শনিবার, ৪ নভেম্বর ২০১৭

বাল্যবন্ধু অছিম উদ্দিন বঙ্গতাজের স্মৃতিচারণ করলেন

Home Page » প্রথমপাতা » বাল্যবন্ধু অছিম উদ্দিন বঙ্গতাজের স্মৃতিচারণ করলেন
শনিবার, ৪ নভেম্বর ২০১৭



মোঃ ফজলুল হক ---, বঙ্গ নিউজঃ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় শহীদ হন।মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এই বীরের স্মৃতিচারণ করেছেন গাজীপুরের কাপাসিয়ার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামের ৯০ বছর বয়সী অছিম উদ্দিন।

তিনি তাজউদ্দীন আহমদের জন্মভূমির একমাত্র জীবিত বাল্যবন্ধু। ২৫ বছর ধরে প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত অছিম উদ্দিন বঙ্গতাজের প্রায় দুই বছরের ছোট।

শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, তাজউদ্দীন এত বড় মাপের মানুষ হবেন, তা তার চরিত্রে অনেকটা ফুটে উঠেছিল। কেননা তিনি রাস্তা দিয়ে চলার পথে পানিতে একটি পোকা ভেসে থাকলে সেটাও তীরে উঠিয়ে রাখতেন। সামর্থ্যবানদের কাছ থেকে ধান-চাল চেয়ে এনে বা কিনে গরিব-অসহায়দের দিতেন। এলাকার মানুষ অসুস্থ হলে সেবা করতেন।

দিনের সকল কাজের কথা ডায়েরিতে নোট করতেন তাজউদ্দীন। তিনি ফুটবল খেলতে বেশি পছন্দ করতেন। ছোটবেলা থেকেই প্রতিবেশীদের খোঁজ রাখতেন। এলাকায় স্কুল না থাকায় গাছতলায়, তরগাঁওয়ের দেওনার এক বাড়িতে, হাফিজ উদ্দিন বেপারীর বাড়িতে ও কাপাসিয়ায় কিছুদিন পড়ালেখা করেন।

তাজউদ্দীন গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলতেন। তার কাছে অন্যরা হার মানতেন। তিনি গাছে ওঠে পেয়ারা ও কামরাঙা পেরে বন্ধুদের খাওয়াতেন। বিল ও গাঙে মাছ ধরতেন। কাঁঠালের বিচি কাঁচা খেতেন। যদিও মা মানা করতেন।

উত্তরে তাজউদ্দীন বলতেন, পেট ভাল থাকলে সব হজম হয়। তিনি শুঁটকি দিয়ে কচুর লতা খেতে খুব পছন্দ করতেন। কারও সাথে ঝগড়া করতেন না। এলাকার ছোট-বড় সকলে তার কথা মানতেন। বাড়ি থেকে হেঁটে শ্রীপুর গিয়ে ট্রেনে ঢাকায় যেতেন।

তখন এলাকায় বাঘ-ভাল্লুক ছিল। তাজউদ্দীন শিকারিদের সাথে বাঘ শিকারে যেতেন। বয়স অনেক হওয়াতে ছেলেবেলার সব কথা মনে করতে পারছেন না বলেও জানান অছিম উদ্দিন।

রাজনৈতিক স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, আমি তাজউদ্দীনের সাথে মিটিং-মিছিলে যেতাম। এলাকায় স্কুল-মাদ্রাসা না থাকায় পড়ালেখা করতে পারিনি। তাজউদ্দীন পড়ালেখার জন্য শহরে চলে যান। মিটিংয়ে আমাকে মাইকে পরিচয় করিয়ে দিতেন। কাপাসিয়ায় আমার নেতৃত্বে মিছিল হত।

আমি এখন অসুস্থ। আমার তিন ছেলে। এর মধ্যে একজন কিছু পড়ালেখা করেছে। দুজন কৃষি কাজ করে। আমি কৃষি কাজ ও তাজউদ্দীনের ভাই মফিজ উদ্দিনের সাথে ব্যবসা করতাম।

স্বাধীনতার পর তাজউদ্দীন বলেছিলেন, আমি যদি বেঁচে থাকি, তোর পরিবার নিয়ে ভালভাবে চলার ব্যবস্থা করে দিব। তারপর তাকে মেরে ফেলা হল। তার ছেলে-মেয়েদের কাছে আমি কখনো কিছু চাইনি। সোহেল তাজ আমার কথা শুনে। তারা আমার খোঁজখবর রাখে।

বন্ধুর সন্তানদের কাছে কোন চাওয়া আছে কি না, জানতে চাইলে অছিম উদ্দিন বলেন, আমাকে একটু সহযোগিতা করলে জীবনের শেষ সময়টা ভাল থাকতে পারতাম। তারা যদি স্বেচ্ছায় কিছু দেয়, তাহলে নিব।

তিনি বলেন, তাজউদ্দীনের মৃত্যুর সংবাদ আমি ঢাকা থাকা অবস্থায় পাই। মাথায় যেন আসমান ভেঙে পড়েছিল। আমি প্রিয় বন্ধুকে হারিয়েছি। এখনো ছেলেবেলার কথা খুব মনে পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ২:৩১:০২   ৪৬৭ বার পঠিত