শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০১৭

আইন সংশোধন না হওয়ায় ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি ১৬ বছর আটকে ছিল

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » আইন সংশোধন না হওয়ায় ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি ১৬ বছর আটকে ছিল
শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০১৭



১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সইয়ের ঐতিহাসিক সেই মুহূর্ত। সরকারের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন সংসদের তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং জনসংহতি সমিতির পক্ষে সংগঠনের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন l ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গ-নিউজঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি ১৬ বছর আটকে ছিল আইন সংশোধন না হওয়ায়। আইন সংশোধনের পর এখন আটকে গেছে বিধিমালা প্রণয়নের চক্রে। ইতিমধ্যে চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন পুনর্গঠন না করে কাজও শুরু করা যাবে না।

ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির প্রধানতম বিষয়। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট প্রায় সবাই মনে করেন, ভূমি বিরোধের নিষ্পত্তি হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৮০ ভাগ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিরও সর্বপ্রধান অংশের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে।

এই গুরুত্বের কারণেই ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে সুনির্দিষ্ট বিধান রাখা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন, আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে বিরোধ নিষ্পত্তি আইন প্রণয়ন প্রভৃতি চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সরকার আঞ্চলিক পরিষদকে কিছু না জানিয়ে ২০০১ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন’ নামের একটি আইন প্রণয়ন করে।

আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর আঞ্চলিক পরিষদ ও জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ২৩টি বিষয়ে আপত্তি জানায়। ওই বিষয়গুলো পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে অভিমত দিয়ে জেএসএস আইনটি সংশোধনের দাবি করে। এই দাবি নিয়ে ২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সরকার তাঁদের সঙ্গে আলোচনা চালায়। একাধিকবার দুই পক্ষের মধ্যে মতৈক্যও হয়। তারপরও আইনটি সংশোধন হচ্ছিল না।

ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া আটকে ছিল। শেষ পর্যন্ত গত বছর সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদে আইনটির সংশোধনী পাস হয়। কিন্তু বিধিমালা ছাড়া কোনো আইনের প্রয়োগ সম্ভব নয়। আর সরকারও বিধিমালা প্রণয়ণের উদ্যোগ নিচ্ছিল না। এ অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ একটি খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করে সরকারের কাছে উপস্থাপন করে।
এটি চূড়ান্ত করার দায়িত্ব ভূমি মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেটি মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। ইতিমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দুজন সচিব পরিবর্তন হয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিধিমালাটি চূড়ান্ত করার কাজ এখনো শেষ হয়নি।

এদিকে গত ৬ সেপ্টেম্বর ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের পঞ্চম চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ কমিশনের কাছে প্রায় ২৫ হাজার বিরোধ নিষ্পত্তির আবেদন জমা পড়ে আছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো এবং নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি প্রথম আলোকে বলেছেন, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ায় আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অথচ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয়তা তাদেরই সবচেয়ে বেশি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার ১৯৯৯ সালের ৩ জুন প্রথম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করে। ওই কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক চৌধুরী কার্যভার গ্রহণের আগেই মারা যান। এরপর ২০০০ সালের ৫ এপ্রিল পুনর্গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি আবদুল করিম কার্যভার গ্রহণের কিছুদিন পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে পদত্যাগ করেন। ২০০১ সালের ২৯ নভেম্বর পুনর্গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মাহমুদুর রহমান ২০০৭ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ শুরু করতে পারেননি।

এরপর পুনর্গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী কাজ শুরুর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আইন সংশোধন সরকারের বিষয়। সে জন্য কমিশন অকার্যকর থাকতে পারে না। বিদ্যমান আইন অনুযায়ীই কমিশন কাজ করবে। এরপর তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি জরিপের উদ্যোগ নেন। একই সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করেন। তখন প্রায় সাড়ে চার হাজার আবেদন পড়ে। কিন্তু আইন সংশোধন না করে বিরোধ নিষ্পত্তি কিংবা ভূমি জরিপের উদ্যোগ তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে ভেস্তে যায়। ২০১২ সালের ১৮ জুলাই এই কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়।

এরপর প্রায় দুই বছর আর চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়নি। ২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হককে তিন বছর মেয়াদে চেয়ারম্যান নিয়োগ করে সরকার। ৬ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ চেয়ারম্যানের মেয়াদও শেষ হয়েছে। চেয়ারম্যান ছাড়া কমিশনের চারজন সদস্য হচ্ছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট সার্কেল প্রধান বা রাজা, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবং সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩০:১৮   ৫৭৯ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #