মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

মিয়ানমারকে দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে-খালেদা

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » মিয়ানমারকে দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে-খালেদা
মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৭



ফাইল ছবি

বঙ্গ-নিউজঃ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ ধনী নয়। তবে এদেশের মানুষের হূদয়ে ভালোবাসা আছে। তাই গরিব হয়েও যে যেভাবে পেরেছে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন এ ভার বহন করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। সেজন্য মিয়ানমারকে অতিদ্রুত নিরাপদে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু কথায় হবে না। তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে তিনি এ সব কথা বলেন। উপজেলার ময়নারঘোনা, কাটাখালী ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রথমে ত্রাণ বিতরণ করেন খালেদা জিয়া। পরে পানপাড়ায় রোহিঙ্গাদের জন্য একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প উদ্বোধন করেন তিনি। বিএনপিপন্থি চিকিত্সকদের সংগঠন ড্যাব এ মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করেছে।

খালেদা জিয়া মিয়ানমার সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, সামনে শীত আসছে, শরণার্থীদের মধ্যে শিশু ও নারীরা আছেন। কষ্টের কথা বিবেচনা করে তাদের ফিরিয়ে নিন। আপনাদের নিজের দেশের মানুষকে মর্যাদার সাথে ফিরিয়ে নিয়ে নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এ জন্য সরকারকে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন।

খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করতে কক্সবাজার শহর থেকে উখিয়ায় যান। আড়াই ঘণ্টা ত্রাণ বিতরণ শেষে তিনি আবারও কক্সবাজার সার্কিট হাউজে ফেরেন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতে চট্টগ্রাম পৌঁছান। আজ মঙ্গলবার তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।

বিএনপির ত্রাণের মধ্যে রয়েছে ১১০ টন চাল, পাঁচ হাজার শিশু ও পাঁচ হাজার সন্তান সম্ভবা নারীর জন্য বিশেষ খাবার। ৪৫ ট্রাক ত্রাণের মধ্যে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল বিতরণ করেন ৯ ট্রাক ত্রাণ। বাকি ত্রাণ হস্তান্তর করা হয়েছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর কাছে। শিশু ও প্রসূতিদের জন্য বিশেষ উন্নত খাবার ড্যাবের চিকিত্সকরা ক্যাম্পের মাধ্যমে বিতরণ করবে।

খালেদা জিয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা নারীর মুখে তাদের ওপর চালানো বর্বরতার ঘটনা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি তাদের ধৈর্য ধরার আহবানও জানান। ময়নারঘোনায় বেগম খালেদা জিয়া বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরাতে এ সরকার এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাদের উদ্যোগ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সরকারকে যেমন কূটনৈতিক তত্পরতা চালাতে হবে, তেমনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে।

অতীতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং তাদের ফেরত পাঠাতে বিএনপি সরকারের সময়ে নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ১৯৭৮ সালে একবার এমন হয়েছিল। তখন মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ’৯৩ সালেও ওরা এসেছিল, আমার সরকারের আমলে। তখনো মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনার করে তাদের দেশে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। সারা দেশের মানুষ রোহিঙ্গাদের প্রতি যে সহমর্মিতা এবং মানবিকতা প্রদর্শন করছে তা অভূতপূর্ব।

তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য যারা কাজ করতে চায়, সরকার তাদের নানাভাবে বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এখানে বিএনপি যেভাবে রিলিফ কার্যক্রম চালাচ্ছে সেভাবে সরকারের রিলিফ কার্যক্রম লক্ষ্য করছি না। আমি মনে করি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আরো বেশি করে এগিয়ে আসা উচিত। বাংলাদেশ এমনিতেই ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। সেজন্য শরণার্থী রোহিঙ্গাদের এখানে দীর্ঘদিন রাখা সম্ভব নয়।

খালেদা জিয়া বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হলে হত্যা নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানিয়েছি। এরপরই বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের এখানে আশ্রয় দেয়। এরপর বিশ্বের কয়েকটি দেশ রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তারা রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা নির্যাতন বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়।

রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে সেনাবাহিনীর বিশেষ ভূমিকার জন্য বাহিনীর সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি শৃঙ্খলা আনতে সেনা মোতায়েনের দাবি করেছিল। আমাদের দাবি মোতাবেক সেনা মোতায়েন করেছিল বলেই শৃঙ্খলা ফিরে আসে। ত্রাণ তত্পরতায় গতি আসে। সুতরাং সেনাবাহিনীকে এখানে রাখতে হবে। দেশি ও আন্তর্জাতিক যেসব সংস্থা ত্রাণ নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানান বেগম খালেদা জিয়া।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, সাংবাদিকদের উপর কারা হামলা চালিয়েছে সরকার তা জানে। এ ঘটনা ন্যক্কারজনক। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সরকারকে অবশ্যই এসব বন্ধ করতে হবে। এগুলো করে কোনো লাভ হবে না। বরং এগুলো করে মানুষের কাছ থেকে আপনারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন।

এ সময় খালেদা জিয়া মোবারকের মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, একটু সময় লাগবে, অপেক্ষা করো। রাখাইনে শান্তি আসবে। ত্রাণ বিতরণকালে আরো কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বেগম জিয়া তাদেরকে সান্ত্বনা দেন। ত্রাণ বিতরণকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ কয়েকশ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৬:৩৬   ৫২৭ বার পঠিত