মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০১৩
” প্রেমিক সুরাজ আটক, প্রকাশ হল জিয়ার চিঠি”
Home Page » বিনোদন » ” প্রেমিক সুরাজ আটক, প্রকাশ হল জিয়ার চিঠি”বঙ্গ- নিউজ ডটকমঃ বলিউড অভিনেত্রী জিয়া খানের আত্মহত্যার ঘটনায় জিয়ার প্রেমিক সুরাজ পাঁঞ্চলীকে গ্রেফতার করেছে জুহু পুলিশ। গত ৪ জুন জিয়ার আত্মহত্যার পর থেকেই সুরাজের ওপর নজর রাখছিল পুলিশ। সোমবার জিয়ার সুইসাইড নোট প্রকাশ্যে আসার পরই সুরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ।আত্মহত্যা করার আগে শেষ সুরাজের সঙ্গেই ফোনে কথা বলেছিলেন জিয়া। চিঠিতেও সুরাজ পাঁঞ্চলীকেই মৃত্যুর জন্য দায়ী করে গেছেন জিয়া খান। তাঁর পরিবার, বলিউড সকলেই মনে করছেন জিয়ার অকালে চলে যাওয়ার পিছনে রয়েছে সুরাজের প্রতারণা।
এদিকে ভিলেন ছেলে সুরাজকে বাঁচাতে এবারে উঠে পড়ে লেগেছেন বাবা আদিত্য পাঁঞ্চলী। জিয়া খানের মা রাবিয়া খান মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন সুরাজকেই।
মাত্র ৬ দিন আগে আত্মহত্যা করেছেন মেয়ে। ৬ দিন পর তাঁর স্মরণসভায় মেয়ের মৃত্যুর আসল কারণ প্রকাশ্যে আনলেন মা। পড়ে শোনালেন আত্মহত্যার আগে জিয়া খানের লেখা কান্না জড়ানো ৬ পাতার চিঠি।
চিঠি পড়ার আগে জিয়ার মা রাবিয়া খান বলেন, পুরো ইন্ডাস্ট্রি মনে করছে হাতে কাজ না থাকায় অবসাদে আত্মঘাতী হয়েছে জিয়া। কিন্তু সত্যিটা আসলে অন্যরকম। সুরাজ আর ওর বাবা আদিত্য পাঁঞ্চলীর ক্রমাগত দুর্ব্যবহার জিয়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। আত্মহত্যা করার কিছুদিন আগে জিয়া তার বোন ও তাকে সেইসব দুঃখের কথা বলেছিলেন বলে জানান রাবিয়া। কিছুদিন আগে জিয়ার স্মরণসভায় পড়বেন বলে জিয়ার লেখা কিছু কবিতা খুঁজতে তাঁর ব্যাগ খোলেন জিয়ার বোন। তখনই তাঁর হাতে আসে জিয়ার লেখা সেই চিঠি।
জিয়া লিখেছিলেন,
(সুরাজের উদ্দেশে) আমি জানি না তোমাকে কিভাবে এই কথাগুলো বলব, তবে এখন আর আমার কিছু হারানোর নেই। আমি সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি। তুমি যখন এটা পড়বে ততক্ষণে হয়ত আমি আর বেঁচে থাকব না। আমি ভেতর থেকে ভেঙে পড়েছি। তুমি হয়ত জানো না কিন্তু তুমি আমাকে এতটাই আঘাত করেছো যে আমি তোমাকে ভালবাসতে ভালবাসতে হারিয়ে গিয়েছি। তবুও তুমি আমাকে প্রতিদিন অত্যাচার করে গেছো।
আমি এখন আর কোনও আশার আলো দেখতে পাই না। সকালে উঠতেও ইচ্ছে করে না। একটা সময় আমি আমার জীবন, আমার ভবিষ্যত তোমরা সঙ্গে দেখেছিলাম। কিন্তু তুমি আমার সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছো। আমি ভেতরে ভেতরে মরে গিয়েছি। আমি কারও জন্য জীবনে এত কিছু করিনি, নিজেকে এভাবে উজাড় করে দিইনি। তুমি মিথ্যা আর প্রতারণা দিয়ে আমার ভালবাসার প্রতিদান দিয়েছো। আমি তোমাকে কত উপহার দিয়েছি, তোমার জন্য নিজেকে কত সুন্দর করে তুলেছি, তোমার কাছে সেগুলোর কোনও মূল্য নেই।
