সোমবার, ১১ মার্চ ২০১৩
আশরাফুল-মুশফিক জুটির রেকর্ড
Home Page » খেলা » আশরাফুল-মুশফিক জুটির রেকর্ডসবে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৪৬ সাল। স্যার ওয়ালি হ্যামন্ডের অধিনায়কত্বে ইংল্যান্ড খেলতে গেছে অস্ট্রেলিয়া। সিডনিতে সিরিজের চতুর্থ টেস্ট খেলছে দুই দল। ওই টেস্টের প্রথম ইনিংসের পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৪০৫ রান করেছিলেন স্যার ডোনাল্ড ব্রাডম্যান ও সিডনি বার্নস। পঞ্চম উইকেট জুটিতে দুজনে যে রান করেছিলেন, ৬৭ বছর পর আজও সেটা অক্ষুণ্ন। ব্রাডম্যান ও বার্নস দুজনেই করেছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি। প্রায় সাত দশক পর গলে বাংলাদেশের পক্ষে এমনই একটি জুটির গল্পগাথা লিখলেন মোহাম্মদ আশরাফুর ও মুশফিকুর রহিম। দুজনে ২৬১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন, যা বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে যে কোনো উইকেটে, যে কোনো দেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান। এই জুটি শুধু গড়েনি, বাংলাদেশের ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর সামনে এক স্বপ্নের বীজ বুনেছে। যা থেকে অন্যরকম স্বপ্ন দেখছে এখন পুরো দেশ।
গলের ইতিহাসে এমনটা কখনোই হয়নি। তিনদিন পর্যন্ত ব্যাটসম্যানরা সমানতালে ছড়ি ঘুরিয়েছেন বোলারদের উপর। অথচ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্টের প্রথম তিনদিনে এমনটাই দেখা গেল। রান উঠেছে ১০০৮! অথচ উইকেটের পতন মাত্র ৮টি। এই রেকর্ডের মধ্যেই রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। কিছু দলীয় এবং কয়েকটি ব্যক্তিগত। দলীয় রেকর্ডের মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবং বিদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ স্কোর। এক দিনে সর্বোচ্চ স্কোর। এছাড়া পঞ্চম ও যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। ব্যক্তিগত রেকর্ডের মধ্যে আশরাফুল বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। মাত্র ১১ রান করলেই প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করবেন টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। এছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোরও এখন তার দখলে। প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ১৫০ উর্ধ্ব ইনিংস দুটি তার। অবশ্য আশরাফুলের পাশাপাশি সেঞ্চুরি করেছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও। তার অপরাজিত ১৫২ রান বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ টেস্ট খেলছে ১৩ বছর। ৭৬ টেস্টে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ স্কোর ৫৫৬, এ বছরই খুলনায় মুশফিকবাহিনী করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চারশয়ের উপর স্কোর ছিল একটি। ২০০৮ সালে আশরাফুলের সেঞ্চুরি এবং সাকিব আল হাসানের নার্ভাস নাইনটিজে (৯৬) ৪১৩ রান করেছিল বাংলাদেশ। গতকাল সেটা টপকে গেছে টাইগাররা। সঙ্গে পিছনে ফেলেছে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ৩২৮ রানের রেকর্ডকেও। গতকালের আগ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার মাটিতে এটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।
দুইশ রানের জুটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের দুটি। ২০১০ সালে মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে তামিম ইকবাল ও জুনায়েদ সিদ্দিকী দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ২০০ রান করেছিলেন। সেটাই ছিল প্রথম দুইশ রানের জুটি। এর আগের সর্বোচ্চ ছিল আশরাফুল ও মুশফিকের। ২০০৭ সালে কলম্বোয় দুই ক্রিকেটার ১৯১ রান করেছিলেন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে। ওই ম্যাচে ১২৯ রান করেছিলেন আশরাফুল। মুশফিক খেলেছিলেন ৮০ রানের প্রত্যয়ী ইনিংস। এই জুটিই গতকাল কুলাসেকেরা, রঙ্গনা হেরাথ, অজন্থা মেন্ডিসদের সাধারণমানে নামিয়ে ২৬১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। এরমধ্যে মুশফিকের রান ১৫২ ও আশরাফুলের রান ১০২। গতকাল দুজনে খেলেছেন ৮২ ওভার। যা আরও একটি রেকর্ড।
আশরাফুল শ্রীলঙ্কা সফরে সুযোগ পেয়েছেন ভাগ্যগুণে। শাহরিয়ার নাফিস হাতের তালু কেটে ফেলায় সুযোগ পান তিনি। সুযোগটাকে পুরোপুরি কাজে লাগান ১৮৯ রানে অপরাজিত থেকে। আগের দিন অপরাজিত ছিলেন ৬৫ রানে। গতকাল যোগ করেন ১২৪ রান। ৫৮ টেস্ট ক্যারিয়ারে এটা তার ষষ্ঠ সেঞ্চুরি এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পঞ্চম। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে হাজার রানের মাইলফলকও গড়েছেন তিনি। ১২ টেস্টে বর্তমানে তার রান ১০৪৭*। ৩৯৮ বলের ইনিংসটিতে একটি মাত্র ছক্কা মেরেছেন কাভারের উপর দিয়ে হেরাথকে। এছাড়া চার ছিল ২০টি। মুশফিক ১৫২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ২৩৬ বলে ১৮ চার ও এক ছয়ে। আজ চতুর্থদিন ১৩২ রানে পিছিয়ে থেকে খেলতে নামবে টাইগাররা। কতদূর যাবে সেটা সময় বলবে। তবে পুরো দেশ এখন অপেক্ষায় আশরাফুলের ডাবল সেঞ্চুরির।
বাংলাদেশ সময়: ১:২৯:২৮ ৯৩৩ বার পঠিত