সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০১৭

পাথুরে জীবন

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » পাথুরে জীবন
সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০১৭



ছবি আনোয়ার ইউনুস

আনোয়ার ইউনুস বঙ্গ-নিউজঃ পাথর প্রকৃতির এক বিস্ময়,যে পাথরগুলো আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় নিজে নিজেই স্থান পরিবর্তন করে। পাথরগুলিকে চলমান অবস্থায় কেউ কখনো দেখেনি, তবুও পাতলা কাদার স্তরে রেখে যাওয়া ছাপ থেকে পাথরগুলোর স্থান পরিবর্তন নিশ্চিত হওয়া যায়। কিছু কিছু পাথরের কয়েকশ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন হয়, এই ভারি ভারি পাথরগুলো কিভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়, সে রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি। পাথরের ট্রেইলে রেখে যাওয়া সূক্ষ্ম ছাপ থেকে বোঝা যায় পাথরগুলো এমন সময়ে স্থান পরিবর্তন করে যখন উপত্যকায় পাতলা কাদামাটির আস্তরণ থাকে। মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর দ্বারা পাথরের স্থান পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আশেপাশের কাদায় তাদের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় না।

ক্যালিফোর্নিয়ার রেসট্র্যাক প্লায়া, ডেথ ভ্যালি-তে এমন বিশ্বয়কর ঘটনাটি বিশেষজ্ঞদের নজরে আসে ১৯৪৮ সালে। হঠাৎ তীব্র বাতাস, কাদামাটি, বরফ, তাপমাত্রার তারতম্যতা বিভিন্ন বিষয় পাথরের সরে যাওয়ার পেছনে কারণ বলে বিজ্ঞানীরা মনে করলেও পাথরের চলার পথের ভিন্নতার কারণে রহস্য থেকেই যায়। পাথর গুলোর এক একটি কয়েক বছর ধরে চলে। কখনো সরল পথে, কোনটি বাঁকানো পথে পরিভ্রমণ করে। এমনও হয় দুটি পাথর সমান্তরালে কিছুদূর পর ঠিক বিপরীত দিকে তাদের দিক পরিবর্তন করে। দীর্ঘ ৫০ বছরের গবেষণায় এখনো পর্যন্ত শুকনো লেক রেস প্রায়া, ডেথ ভ্যালির চলমান পাথরের রহস্য উন্মোচন হয়নি। ১৯৫৫ সালে এম. স্ট্যানলী প্রথমবারের মতো মত প্রকাশ করেন যে, রেস প্রায়া, ডেথ ভ্যালিতে বন্যার পর সৃষ্ট বরফের কারণে পাথর স্থান পরিবর্তন করে। বছরের কোনো কোনো সময় প্রায়া ভ্যালি ৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে যায়, রাতে তাপমাত্রা হীমাঙ্কের নিচে নেমে আসে।

ছবি আনোয়ার ইউনুস

১৯৭৬ সালে রবার্ট শার্প এবং ডুইট ক্যারে, এম স্ট্যানলী’র আইস-সিট মতবাদে দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁরা পাথরের চলার পথের ধরন ও জ্যামিতিক বিশ্লেষণ করে একাধিক ট্র্যাকের মাঝে সম্পর্ক দেখতে পান যেটি বরফ খণ্ডের দ্বারা ঘটা সম্ভব নয়। তাঁরা মত প্রকাশ করেন যে, বছরের নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট আবহাওয়ায় বাতাসের কারণে পাথরগুলো সরে যায় যেটি প্রতি বছর বা দুই বছর অন্তর ঘটে থাকে।

১৯৯৫ সালে জন বি. রেইড এবং হ্যাম্পশায়’র কলেজের ভূ-তাত্ত্বিকগণ শার্প-ক্যারে মতবাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। ১৯৮০’র দশকের শেষ হতে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তাঁরা সাতটি ড্যাথ ভ্যালি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে স্ট্যানলির আইস-সিট মতবাদকে সমর্থন করেন।

আধুনিক জিপিএস ট্র্যাকিংনির্ভর স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে পাথরগুলোর স্থান পরিবর্তনের সময় গতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেলেও তাদের স্থান পরিবর্তনের রহস্য এখনো আবৃতই রয়ে গেছে। বিশেষ করে আপস্ট্রিমে পাথরের স্থান পরিবর্তনের সঠিক ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি। পাথরের রহস্য যাই হোক এই পাথরই একদল মানুষের জীবিকার প্রধান অবলম্বন। নদী থেকে পাথর তুলে জীবিকা নির্বাহ করে অনেক মানুষ। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে এসব শ্রমজীবী মানুষ। কিন্তু তাদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্য তারা পায়না। এর মূল সাধ রস ভোগ করে মধ্যসত্ত্বভোগীরা।

ছবি আনোয়ার ইউনুস

বাংলাদেশ সময়: ২২:২৯:৫৭   ৪৮৭ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #