সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায় সরকার

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায় সরকার
সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৭



রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত রাষ্ট্রদূত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা l ছবি: ফোকাস বাংলা

বঙ্গ-নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চায়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে যে সমর্থন বাংলাদেশ পেয়েছে, এত বড় কূটনৈতিক সাফল্য বোধ হয় আর কোনো দিন পায়নি।

গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে রাষ্ট্রদূত সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালনরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও স্থায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘শান্তি ও জনগণের জন্য কূটনীতি’ শীর্ষক তিন দিনের এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সম্মেলনে ৫৭ জন রাষ্ট্রদূত অংশ নিচ্ছেন।

১৯৭৮ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে চলে আসার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে অন্তত একটা সমঝোতা করতে পেরেছি, যার মাধ্যমে আমরা আশা করি, অন্তত মিয়ানমারের এই নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে পারব।’ মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই…তারপরও যেহেতু প্রতিবেশী দেশ, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমরা সদ্ভাব রেখে এই সমস্যার সমাধান করতে চাই।’ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের কথা বলতে গিয়ে ১৯৯৭ সালে আলোচনার মাধ্যমে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সইয়ের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেন আমাকে তৃতীয় কাউকে ডাকতে হবে?’

রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমিতে ফেরত পাঠাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের সক্রিয় থাকার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন কোনো রকম হয়রানির শিকার না হন, তাঁদের ভালো-মন্দ দেখা এবং সমস্যার সমাধান করা রাষ্ট্রদূতদের দায়িত্ব।

সপ্তাহে কিংবা মাসে একবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বসে তাঁদের সমস্যার কথা শোনা এবং সমাধান করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা ভুলে গেলে চলবে না, তাঁরাই কিন্তু মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করেন। তাঁরা যে টাকা পাঠান, এটাই আমাদের রিজার্ভের বড় অংশ।’

রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের তাঁদের কাজকে নিছক চাকরি হিসেবে না দেখে দেশ ও জাতির স্বার্থরক্ষার মহান দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিদেশে আপনারা একেকজন একেকটি বাংলাদেশ। আপনাদের কাজ নিছক চাকরি করা নয়, আরও অনেক বড় ও মহান কিছু। দেশের ১৬ কোটি মানুষের হয়ে আপনারা সেখানে প্রতিনিধিত্ব করছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই নেতিবাচক প্রচারণা হয়। উচ্চমানের পেশাদারি দিয়ে সেসব মোকাবিলা করতে হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রশ্নে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরুল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই মাটিতে কোনো রকম জঙ্গিবাদ আমরা হতে দেব না। আমাদের ভূখণ্ডকে কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর জন্যও আমরা ব্যবহার করতে দেব না। আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান চাই।’

সম্মেলনে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা ও আন্তসংযোগ বা কানেকটিভিটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অধিকতর বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশি পণ্যের নতুন বাজারের সন্ধানসহ ১০ দফা নির্দেশনাও দেন।

সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকও বক্তব্য দেন। সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সাংসদ, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সাবেক কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্রিটিশ মন্ত্রীর সাক্ষাৎ
বাসস জানায়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দেশে পাঠাতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যও মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে, যাতে তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়। গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সফররত যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী পেনি মর্ডান্ট এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ৬:৩৮:৪১   ৪৯৯ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #