শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অজ্ঞান পার্টির টার্গেট গরু ব্যবসায়ী

Home Page » জাতীয় » অজ্ঞান পার্টির টার্গেট গরু ব্যবসায়ী
শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭



ফাইল ছবি

বঙ্গ-নিউজঃ ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রাজধানীতে প্রায় ২২টি অস্থায়ী পশু বিক্রির হাটের আয়োজন করা হয়েছে। আর এই ঈদকে সামেনে রেখে রাজধানীর পশুর হাটকে টার্গেট করেছে অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা।

এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, ঈদুল আজহায় গরুর ব্যবসায়ীরা নগদ অর্থ লেনদেন করে থাকেন। ফলে গরুর হাটকেন্দ্রিক এ পার্টির সদস্যদের বেশি তৎপর দেখা যায়।

অজ্ঞান পার্টির এসব সদস্যকে ধরতে র‌্যাব সদস্যরা তৎপর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘটনা সূত্রে দেখা গেছে, অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তারা একটি এলাকা থেকে বাস বা অন্য কোনো গণপরিবহনে উঠেছেন। সেখানে তাদের নতুন নতুন কৌশলে অজ্ঞান করা হয়েছে। মাওয়া থেকে গুলিস্তান-সায়েদাবাদ রুট, কাঁচপুর-নারায়ণগঞ্জ থেকে যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান, গাজীপুর থেকে আবদুল্লাহপুর, মহাখালী ও সাভার থেকে গাবতলী, মিরপুর ও চিড়িয়াখানা রুটের বাসগুলোতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বেশি সক্রিয়। এ ছাড়া পল্টন, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর, চানখাঁরপুলসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে চক্রটি কাজ করছে।

রাজধানীসহ এর আশেপাশে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এদের খপ্পরে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই ঈদকে ঘিরে তাদের মূল লক্ষ্য হলো রাজধানীর পশুর হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা। বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের যাত্রীরাও বাদ যাচ্ছে না এদের কবল থেকে। কখনো পরিচিত মানুষ, কখনো হকার সেজে নতুন নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে মানুষকে বোকা বানিয়ে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে এসব চক্র।

অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কেউ না কেউ ভর্তি হচ্ছেন। সর্বস্ব হারানোর পাশাপাশি প্রাণ হানির ঘটনাও ঘটেছে অনেক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, বাস, লঞ্চ, ট্রেনস্টেশন ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অচেতন ব্যক্তিদের উদ্ধার করা হচ্ছে। এদের বেশির ভাগই ঢামেক, মিটফোর্ড, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ সব চক্র ফুটপাত, লঞ্চঘাট, রেল বা বাসস্টেশন, হাটবাজার ইত্যাদি জনবহুল জায়গায় হকার হিসেবে অবস্থান করে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য-যেমন ডাবের পানি, জুস, চা, কফি, পান, খেজুর, ঝালমুড়ি, শক্তিবর্ধক হালুয়া, ক্রিমজাতীয় বিস্কুট, চকোলেট, রঙিন পানীয় ইত্যাদি বিক্রি করে। আবার কখনো এরা যাত্রীবেশে লঞ্চ, বাস বা ট্রেনে উঠে সরাসরি কারও সঙ্গে সখ্য তৈরি করে অজ্ঞানকারী খাদ্যদ্রব্য খাইয়ে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যায়।

চিকিৎসক ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, কোমল পানীয় কিংবা বোতলজাত খাওয়ার পানির সঙ্গে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহূত ইনসুলিন মিশিয়ে তৈরি করা হয় অজ্ঞান করার রেসিপি। আবার গণপরিবহনে সিটের কাছে ক্লোরোফোম জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ লাগিয়েও অজ্ঞান করার কাজটি করা হয়। তারা যেসব ওষুধ ব্যবহার করছে তা খুবই বিপজ্জনক। এসব ওষুধের প্রতিক্রিয়া মানুষের জীবন মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। এমনকি অনেকের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাও দুষ্কর হয়ে উঠতে পারে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অবসরে যাওয়া মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. এনামুল করিম বলেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের প্রয়োগ করা অতিমাত্রায় চেতনানাশক এজমা ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্তদের মৃত্যুর ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। কেউ শিকার হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। চোখের সামনে কেউ অজ্ঞান হলে পেট পরিষ্কার করার জন্য বমি করানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি ও ক্ষতিকর ঘুমের ওষুধ নিষিদ্ধ থাকলেও অবাধ বেচাকেনা থামছে না। এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগে পুলিশকে কঠোর হতে হবে। একইসঙ্গে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হলে এ মারাত্মক অপরাধ কমবে বলে মনে করেন তিনি।

এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর প্রায় ২০টি পয়েন্টে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এদের বেশির ভাগই মৌসুমি অজ্ঞান পার্টির সদস্য। কয়েকটি চক্রকে চিহ্নিত করতে পারলেও তাদের ধরতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান বলেন, অজ্ঞান পার্টিগুলো মূলত সংঘবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন রকম অপতৎপরতা চালায়। কিছু সময় কিছু চক্র ধরাও পড়ছে। তবে তারা নিজেদের বিষয়ে নানা তথ্য দিলেও অন্য চক্রগুলোর বিষয়ে খুব বেশি তথ্য দিতে পারেনি। ঈদে অজ্ঞান ও মলম পার্টির দৌরাত্ম্য রোধে পুলিশ বেশ তৎপর রয়েছে। সচেতনতামূলক কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে। যাত্রা পথে অপরিচিত লোকের সঙ্গে সখ্য ও তাদের দেয়া খাবার পরিহার করলে অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

গত ১৮ আগস্ট যাত্রাবাড়ীর সাদ্দাম মার্কেট এলাকায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার জালাল সাহেব গ্রামের মাসুদ আহামেদ (৪০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ১ আগস্ট গুলিস্তানে অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়ে শামসুদ্দিন নামে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) এক সদস্যের মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪২:০৯   ৬৮৩ বার পঠিত