মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
‘সুলতান সুলেমানের’ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র শাহজাদা মুস্তাফার ফাঁসি কার্যকর
Home Page » প্রথমপাতা » ‘সুলতান সুলেমানের’ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র শাহজাদা মুস্তাফার ফাঁসি কার্যকরবঙ্গ-নিউজ: অটোমান সাম্রাজ্যের সোনালী যুগ নিয়ে তৈরি সিরিয়াল ‘সুলতান সুলেমানের’ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র শাহজাদা মুস্তাফার ফাঁসি কার্যকর করা হলো; সুলতান সুলেমানের সবচেয়ে যোগ্য উত্তরসুরী বড় ছেলে শাহজাদা মুস্তাফা। আর তার এ পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না সৈনিক শিবির থেকে সাধারণ জনগণও। এমনকি তার সৎ ভাই শাহজাদা জাহাঙ্গীরের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে শাহজাদা মুস্তাফা কতটা মানুষের হৃদয় জয় করে নিতে পেরেছিলেন।
‘সুলতান সুলেমান’ সিরিজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র শাহজাদা মুস্তাফা। সুলতান সুলেমানের নির্দেশে, তারই সামনে প্রাণ কেড়ে নেয়া হলো শাহজাদা মুস্তাফার। মুস্তাফাকে হত্যার পর সৈন্যশিবিরে ব্যাপক ক্ষোভ ও কান্নার অভিব্যক্তি দেখা যায়। তার সৎ ভাই শাহজাদা জাহাঙ্গীরকেও ব্যাপক কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। হতাশ হয়েছেন তার লাখো অনুসারি, যারা তাকে সাম্রাজ্যের পরবর্তী সুলতান হিসেবে চেয়েছিলেন।
‘শাহজাদা মুস্তাফা’ চরিত্রের নির্মম পরিণতি দেখলো। সেই সাথে দেখলো অন্দরমহলের ষড়যন্ত্রের জালে কীভাবে আটকা পড়ে গেলেন সুলতান সুলেমান। গল্প অনুসারে বলতে হয়, তিনি তার শাসনামলের সবচেয়ে বড় ভুলটুকু করে বসলেন।
‘সুলতান সুলেমান’ সিরিজটি নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে দীপ্ত টিভিতে। ‘সুলতান সুলেমান’ সিরিজে ‘শাহজাদা মুস্তাফা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তুর্কি মডেল, চিত্রনায়ক ও প্রযোজক মেহমেত গুনসুর। চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন ১৯৯৭ সালে। ছবির নাম ‘হাম্মাম’। এরপর এ পর্যন্ত তিনি ১৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
প্রায় সাত শ বছর ধরে তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের রাজত্ব ছিল পৃথিবীজুড়ে। এই সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ ছিল সুলতান সুলেমানের নেতৃত্বে ষোড়শ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী। ক্ষমতার টানাপোড়েনে অটোমান সাম্রাজ্যের ষড়যন্ত্র, গুপ্তহত্যা, ভাই হত্যা, সন্তান হত্যা ও দাসপ্রথার অন্তরালে কাহিনি নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘সুলতান সুলেমান’ সিরিজ। এখানে জীবন্ত হয়ে উঠেছে সুলতানকে প্রেমের জালে আবদ্ধ করে এক সাধারণ দাসীর সম্রাজ্ঞী হয়ে ওঠার কাহিনি।
শাহজাদা মুস্তাফার জীবনী
শাহজাদা মুস্তাফা (১৫১৫ -১৫৫৩) ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাহাজাদা এবং সুলতান সুলাইমান ও মাহিদেবরানের প্রথম সন্তান। তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে উসমানীয় সাম্রাজ্যের উত্তরাধীকারী ছিলেন এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু তার পিতা তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন এবং মুস্তাফার মৃত্যুর পর যদিও সুলাইমান এটি নিয়ে অনেক আক্ষেপ করেছেন।
মুস্তাফা উসমানীয় সাম্রাজ্যের মানিসার গভর্নর (১৫৩৩-১৫৪১), আমাসিয়ার গভর্নর (১৫৪১-১৫৪৯) এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের কোনয়ার গভর্নর (১৫৪৯-১৫৫৩) ছিলেন।
তৎকালীন সময়ের অনেক ঐতিহাসিকগন মনে করতেন, মুস্তাফা ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে যোগ্য এবং মেধাবী শাহজাদা, এবং ক্ষেত্রে বিশেষে তিনি সুলতান সুলেমানের থেকেও অনেক পরিপক্ক সুলতান হওয়ার যোগ্যতা রাখতেন যদি তিনি সেলিমের জায়গায় উসমানীয় সুলতান হতেন। ইতিহাস মতে, প্রজা এবং সৈন্যদের মনে পরবর্তী সুলতান হিসেবে সবথেকে গ্রহণযোগ্য শাহজাদা ছিলেন শাহজাদা মুস্তাফা।
