শনিবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

সরকারের সব কার্যক্রম এখন আগামী নির্বাচনকে ঘিরে

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » সরকারের সব কার্যক্রম এখন আগামী নির্বাচনকে ঘিরে
শনিবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৭



প্রতীকী ছবি

বঙ্গ-নিউজঃ জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ এখন পর্যন্ত ঠিকঠাক না হলেও, এখন থেকে সরকারের কার্যক্রম আগামী নির্বাচনকে ঘিরে হবে। একই সঙ্গে ১৯৯৬-২০০১ ও ২০০৯ থেকে বর্তমান মেয়াদ পর্যন্ত সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের তালিকা তৈরি করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রামাণ্যচিত্র আকারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া। আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর সেই বৈঠকে আসন্ন নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানো আর পেশাদারিত্বের উন্নয়নের স্বার্থে বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিব সভায় ২৬টি বিষয়ে নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত দেন। সেই নির্দেশনার বিষয়টি অবহিত করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ২৩ জুলাই সচিবদের কাছে একটি গোপনীয় চিঠি পাঠান। যেখানে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সচিবদের উদ্দেশে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তার বাস্তবায়নের ব্যাপারে যেন দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হয়। এর দুই মাস পরই অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ড. মো. শহিদউল্লাহ প্রত্যেক সচিবের কাছে আলাদা একটি চিঠি পাঠান। যে চিঠিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়নের অবস্থা কী? শুধু তাই নয়, অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে বলা হয়েছে। যেখানে একটি নির্দিষ্ট তারিখ বেঁধে দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এখন সেই কাজে ব্যস্ত বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার ওপর অনেক সচিবের রদবদল নির্ভর করছে। বিগত নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রতি দিয়ে এসেছিলেন তার একটি বাস্তবায়নের চিত্র তিনি নিজে দেখতে চান। পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কোন সচিব কাজ করছেন তার একটি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর সব কিছুই হবে নির্বাচনকে ঘিরে। সরকারের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে মোকাবিলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় খুব শিগগির সচিব পদে বড় ধরনের রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। এবার যাদের সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হবে কিংবা রদবদল করা হবে তারা যেন সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ব্যাপারে মনোযোগী হন, সেই হিসাব-নিকাশ চলছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। জেলা প্রশাসনে রদবদলের সম্ভাবনার কথাও আভাস পাওয়া গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করা হচ্ছে কি-না তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কারণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন অনেকটা তাদের ওপর নির্ভর করছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত কোনো কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছেÑ স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার অর্থ, আইন, তথ্য, শিক্ষা ইত্যাদি।

এদিকে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এর জন্য সরকার অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা হবে। এরই প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ১৩৫ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এখানে আইসিটি সক্ষমতার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে সরকার তার এ মেয়াদের শেষ বছর হিসেবে বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করবে। পাশাপাশি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেবে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু অন্যতম। এই বড় প্রকল্প আগামী বছরের শেষ নাগাদ সম্পন্ন করার ব্যাপারে মনোযোগ দিচ্ছে সরকার। অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে সামাজিক উন্নয়নের কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার ব্যাপারে তাগিদ রয়েছে সরকারের। সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আরো জোরালো ভূমিকা রাখা হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। যেন এই রোহিঙ্গা ইস্যু জাতীয় নির্বাচনে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটেও সংশোধন আনা হবে। বিশেষ করে নতুন ভ্যাট আইন স্থগিত হওয়ার ফলে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা তুলনায় কম হতে পারে। পাশাপাশি এই ঘাটতি পূরণের জন্য কী ধরনের কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন তা খুব শিগগিরই অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করবেন। যেন সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি কোনো ধরনের চাপ না পড়ে। এখানেও নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কারণ আগামী অর্থবছরের বাজেট হতে পারে একটি সাদামাটা গোছের। আর সেটি হবে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট।

বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৩:২৮   ৪৪৭ বার পঠিত