সোমবার, ২১ আগস্ট ২০১৭

জঙ্গির উত্তর, ‘এগুলো শেখ হাসিনার নাশতা’ সময়টা ছিল ২১শে আগস্ট

Home Page » জাতীয় » জঙ্গির উত্তর, ‘এগুলো শেখ হাসিনার নাশতা’ সময়টা ছিল ২১শে আগস্ট
সোমবার, ২১ আগস্ট ২০১৭



---বঙ্গ-নিউজঃ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয় বিকেলে। দুপুরের দিকে জঙ্গিরা একত্রিত হন রাজধানীর মধ্য বাড্ডার একটি বাসায়। সেখানে উপস্থিত হন মোসাদ্দেক বিল্লাহ। তিনি ওই বাসায় একটি ব্যাগ দেখেন। একজন জঙ্গির কাছে তিনি জানতে চান, ‘ব্যাগে কি জিনিস?’ জঙ্গি উত্তর দেয়, ‘এগুলো শেখ হাসিনার নাশতা।’সাক্ষী হিসেবে আদালতে দেওয়া মোসাদ্দেকের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এ তথ্য। আরেক সাক্ষী নাহিদ লায়লা কাকনের জবানবন্দিতে এক যুগ আগের ভয়াবহ ওই হামলার আগের-পরের নানা কাহিনি বেরিয়ে আসে। তাতে জানা যায়, হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড ঢাকার কোন বাসায় রাখা হয়েছিল। হামলার দিন দুপুরের দিকে কোন ভবনে জঙ্গিরা মিটিং করেছিল।

আদালতে মোসাদ্দেক বিল্লাহ যা বলেন:
মোসাদ্দেক বিল্লাহ গাজীপুরের জামিয়া আহমদিয়া মাদ্রাসা আহমদ নগরের অধ্যক্ষ। ২০০৪ সালে মাওলানা লিটন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁর বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর। পরিচয়ের পর তিনি তাঁর (লিটন) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরিচয়ের দশ থেকে বারোদিন পর তাঁর দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী মেরুল বাড্ডায় অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল গোলাম রব্বানীর বাসায় যান। পরে লিটন কয়েকজন লোকের সঙ্গে তাঁর (মোসাদ্দেক) পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁরা হচ্ছেন আহসান উল্লাহ কাজল, মুফতি হান্নান, আবু জান্দাল, মুসতাকিন মুরসালিন, সবুজ ও আরও অনেকে। যাঁদের অনেকের নাম তাঁর স্মরণে নেই। ২০০৪ সালের ১ জুন পলাশ উপজেলার মাহিচর মাদ্রাসা থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসেন মোসাদ্দেক। পরে তিনি মেরুল বাড্ডার ১১ নম্বর রোডের ৫৬ নম্বর বাড়ির নিচতলায় ফোন-ফ্যাক্স ও মুদির দোকান দেন। আহসান উল্লাহ তাঁকে বলেন, ‘তিনটা রুম নিয়ে তাঁরা থাকেন। তাদের তিনটি কক্ষের প্রয়োজন হয় না। তাঁকে দুটি কক্ষ নিয়ে মক্তব পরিচালনা করতে বলা হয়। তিনি মক্তব পরিচালনা শুরু করেন। পরে আহসান উল্লাহ ওই বাসা ছেড়ে পশ্চিম মেরুল বাড্ডার আরেক বাসায় চলে যান। ওই বাসার নম্বর-৯৪। মোসাদ্দেক ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে দোকান বন্ধ করে পশ্চিম মেরুল বাড্ডায় আহসান উল্লাহর বাসায় যান।

মোসাদ্দেক বিল্লাহ বলেন, ‘সেদিন ম-৯৪ পশ্চিম মেরুল বাড্ডায় ১০/১৫ জন ব্যক্তিকে দেখি। এঁরা হলেন, মাওলানা লিটন, আহসান উল্লাহ, মুত্তাকিন মুরসালিন, আবু জান্দাল ও মুফতি হান্নান। পরে দেখি বাসায় একটি কালো ব্যাগ থেকে গোল গোল কি যেন বের করছেন তাঁরা। আমি উপস্থিত একজনকে জিজ্ঞেস করি, সেগুলো কি জিনিস? সে বলল, এগুলো শেখ হাসিনার নাশতা। সন্ধ্যার সময় লোকমুখে ও সংবাদে শুনতে পেলাম, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা হয়েছে। তখন আমি বুঝতে পারি, শেখ হাসিনার নাশতা কথাটির অর্থ।’