প্রধান উজির রুস্তম পাশা ও প্রথম সুলাইমানের স্ত্রীর হুরুরেম সুলতান উভয়ই সুলাইমানকে মুস্তফার বিরুদ্ধে উসকিয়ে দেন এবং মুস্তফাকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। ঐতিহাসিক সূত্র দ্বারা জানা যায় ১৫৫৩ সালে সফভীয় ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানকালে রুস্তম পাশা সুলাইমানকে অবহিত করেন মুস্তাফা বিদ্রোহ করেছেন এবং সুলাইমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিশাল সৈনাবাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছেন। বিপরীতে মুস্তাফাকে বলা হয় ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় সুলতান সুলাইমান বিপদে পরেছেন এবং শাহজাদা মুস্তাফার সহায়তা চেয়েছেন। যার পরিণতিতে মুস্তাফা তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে সুলতানকে সাহায্য করার জন্য রওনা হন।
সুলতানের তাবুর কাছে সৈন্যসমেত পৌঁছানর পর তাকে জানানো হয় ভেতরে সুলতান তার জন্য অপেক্ষা করছেন। মুস্তাফাকে নিরস্ত্র করে তাবুর ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। শাহজাদা মুস্তাফা সুলতান সুলায়মানের তাবুতে প্রবেশ করলে সুলাইমানের নির্দেশে আগে থেকে ওত পেতে থাকা গুপ্ত ঘাতকেরা নিরস্ত্র মুস্তাফাকে আক্রমণ করে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
১৫৫৩ সালে সুলাইমান মুস্তাফাকে প্রাণদণ্ড দেয়ার পর সৈন্যদের মধ্যে একটি বড়মাপের অসন্তুষ্টি ও অস্থিরতার উত্থান হয় যারা রুস্তম পাশাকে মুস্তফার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন। এ সময় চৌকশ জেনিসারি ও আনাটোলিয়ান সৈন্য বাহিনী বিদ্রোহ ঘোষণা করে কারণ উসমানীয় সাম্রাজ্যের নিয়ম মোতাবেক ভবিষ্যৎ সুলতান হবেন শাহাজাদা মুস্তাফা যিনি ছিলেন জনপ্রিয় এবং একজন বীর যোদ্ধা। সে সময় ইস্তাম্বুলের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছিল চাপা ক্ষোভ এবং এর ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার মানুষ উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রাসাদে আক্রমণ চালায় যারা এই অন্যায় মৃত্যুদণ্ড মেনে নিতে পারে নি।
মুস্তাফার মৃত্যুর পর উসমানীয় সাম্রাজ্যের অ্যানাটোলিয়া বিশেষ ভাবে আমাসিয়া, মানিসা এবং কোনয়া নামক স্থানে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হয় কারণ সেসব স্থানের মানুষ মুস্তাফাকে হবু সুলতান হিসেবে মেনে নিয়েছিল। অ্যানাটোলিয়ার অধিকাংশ মানুষ মুস্তাফাকে “সুলতান মুস্তাফা” হিসেবে মনে করত কারণ তিনি ছিলেন সিংহাসনের উত্তরসূরি। Taşlıcalı Yahya নামক একটি শোকগাথা শাহাজাদার মর্মান্তিক হত্যাকান্ডকে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়। শাহাজাদা মুস্তাফার জীবনী তুরষ্কের অ্যানাটোলিয়ানের সাহিত্যের অংশ হয়ে যায়।
শাহাজাদা মুস্তাফার মৃত্যুর ঘটনায় উসমানীয় সাম্রাজ্যের জনগণ প্রথম সুলতানের স্ত্রী হুরুরেম সুলতান, জামাতা রুস্তম পাশা এবং কন্যা মেহেরিমাকে দায়ী করে। যার ফলশ্রুতিতে প্রথম সুলায়মান রুস্তম পাশাকে বরখাস্ত করেন এবং ১৫৫৩ সালে কারা আহমেদ পাশাকে প্রধান উজির হিসেবে নিয়োগ দেন এবং ঘোষণা করেন শাহাজাদা মুস্তাফাকে ইস্তাম্বুলে রাজকীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা হবে এবং পরবর্তীতে তাকে তুরষ্কের বুরসায় সমাধিস্থ করা হয়।
কারা আহমেদ পাশাকে প্রধান উজির হিসেবে নিয়োগের দুই বছর পর, কারা আহমেদ পাশাও হুররেম সুলতানের চক্রান্তের স্বীকার হন, কারণ হুররেম তার জামাতা রুস্তম পাশাকেই আবারও প্রধান উজির হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। ১৫৫৫ সালে কারা আহমেদ পাশাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং রুস্তম পাশাকে আরও একবার প্রধান উজির (১৫৫৫-১৫৬১) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
১৫৬১ সালে, হুররেমের মৃত্যুর তিন বছর পর, ফরাসি লেখক গ্যাব্রিয়েল বোনিন মুস্তাফার মৃত্যুতে হুররেম সুলতানের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে “লা সুলতানে” নামে একটি ট্র্যাজেডি নাটিকা লেখেন। তুরস্কের বিভিন্ন লোক কাহিনীতে মুস্তাফাকে আজও সম্মানের সাথে স্মরণ করা হয়।
শাহাজাদা মুস্তাফার মৃত্যুদণ্ডের পর মুস্তাফার সন্তান মেহেদকেও মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়, কারণ তাঁর দাদা সুলেইমান তাঁকে সম্ভাব্য হুমকি বলে মনে করেন। তিনি মুস্তাফা এর কবরের মধ্যে সমাহিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১২:৪৭ ৪২৭৮ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News