শনিবার, ৩ মার্চ ২০১৮
হাওরের সৌন্দর্যের রাণী তাহিরপুরের “শিমুল বাগান”
Home Page » বিবিধ » হাওরের সৌন্দর্যের রাণী তাহিরপুরের “শিমুল বাগান”জীবন কৃষ্ণ সরকার
সুরের রাজধানী হিসেবে খ্যাত আমাদের হাওরাঞ্চল ইতোমধ্যেই মৎস্য,পাথর ও ধানের রাজধানী হিসেবেও খ্যাতি পেয়েছে।তবে আজকে একটি ভিন্ন বিষয় নিয়েই আমি প্রিয় পাঠকদের কাছে হাজির হয়েছি।আর তা হলো হাওরের সৌন্দর্যের রাণী খ্যাত তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীর তীরে অবস্থিত নয়নাভিরাম শিমুল বাগানের প্রাকৃতি সৌন্দর্য প্রসঙ্গ।
শিক্ষকতার পেশায় থেকে লেখা-লেখির খুব একটা সময় যে পাওয়া যায় তা নয়।তবু পাঠকদের কথা বিবেচনায় এতদ্বিষয়ে দু-চারটি কথা শেয়ার করতে বসছি।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামে অবস্থিত দেশের সর্ব বৃহৎ শিমুল বাগানটির পূর্ব পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্ভীদের পণতীর্থ ধাম এবং উত্তরে হাওরের আরেক মনোরম পিকনিক স্পট বারেকটিলা এবং দক্ষিনে বাদাঘাট বাজার।বাগানটির পাশেই রয়েছে যাদুকাটা নদীর বালু উত্তোলনের মনোরম দৃশ্য যা দেখলে যেকারো মন ভরবেই।
অনুসন্ধ্যানে জানা যায়,গত ১৫ বছর পূর্বে অর্থাৎ ২০০৩ সালের দিকে প্রায় ২৪০০ শতক জমিতে অনেকটা সৌখিনতার বশেই শিমুল বাগানটি গড়ে তুলেছিলেন জয়নাল আবেদীন নামে তৎকালীন স্থানীয় এক ধনাঢ্য ব্যাবসায়ী।প্রায় ৩০০০ শিমুল চারা রোপন করেছিলেন বৃক্ষপ্রেমী ও একসময়ের চেয়ারম্যান জনাব জয়নাল আবেদীন।কালক্রমে এখন তা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছে।বাগানের ভেতরে শিমুল গাছ ছাড়াও রয়েছে অগনিত লেবু গাছ যা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।আর শিমুল গাছগুলো বসন্তে ফুলে ফুলে রক্তিম আভায় মুখরিত হয়।বিশাল পরিধির এই শিমুল বাগানটি দেখতে ইতোমধ্যেই সারাদেশ থেকে পর্যটকবৃন্দ এক সময়ের লাউড়ের গড় খ্যাত তাহিরপুরের উত্তর বরদলের দিকে পাড়ি জমাচ্ছেন নিয়ত।বসন্তের দুপুরে পাপড়ি গুলো রক্তিম আভায় পর্যটকদের মন রাঙ্গিয়ে হাত বাড়িয়ে কাছে ডেকে নেয় আপন মনে।শিমুলের শাখা-প্রশাখার দিকে খেয়াল করলেও মনে হয় যেনো হাত উড়িয়ে শিমুলদলেরা সৌন্দর্য পিয়াসীদের কাছে ডাকছে।ভ্রমণ পিপাসু মাত্রই এসব বৃক্ষরাণীদের প্রেমে পড়তে বাধ্য।
কিভাবে যাবেনঃ
বাগানটি দুটি পথেই পৌছানো যায়।প্রথমত,ঢাকা থেকে সরাসরি বিরতিহীন বাসে সুনামগঞ্জ নামবেন।ভাড়া ৫০০-৫৫০টাকা লাগতে পারে।সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড নেমে ৫মিনিট উত্তরে হেঁটে নতুন ব্রীজের পশ্চিম পাড়ে মোটর বাইক ২০০টাকায় অথবা সিএনজি ৫০০ টাকায় পাওয়া যায়।চলে যাবেন সরাসরি বারেকটিলার ঠিক পূর্ব পাশে অর্থাৎ যাদুকাটা নদীর পূর্বপাশে।তারপর ৫ টাকা দিয়ে নদী পার হয়ে বারেকটিলার অপরুপ দৃশ্য দেখতে দেখতে একটু দক্ষিণ দিকে হাটবেন।অল্প কিছুক্ষণ পরই পেয়ে যাবেন স্বপ্নের বাগানটি।স্থানীয় বাসীন্দাদের জিজ্ঞেস করলেও বলে দিবে রাস্থাটি। সেক্ষেত্রে শিমুল বাগান বললে না চিনতে পারলে সাধারণ মানুষদের তুলা বাগান বললে শতভাগ চিনবে।ফলে আর কোন সমস্যা হবেনা।তাছাড়া চাইলে সরাসরি সুনামগঞ্জ থেকে মোটরবাইক বা সিএনজিতে চড়ে সনাতন ধর্মীয় সাধক অদ্বৈতচার্য কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কৃষ্ণ মন্দিরের সামনে নেমে ৫ টাকা দিয়ে নদী পার হয়ে ইসকন মন্দির হয়ে একটু হেঁটেই শিমুল বাগানটিতে যাওয়া যায়।দ্বিতীয়ত ঢাকা থেকে সরাসরি বিরতিহীন বাসে ৩৫০/৪০০ টাকা দিয়ে মধ্যনগর বাজারে আসা যায়।সেখান থেকে মোটর বাইকে ৩০০/৩৫০টাকা দিয়ে সরাসরি শিমুল বাগানে যাওয়া যায়।তবে এক্ষেত্রে সিএনজির কোন সুবিধা নেই।তাছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে ৩০০/৩৫০ টাকা দিয়ে কলমাকান্দা এসে মোটর বাইকে ১৫০/২০০ টাকা দিয়ে মহিষখলা বাজার আসা যাবে।তারপর আবার মোটর বাইকে ২৫০/৩০০টাকা দিয়ে ট্যাকের ঘাট নীলাদ্রী লেক,বারেকের টিলা হয়ে আপনাদের কাঙ্খিত শিমুল বাগানটিতে পৌঁছুতে পারেন।আপনাদের সুবিধেমত রাস্থা দিয়েই আসতে পারেন।
যাহোক বারেকটিলায় খাবার-দাবারের জন্য হোটেলের ব্যবস্থা রয়েছে।তবে রাত্রিযাপন করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে সুনামগঞ্জ সদরে চলে যেতে হবে।সদরে ২০০ থেকে ১০০০ টকার ভেতরে চাহিদা অনুযায়ী হোটেল ভাড়া পাবেন এতে কোন সমস্যা হবেনা।সর্বশেষ, সৌন্দর্য প্রেমী সকল বন্ধুদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি খ্যাত স্বপ্নের শিমুল বাগানটি একবার ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে লেখাটি এখানেই শেষ করছি।ভালো থাকবেন সকলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩৪:৩২ ৯৫৫ বার পঠিত