বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ ২০১৮

Home Page » বিবিধ »
বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ ২০১৮



সজলকান্তি সরকার

মা লক্ষ্মীর বরে
ধন আইব ঘরে”
হাওরাঞ্চলে ফসল উৎপাদনে/রক্ষায় “তেলউন্দা”(তেলসুন্দি বা ধানের গর্ভধারণ) ব্রত পালনের পক্ষ দোলপূর্ণীমাতেই শেষ হয়। এরপর এ ব্রত পালনের বিধান নেই। সাধারণত হিন্দু ও আদিবাসী সমাজের কৃষাণি/কুমারীগণ উপবাস থেকে ফাল্গুন মাসের শুক্লপক্ষের রবি ও বৃহস্পতিবার শুভক্ষণে এ ব্রত পালন করেন। ঘরে( মধুমপালায়) আশ্রিত লক্ষ্মীকে কলাপাতায় পঞ্চ ভোগনৈবদ্যে আহব্বান করে তাঁর ভরণপোষণ বাবদ সাতু, খাদ্যদানা, অর্থ ও সোনারূপা দিয়ে নানা আলপনায় পথ সাজিয়ে ঘর থেকে ধানিজমিনে নিয়ে যাওয়া হয়। লক্ষ্মী শস্য-সম্পদের মালিক এ বিশ্বাস থেকে নানা আচারে (সইসমন্ধ, তেলমেতি, পাতাবন্ধন, ভোগপ্রদান, প্রার্থনা, ব্রতকথা ইত্যাদি) জমির ধানগাছের গর্ভদান ব্রত পালন হয়। স্নান করিয়ে তেল-মেতি লাগিয়ে দেওয়া হয় ধানগাছের পাতায়। দেয়া হয় সিঁদুরের ফোঁটা। এ ব্রতের মাধ্যমেই ধানগাছে “থউর”(গর্ভ) হয়। শস্য-সম্পদের নিদানকালে লক্ষ্মীই হয় ধাত্রিসম ও লালন-পালনের মাতৃরূপ। ধান পরিপক্ষ হওয়ার হিসাবনিকাশের বিষয়টিও তাতেই নিহিত। আর এ ব্রতের মাধ্যমেই কৃষাণি ঘরে বসে পাকাধান কাটার সময় বলতে পারেন। কেননা এ ব্রতপক্ষ শেষে ধানগাছ থেকে শীষ বের হতে থাকে। ধানের শীষ বের হলে বিশদিন পর তা পরিপক্ষ হয়। এ নিয়ে লোকমুখে প্রচলিত আছে-
“শীষে বিশ,
নুয়াইলে বার,
শাইল গচি বোর,
কাটতে পার।”
ধনলক্ষ্মী আশ্রয়ে জমির ধান পরিপক্ষ হলে আবার ধানের “ক্ষীরবাস” ব্রত পালনের মাধ্যমে লক্ষ্মীকে ভিন্ন ব্রতাচারে ঘরে নিয়ে আসা হয়। তাতেই ধানেধানে পূর্ণ হয় কৃষকের গোলাঘর। শুরু হয় ধান সংগ্রহের কাজ।

লেখকঃ হাওর গবেষক

বাংলাদেশ সময়: ২১:২৪:২০   ৪৩৫ বার পঠিত