আদালতে নাহিদ লায়লা কাকন যা বলেন:
এই মামলার অন্যতম আসামি পাকিস্তানি মাজেদ ভাটের স্ত্রী ছিলেন নাহিদ লায়লা কাকন। মাজেদ ভাটের সঙ্গে কাকনের বিয়ে হয় ২০০৩ সালে। মামলার আরেক আসামি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আরিফ হাসান সুমনদের বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে তাঁরা বসবাস শুরু করেন। ওই বাসায় যাওয়ার পর কাকন লক্ষ্য করেন, মাওলানা তাজউদ্দিন, সাতক্ষীরার গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মুফতি হান্নান, সুমনের দুলাভাই মাওলানা ইদ্রিস, মাওলানা মুনির তাঁদের বাসায় আসা-যাওয়া করত।

কাকন বলেন, ‘মাজেদ ভাট আমাকে বলেন, তিনি পাকিস্তানের নাগরিক নন। তিনি ভারতের কাশ্মীরের লোক। কাশ্মীরে হিজবুল মুজাহিদীন সংগঠনের নেতা তিনি। তিনি আরও বলেন, মুফতি হান্নান, ইদ্রিস, তাজউদ্দিন ও মুনির হিজবুল মুজাহিদীনের লোক। আমি দেখেছি, পাকিস্তান থেকে কিছু লোক মাজেদ ভাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করত। তাদের সঙ্গে আরও দুজন পাকিস্তানি ব্যক্তি দুটি কার্টনে কিছু ওজনদার বা ভারী জিনিস আমার বাসায় রেখে যায়। পরে তারা চলে যায়। মাজেদ ভাটকে জিজ্ঞাসা করি, কার্টনগুলো কীসের। মাজেদ ভাট বলেন, কার্টনের ভেতর গ্রেনেড ও গুলি রয়েছে। গ্রেনেড ও গুলি তাদের সংগঠনের কাজের জন্য আনা হয়েছে।’ কাকন বলেন, ‘পরে তারা আমাদের বাসায় আসে। আলোচনা করে। তাদের আলোচনায় এটুকু বুঝতে পারি, তারা আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষুব্ধ। তারা চলে যাওয়ার পর মাজেদ ভাটকে বলি, তোমরা কেন আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষ্যাপা?’

কাকন আরও বলেন, ‘আমি মাজেদ ভাটকে বলি, এদের সঙ্গে থেকে আওয়ামী লীগের কিছু হলে তোমার ক্ষতি হবে না তো। মাজেদ ভাট আমাকে বলে, তাজউদ্দীনের ভাই সরকারের একজন মন্ত্রী। আমাদের কিছু হবে না। এর কিছুদিন পর আমি গর্ভ ধারণ করি। পরে বাবার বাড়ি চলে যাই। দেড়-দুই মাস পর সুস্থ হলে আমাকে বাবার বাড়ি সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন তিনি। আমি বাসায় এসে দেখি, বাসায় একটি কালো ব্যাগে কিছু গ্রেনেড রয়েছে। আমি তখন মাজেদ ভাটকে বলি, এই অবৈধ জিনিস আবার আমার বাসায় রেখেছে। আমার খুব ভয় হয়। তুমি তাড়াতাড়ি গ্রেনেডসহ ব্যাগ সরিয়ে ফেলো। আমাকে মাজেদ ভাট বলেন, ভয় নেই। তাজউদ্দিন এসে এগুলো সরিয়ে নিয়ে যাবে। এর দুই থেকে তিন দিন পর তাজউদ্দিন গ্রেনেড ভর্তি ব্যাগ নিয়ে চলে যায়।’

কাকন বলেন, ‘২০০৪ সালের ২০ আগস্ট আমার ছেলে হয়। হাসপাতাল থেকে বাসায় আসার পর পত্রিকা ও টেলিভিশনে দেখে জানতে পারি, ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শেখ হাসিনার মিটিংয়ে হামলা হয়েছে। ওই হামলায় অনেক লোক মারা গেছে। তখন আমার সন্দেহ হয়, এই কাজ মাজেদের লোকজনই করেছে। আমি মাজেদ ভাটকে জিজ্ঞাসা করি, এই ঘটনা কি তোমাদের কাজ? উত্তরে মাজেদ বলে, এই কাজ তাজউদ্দিন ও মুফতি হান্নানেরা ঘটিয়েছে। মাজেদ ভাট আমাকে আরও বলে, আমার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তাজউদ্দিনের ভাই আবদুস সালাম পিন্টু একজন মন্ত্রী, তাজউদ্দিনের সঙ্গে তার ভাই ও সরকারের যোগাযোগ রয়েছে।’

২০১৪ সালের ১১ মার্চ মোসাদ্দেক বিল্লাহ এবং ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে এই জবানবন্দি দেন কাকন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই হামলায় আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। মামলাটি ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন

বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৮:২০   ৫২৭ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #