুতিশীল সম্ভাবনাময় একটি উজ্জ্বল মুখ। তাঁর অভিযাত্রা সুষমামন্ডিত হোক।” ভারতের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক স্মৃতিকুমার সরকার তাঁর কবিতা সম্পর্কে লিখেন-‘ জেবউননেছার কবিতায় ফেলে আসা বাংলাদেশের মাটির গন্ধ,নদীর জলের শীতলতাকে খুঁেজ পাচ্ছি নতুন করে। ২৫.১১.২০১১ ইং তারিখে বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক,ভাষা সৈনিক ড. হালিমা খাতুন তাঁেক উৎসর্গ করেন,‘তোমার জন্য ফুল’ কবিতাটি। কবিতাটির কয়েকটি পংক্তি ছিল এরকম-
‘তোমার জন্য ফুল তো তুমিই
তবু চেষ্টা করে দেখি
আর কোন গ্রহ থেকে আনতে পারি কিনা।’
বিশিষ্ট গুণীজনদের এত এত ভালোবাসা তিনি জীবনে পেয়েছেন বলেই তাঁর জীবন নির্মল সদ্য ফোটা ফুলের মত সুশোভিত।

সম্মাননা প্রাপ্তিতে জেবউননেছা :

শিশুকাল থেকে বিভিন্ন বিষয়ে তিনি পুরষ্কৃত হয়েছেন এ বিষয়ে পূর্বে উল্লেখ করেছি। শিক্ষাজীবনের কৃতিত্ব এবং গবেষণায় ও তিনি বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। সেগুলো হলো -

ক) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হল স্বর্ণপদক -২০০২( ছাত্রী জীবনের কৃতিত্ব স্বরূপ)।
খ) এনটিভি ষ্টার শিপ জুস টিফিনের ফাঁকে  সম্মাননা-২০০৫
গ) চত্বর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ থেকে সাহিত্য গবেষণায় ‘চত্বর সাহিত্য পদক, ২০১১।
ঘ) এম,এ কুদ্দুস শ্রেষ্ঠ শিক্ষয়িত্রী পদক- ২০১২,নারায়ণগঞ্জ জেলা পর্যায়।
ঙ) মৃত্তিকা পদক-২০১৪’ (সংস্কৃতিসেবী)।
চ) বিনোদনধারা পারফরম্যান্স এ্যাওয়াড, বিশেষ সম্মাননা-২০১৪ (তরুণ মুক্তিযুদ্ধ গবেষক)।
ছ) আমরা কুঁড়ি পদক-২০১৪(তরুণ মুক্তিযুদ্ধ গবেষক)।
জ) বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি পুরষ্কার -২০১৩ (তরুণ মুক্তিযুদ্ধ গবেষক)।
ঝ) বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদ (বাসাপ এ্যাওয়ার্ড)-২০১৩ (তরুণ মুক্তিযুদ্ধ গবেষক)।
ঞ) নক্ষত্র সাহিত্য পদক- ২০১৩ (তরুণ মুক্তিযুদ্ধ গবেষক)
ট) অক্ষর সম্মাননা স্মারক-২০১৬ (কবিতায়)
ঠ) জাতীয় সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা-২০১৭ (সাহিত্যে)

তরুণ মুক্তিযুদ্ধ গবেষক জেবউননেছা:

মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রায় দশ বছর তিনি জন্মলাভ করেন। তবু তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ বা গবেষণা করতেই বেশী ভালোবাসেন। তাঁর সম্পাদিত প্রথম গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধ: বুদ্ধিজীবির দৃষ্টিকোণ ও অভিজ্ঞতা’ গ্রন্থের মুখবন্ধের এক পর্যায়ে তিনি লিখেন, ‘পারিবারিকভাবে বাবার কাছ থেকে শিখেছি কিভাবে ভালোবাসতে হয় দেশকে। কিভাবে শ্রদ্ধা করতে হয় মুক্তিযোদ্ধাকে। আশি দশকের শেষের দিকে আমার বাবার রচিত ‘টাকার পাহাড় চাই’ নাটকের একটি সংলাপ ছিল ‘জন্মদাতা,কর্মদাতা,শিক্ষাদাতার মতোই আমি ভালোবাসি,শ্রদ্ধা করি দেশের মুক্তিদাতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের’। এই সংলাপটি আমার মনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা সৃষ্টি করেছিল।’ এতেই বোঝা যায়,মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাঁর আবেগের বহিঃপ্রকাশ। তাঁর রচিত গবেষণাগ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী’ নামক গ্রন্থটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশের অপেক্ষায়। তাঁর রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা’ প্রবন্ধ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ‘অগ্রপথিক’ মার্চ,২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।‘ একাত্তুরের যাত্রী’ নামক সংগঠন থেকে প্রকাশিত ‘একাত্তুরের নারী’ ম্যাগাজিনে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নারীদের নিয়ে লেখা ‘তোমাদেরকে জানাই সালাম’ লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বিবিণœ পত্র-পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক লেখা লিখেন। তিনি জাতীয় গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘টক শো’ তে অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন সংগঠন থেকে আমন্ত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বক্তব্য এবং সেমিনারে লেখা পাঠ করেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে আয়োজিত সেমিনারে ‘মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা’ নামক গবেষণাভিত্তিক লেখা পাঠ করেন। জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একাধিক লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নেটওয়ার্ক শিক্ষকের দায়িত্বপালন করছেন। ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সত্যিকারের কাহিনী নিয়ে তাঁর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং ডকুমেন্টারী ফ্লিম করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ভ্রমনপিয়াসী ও জেন্ডার সংবেদনশীলতায় জেবউননেছা:

জেবউননেছা একজন ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ। বছরে একবার পরিবার সমেত কক্সবাজারে বেড়াতে যান এবং দেশের বেশ কয়েকটি জেলা পরিদর্শন করেছেন। দায়িত্বশীল এই মানুষটির উপর দায়িত্ব বর্তায় ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে শিক্ষাসফরে যাবার জন্য। তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কক্সবাজার,সেন্টমার্টিন এবং গাজীপুরের শ্রীপুর,মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে তিনি কক্সবাজার,সেন্টমার্টিন,ইনানী বীচ,রাঙ্গামাটি,বান্দরবান এবং ভারতের আগ্রা,জয়পুর,কলকাতা,দিল্লী,সিমলা এবং মানালিতে শিক্ষা সফর করেছেন। নিজ উদ্যোগে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের মত বিনিময়ের ব্যবস্থা করেছেন।

ছাত্রজীবনে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার নারীবাদী বিশেষজ্ঞ কমলা ভাসিনের কাছ থেকে তিনি জেন্ডার সম্পর্কিত বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। এ প্রসঙ্গে ‘সাপ্তাহিক চত্বর’ ২০.০২.২০০৬ ইং তারিখে জেবউননেছা রচিত ‘প্রশিক্ষণ কর্মশালায় দুটি দিন’ শিরোনামে প্রৃকাশিত প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, ‘তিনি বলেন, শুধু এনজিও কর্মী কমলা ভাসিন আমাদেরকে কেন হৃদয়াঙ্গম করাবেন ছেলে কি? মেয়ে কি? আমাদের প্রত্যেককে তার নিজস্ব বিবেচনা দিয়ে বুঝতে হবে আমরা কি করছি।’

১৯.০৯.২০১০ ইং তারিখে দৈনিক যুগান্তরে ‘সংস্কৃতি চর্চায় কাটিয়ে দিতে চাই জীবন’ শিরোনামে তাঁর সচিত্র প্রতিবেদনের এক পর্যায়ে জেবউননেছা সম্পর্কে বলা হয়,‘ অবসরে গিটার বাজান তিনি । সুযোগ পেলেই তিনি কক্সবাজারের সমুদ্রের ঢেউ,জাফলংয়ে সবুজ পাহাড়, ঝরনা দেখতে ছুটে যা । তরুণ গবেষক জেবউননেছা চিন্তা করেন নারীদের উন্নয়ন নিয়ে। লিঙ্গীয় বৈষম্য থেকে মুক্ত একটি সমাজের জন্য কাজ করতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সবার প্রতি আহবান জানান তিনি।’

২৭.০৯.২০১০ ইং তারিখে জাতীয় পত্রিকা ‘যায় যায় দিন’ এ ‘স্বপ্নচারী জেবার গল্প’ শিরোনামে প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনের শেষ পর্যায়ে বলেন,‘ ‘তরুণ গবেষক জেবউননেছা নারীর উন্নয়ন এবং জাগরণের জন্য কাজ করছেন। এ লক্ষ্যে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় খুব ব্যথিত হন তিনি। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়ার সমাজ থেকে এ সমাজের বিশেষ কোন পার্থক্য নেই। খোলস পাল্টেছে মাত্র। চলমান এ সময়ে উচ্চ পর্যায়ের নারীরা বেশী শোষিত। স্বপ্ন দেখেন নারী-পুরুষ বৈষম্যমুক্ত একটি সমাজের’।

৩০ মে,২০১৬ ইং তারিখে জাতীয় পত্রিকা ‘দৈনিক ইত্তেফকে’ ‘আলোকিত শিক্ষক’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদনের শেষ পর্যায়ে বলেন, ’এতজন নারী হিসেবে আমি আমার অর্জনে সন্তুষ্ট। যা একজন পুরুষের দ্রা ও সম্ভব হয়ে উঠেনা’।

১৩ অক্টোবর,২০১৭ইং তারিখে জাতীয় পত্রিকা ‘ দৈনিক জনকন্ঠে’ প্রকাশিত ‘নতুন প্রজন্সের নারী শক্তির প্রতীক জেবউননেছা’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদনের এক পর্যায়ে তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, তিনি নিজের অনুভব ক্ষমতা প্রসারিত করতে চান,তিনি চাপিয়ে দেয়া জ্ঞানে নয়,অর্জনে বিশ^াসী।’

মাসিক নন্দিনী,ডিসেম্বর সংখ্যায় ‘নন্দিত নন্দিনী’ তে তাকে নিয়ে ‘জীবনের সব রং নিয়ে সফলতার দ্যুতি’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনের এক র্পযায়ে বলা হয়’জেবউননেছা যার নামের অর্থ ‘নারীদের অলংকার’। এ যেন সত্যিই একটি অলংকারের নাম। আলাদা করে তাঁকে না সাজলে ও তিনি যেন আলোয় আলোয় অলংকৃত একজন মানুষ।কল্পনাপ্রবণ জেবউননেছা’র জীবনের গল্প লিখে শেষ করার মত নয়। তবু শেষ করতেই হবে। তবে কোন কিছুর শেষ নেই। যেখানে শেষ হয় সেখান থেকে হয়ত আর ও নতুন কিছু শুরু হয়। ঠিক তেমনি জেবউননেছা’র জীবনে আর ও স্বর্ণালী অধ্যায় রচিত হউক আমাদের এই শুভ কামনা। তবে কি একথা বলতেই হয়, জেবউননেছা জীবনের সব রং নিয়ে যেন সফলতার দ্যুতি। যে দ্যুতি তিনি ছড়িয়ে যাচ্ছেন সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে।’

নামকরণের সার্থকতায় জেবউননেছা :

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে জেবউননেছা একটি ঐতিহাসিক নাম। তবে কি এটা অনস্বীকার্য যে,জেবউননেছা নামের নারীরা সমাজ সংস্কারক,নারী নেত্রী,সংস্কৃতিসেবী,মার্জিত,উচ্চ শিক্ষিত হয়ে থাকেন। এ নামের মানুষগুলোকে বোধ হয় বিধাতা পৃথিবীতে পাঠান সমাজে কিছু দেবার জন্য নেবার জন্য নয়। গীতিকার, সুরকার জেবউননেসা জামাল স¤্রাট ঔরঙ্গজেব দুহিতাকে নিয়ে লিখেন-
‘ রাজার দুলালী জেবউন্নিসা
তুমি হলে কেন কবি’?
অপরদিকে, সুরকার জেবউননেসা জামালকে নিয়ে আমাদের জেবউননেছা লিখেন-‘কিছু কিছু মানুষ চলে গেলে সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হয় যা অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে পূরণ করা যায়না। জেবউননেসা তেমনই একজন মানুষ’। অন্যদিকে, ০৯.০৮.১৯৯৭ইং তারিখে প্রখ্যাত সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরী আমাদের জেবউননেছা’কে উৎসর্গ করে লিখেন এভাবে- ‘আব্বু-আম্মু যে ঐতিহাসিক নাম রেখেছেন সেই নাম যেন বৃথা না হয় এই দোয়া ও শুভ কামনায়’। গিয়াস কামাল চৌধুরীর দোয়া সত্যি হউক জেবউননেছার জীবনে। অপরদিকে, জেবউননেছার পিতা রচিত ‘আমার মা’ কবিতার ছন্দবদ্ধ পংক্তি থেকে জানা যায়-
‘আশি সালে মা রেখেছেন কন্যা জেবার নাম
নামের গুণে এগোয় সে কুড়াঁয় কত সুনাম’।
জেবউননেছা’র পিতামহী তাঁর নাম রাখায় তিনি তাঁর তৃতীয় গ্রন্থ ‘আলোকিত নারীদের স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ’ উৎসর্গ করেন তাঁর দাদীকে উৎসর্গ করেন এভাবে- ‘আমার শ্রদ্ধেয়া দাদীকে যার দেয়া নামে আমি ধন্যা’।

তাঁর ধারাবাহিক সফলতার জন্য বাবা- মায়ের অনুপ্রেরণা, উৎসাহ, মনন, মেধা, মেহনত ও কর্মদক্ষতাকেই চিহ্নিত করেনএত শত জানা শোনা আবেগী জেবউনের মনে ও জেগে উঠে নানা প্রশ্ন। আর সেই প্রশ্ন তিনি খুঁজে ফেরেন সারাসময়। তাঁর রচিত ‘রোদেলা দুপুর’ কাব্যগ্রন্থের ক্ষুদ্র একটি কবিতা ‘একটি প্রশ্ন আব্বুকে’ শিরোনামে দিয়ে জেবউননেছার জীবন পরিচিতি শেষ করছি-

একটি প্রশ্ন আব্বুকে

‘আব্বু
তুমি কি বলতে পারো
কেন জীবনে জীবন যোগ হলে
হৃদয়ের বাধঁনগুলো বরফের মতো গলে জল হয়ে
নদী থেকে সাগরে
অজানা গন্তব্যে মিলিয়ে যায়?’

ড. জেবউননেছা

তথ্যসূত্র:

১. নাট্যকার মুঃ জালাল উদ্দিন নলুয়ার সংরক্ষিত দিনলিপি যথাক্রমে ১৯৮০,১৯৮৪,১৯৮৫ ১৯৮৬,২০০৮ইং
২. জেবউননেছা’র সংরক্ষিত অটোগ্রাফের ডায়েরী।
৩. জেবউননেছা’র সংরক্ষিত কবিতা ও গল্পের ডায়েরী।
৪. যাযাবর মিন্টু সম্পাদিত ‘পালক’ পত্রিকা,শ্রাবণ,১৩৯৭,ঢাকা।
৫. সুমন বিপ্লব সম্পাদিত ‘প্রতিভা বিকাশ’ ম্যাগাজিন,শ্রাবণ,১৩৯৭,ঢাকা।
৬. যাযাবর মিন্টু সম্পাদিত ‘স্বাধীনতার লড়াই’’ ঝিনুক প্রকাশনী,ডিসেম্বর,১৯৯০,ঢাকা।
৭. কবি লুৎফা জালালের ‘অলংকার কাব্যগ্রন্থ।
৮. জাগ্রত বিবেক সংগঠন নারায়ণগঞ্জ থেকে জেবউননেছাকে প্রদত্ত সংবর্ধনার মানপত্র থেকে১৩ আষাড়,১৪১০ বাংলা।
৯. অধ্যাপক মুহাঃ জারজেস হোসেনের ২১.১২.২০০৪ইং তারিখের স্বহস্তে লিখিত পত্র।
১০.সাপ্তাহিক চত্বর,ঢাকা,২০ ফেব্রুয়ারী,২০০৬ইং
১১. জেবউননেছা রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধ বুদ্ধিজীবীর দৃষ্টিকোণ ও অভিজ্ঞতা’,প্রান্ত প্রকাশন,২০০৯,ঢাকা।
১২.জেবউননেছা রচিত গবেষণা গ্রন্থ ‘সুশাসনঃবাংলঅদেশের সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের একটি তুলনামূলক সমীক্ষা’,২০১০,প্রান্ত প্রকাশন,ঢাকা।
১৩.দৈনিক যুগান্তর ,১৯.০৯.২০১০ইং
১৪. দৈনিক যায় যায় দিন,২৭.০৯.২০১০ইং ১৫. মাসিক বাসিয়া,মার্চ,২০১০,সিলেট।
১৬. জেবউননেছা সম্পাদিত ‘আলোকিত নারীদের স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ’,২০১২,প্রান্ত প্রকাশন,ঢাকা।
১৭. জেবউননেছা রচিত ‘রোদেলা দুপুর’ কাব্যগ্রন্থ,২০১৩,প্রান্ত প্রকাশন, ঢাকা।
১৮. বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ থেকে প্রকাশিত ‘সাহিত্যে অর্জনে বাংলাদেশের নারী,২য় খন্ড ফেব্রুয়ারী,২০১৪,ঢাকা।
১৯. জেবউননেছা রচিত ‘লক্ষ্যা থেকে পিয়াসী’,২০১৪ প্রান্ত প্রকাশন,ঢাকা।
২০ .ইসলামিক ফাউন্ডেশন ‘অগ্রপথিক’ মার্চ,২০১৪।
২১. দৈনিক ইত্তেফাক,৩০ মে,২০১৬ইং
২২. দৈনিক জনকন্ঠ,১৩ অক্টোবর,২০১৭ইং
২৩. মাসিক নন্দিনী,ডিসেম্বর,২০১৪ইং

লিখেছেন — ফিরোজা মেরী 

বাংলাদেশ সময়: ২:২৪:৩১   ৪২৬৩ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #  #