আমি মাকে ভয় পেতাম কিন্তু তবু প্রতিদিন নিজেকে তোমার কাছে সঁপে দিয়েছি। কিন্তু তবুও তুমি প্রতিদিন আমাকে যেভাবে কষ্ট দিয়েছো তাতে আমার মন ভেঙে গেছে। আমি কিছু খেতে পারি না, ঘুমোতে পারি না, ভাবতে পারি না, কোনও কাজ করতে পারি না। সবকিছু থেকে পালিয়ে বেড়াই। আমার ক্যারিয়ারেও আর ভাল কিছু নেই। যখন তোমার সঙ্গে প্রথম দেখা হয় তখন আমার জীবনে স্বপ্ন ছিল, লক্ষ্য ছিল, শৃঙ্খলা ছিল। তারপর আমি তোমার প্রেমে পড়ি, ভেবেছিলাম এই ভালবাসা আমার মধ্যে থেকে সেরাটা বের করে আনবে। আমি জানি না কেন ভাগ্য আমাদের একসূত্রে বেঁধেছিল। সব যন্ত্রণা, ধর্ষণ, অত্যাচার সহ্য করার পর মনে হচ্ছে কোনওদিনই এগুলো আমার প্রাপ্য ছিল না।
তোমার দিক থেকে আমি কোনও ভালবাসা বা দায়বদ্ধতা দেখিনি। প্রতিদিন আমার ভয় বাড়তে থেকেছে যে তুমি আমাকে মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে আঘাত করবে। তোমার জীবনে পার্টি আর মহিলা ছাড়া কিছু ছিল না। আমার জীবনে ছিল শুধু আমার কাজ আর তুমি। আমার ১০ বছরের ক্যারিয়ার, স্বপ্ন সবকিছুকে চিরবিদায় জানাচ্ছি।
আমি কোনদিনও তোমাকে বলিনি, কিন্তু আমি খবর পেয়েছিলাম যে তুমি আমার সাথে প্রতারণা করছো। কিন্তু আমি সেই খবর এড়িয়ে গিয়েছিলাম, তোমাকে বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম। তুমি আমাকে অপমান করেছো। আমি একজন সৎ মানুষ। তুমি ছাড়া আমি কোনও দিন কারও সঙ্গে কোথাও যাইনি। কার্তিকের সঙ্গে দেখা করে আমি তোমাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম যে তুমি যখন অন্যদের সঙ্গে থাকো তখন আমার খারাপ লাগে।
কোন নারী তোমাকে আমার মত এত ভালবাসবে না, তোমার জন্য এত কিছু করবে না। আমি আমার রক্ত দিয়ে এটা লিখে যেতে পারি। তুমি আমার হৃদয় ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দিয়েছো। আমি আর বাঁচতে চাই না। আমি শুধু ভালবাসা চেয়েছিলাম। তোমার জন্য আমি সব করেছি। সবসময় তোমার ভাল চেয়েছি। আমার স্বল্প সঞ্চয় তোমার ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করেছি। তুমি কোনদিনও তার মর্যাদা দাওনি। আমার আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদা সব নষ্ট হয়ে গেছে।
তুমি আমার সঙ্গে প্রতারণা করার পরও আমি তোমাকে গোয়ায় ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলাম। গর্ভপাত করিয়েছি। ক্রিসমাস, আমার জন্মদিন, ভ্যালেন্টাইনস ডে, সবকিছু নষ্ট করেছো তুমি। আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি। এখন আমি শুধু চিরকালের মত ঘুমিয়ে পড়তে চাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৫২:৫১ ১১৬৬ বার পঠিত