রবিবার, ৮ অক্টোবর ২০১৭

অপরুপ ধামাইল গানে গানে আর জ্যোৎসনা উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হলো ধামাইল প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

Home Page » সারাদেশ » অপরুপ ধামাইল গানে গানে আর জ্যোৎসনা উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হলো ধামাইল প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী
রবিবার, ৮ অক্টোবর ২০১৭



 ধামাইল

আল-আমিন আহমেদ সালমান,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি,বঙ্গনিউজঃ অপরুপ ধামাইল গানে গানে আর জ্যোৎস্না উৎসবের মধ্য দিয়ে গত ৫ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর থানাধীন হাওর বেষ্টিত জমশেরপুর গ্রামে পালিত হলো হাওর পারের ধামাইল,বাংলাদেশ এর ২৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।
নতুনত্বের আবহ।নব নব রুপায়নের নবায়নকে লক্ষ স্থির করে গ্রাম বাংলার কৃষ্টি কালচার লালন করার মানসেই মূলত এই সংগঠনের শুভ যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালের এই দিনে।তখন কেবল হাওর জেলা সুনামগঞ্জের মধ্যনগর এলাকাতেই এর ব্যাপ্তি ছিল।এর পর দুই হাজার দশ সালে এর কলেবর ব্যাপ্তি বেড়ে যায় সাত হাওর জেলায়।অনেক বাধা বিপত্তি,চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে পোড় খাওয়া ধামালিয়া সংস্কৃতির উত্তরণ এখন সাধারনের দোরগোড়ায় এক আবেদনের প্রতীক। ৫ অক্টোবর দিনভর অনুষ্ঠানের আয়োজকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের শেষে পড়ন্ত বিকেলে শত শত লোকে ভরে গেল বাড়ির আঙ্গিনা।শারদিয়া দূর্গা পূজার আমেজ কাটতে না কাটতেই শারদ পূর্নিমা রাতে এমন আয়োজন ছিল এক মনোমুগ্ধ যোজনা।হৃদয় ছোঁয়ে যাওয়া লোক সংস্কৃতির মন্থনে ক্ষনিকের তরে মোহিত করে নিয়ে গেল ফেলে আসা দুরন্ত অতীতে। এরকম উঠোন বিনোদনইই ছিল আগেকার এক সময়ের মৌলিক চর্চা।পৌরাণিক,লোকিক, গান নাটক, জারি, পদাবলি কীর্তন কত কি উপাদান ছিল সংস্কৃতির উপজীব্য বিষয়।শ্রোতারা তৃপ্তি আস্বাদন করেছিল হারানো বিনোদনের পূন আয়োজনে।এই বাংলার গ্রাম,মেঠোপথ,হিজল করচের সমারোহ,পাক পাকালির কলতান,নিঝুম রাতে ঝিঁঝি পোকার গুঞ্জন,ভরা পূর্নিমার রাতে হাওরের বুকে আঁছরে পড়া স্নিগ্দ জোছনা।সুনীল আকাশে মিটি মিটি তারার মেলা।সব মিলিয়েছিল অনিন্দ্য সুন্দর এক শারদ রাতের উপহার।গানের দেশ,বাউলের দেশ,সুরের দেশ এই ভাটি বাংলার হাওর জনপদ।এখান ধামালিয়া সংস্কৃতি তাবৎ হাওর জনপদের সবাইকে সংঘ বদ্ধ করে রাখে সম্পৃতির বাঁধনে যুগ যুগ ধরে।আমরা হাওরবাসী।এক সময় খুব ভাল ছিলাম।ছন্দময় জীবন ছিল হাওর বিতানে।অতীতকে যদি বর্তমানে সামনে এনে দাঁড় করাই তবে দেখতে পাই আজকের হাওর জীবন কত যে দোষর বিবর্ণ।প্রকৃতি যেন আজ বিক্ষোদ্ধ,বৈরী, বিমুখ।বছর বছর আগাম প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসে হাওর জীবনকে ক্ষত বিক্ষুদ্ধ করে দিয়ে যায়।আজ আমরা ক্ষত বিক্ষত মন নিয়ে বসেছিলাম আমাদের অতীত রোমন্থনে।আমাদের এখনকার চলমান জীবনের পথ চলা বড় বন্ধুর।বেঁচে থাকতে প্রাণপন যুদ্ধ করে ঠিকে আছে হাওরবাসী।যেখানে একসময় হাওরে ছিল অবারিত আনন্দের মেলা সেখানে এখন বিষাদের কালোছায়া।অনাহারে অর্ধাহারে এখানে কতো প্রাণের নির্ঘুম রাত কাটে কে রাখে সে খবর….? খাদ্য পুষ্টি সহ সকল অভাব নিয়ে ভগ্ন স্বাস্থ্যের মানুষগুলো তবুও হাওরকে বুকের মাঝে আগলে রাখে পরম মমতায়।এটাই আমাদের গ্রাম বাংলার বেঁচে থাকার অবলম্বন।সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন হাওর পারের ধামাইল(হাপাধা), বাংলাদেশ তার ২৭ তম বর্ষ পূর্তি আয়োজনে হাওর বাংলার দুঃখ গাথাই তুলে ধরেছেন।গ্রামীন জীবনের সাথেই যেনো এদের গভীর মিতালী। আয়োজন করা হয় নানা কর্মসূচী।কর্ম সূচীর মধ্যে ছিল ভাটি বাংলার রমণীকুলের জনপ্রিয় সুমধুর ধামাইল গানের সমাদৃত আসর।পদ কীর্তণ,বাউলের বাউলিয়াপনা,জারিগান,ছ­ন্দময়,আঞ্চলিক আইলাম্বর গান।দ্বিতীয় পর্বে মধ্যরাতে ছিল হাওরবিলাস।দল বেঁধে সাঁজোয়া নৌকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে ভরা পূর্ণিমায় গানে গানে পূর্ণিমা উৎযাপন ছিল রুমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।সন্ধ্যাকালে প্রথম পর্বে শত শত গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের শুরুতেই ২৭ টি মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলিত করে স্থানীয় জমশেরপুর গ্রামে এর শুভ উদ্বোধন করেন হাপাধা’র কেন্দ্রীয় সভাপতি সজল কান্তি সরকার।এসময় সংগঠনের অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিমান তালুকদার,যুগ্ম সম্পাদক গোপেশ সরকার,সাংগঠনিক সম্পাদক অসীম সরকার,সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি শাহ আলম সেরুল,নেত্রকোণা জেলা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল হান্নান,সদস্য সচিব দেবব্রত দাস,মধ্যনগর থানা কমিটির সভাপতি মাধব লোধ,সাধারণ সম্পাদক সনৎ কুমার সরকার,সাংগঠনিক সম্পাদক হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকার।অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতীতিদের মধ্যে ছিলেন,জাতীয় দৈনিক বাংলার মুক্তাঙ্গনের সাংবাদিক বাদল কৃষ্ণ দাস,শিক্ষক পুরঞ্জয় সাহা রায়, বংশীকুন্ডা ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান রাসেল আহমেদ, সিলেটের সংস্কৃতি কর্মী তমিস্রা তিথি,সুমন চৌধুরি,উত্তম কাব্য প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২১:৩৫:৩০   ১৩৬১ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #