মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট ২০১৭

বঙ্গবন্ধু মরে নাই -হুমায়ুন ইবনে আয়াজ

Home Page » ফিচার » বঙ্গবন্ধু মরে নাই -হুমায়ুন ইবনে আয়াজ
মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট ২০১৭



-হুমায়ুন ইবনে আয়াজ

তোমরা বঙ্গবন্ধুকে মৃত বলো না
কারণ : তিনি বেচে আছেন
তোমরা তাকে দেখো না বলে ;
ভেবো না, তিনি হারিয়ে গেছেন
কারণ : কেউ কেউ তাকে প্রায়শ দেখেন।
তিনি আছেন ; থাকবেন অনন্তকাল
যতদিন বিশ্বের শোষিত মানুষের জন্য
খুলবে না মুক্তির পাষাণ অর্গল।
আমি মাঝে- মধ্যে, বিশেষত : জোতস্না প্লাবিত রাতে
আমার শয়ন কক্ষের পড়ার টেবিলে
রাতের শেষ প্রহরে,যখন বই এর বর্ণমালা গুলো
ঝাপসা,ক্রমশ কালো পিপড়ার মতো
এলো- মেলো, নড়া- চড়া করে ; আমি বাধ্য ছেলের
মতো, কক্ষের অলিন্দে যাই ; মৃত্যুর আগে
ভালোবসার পৃথিবীটাকে,
দূচোখ ভরে একবার দেখবো বলে।
আমার আকাশ বাড়ির অলিন্দ থেকে
ধূঁ- ধূঁ পশ্চিমাকাশ, আমি অবিভূত হয়ে
আকাশের সৌন্দর্য দেখি, অসংখ্য তারকারাজি
এশিয়া,আফ্রিকা,লেটিন আমেরিকা
এমন কি যেখানে শেষ হয়েছে পশ্চিমাকাশ,
আটলান্টিক ও ভারত মহা সাগরের সঙ্গমস্থল।
পশ্চিম আকাশের তারাদের ঘেষে, বামে
আর্জেন্টিনার ভিয়ামন্টে, ডানে
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন
মাঝে দক্ষিণ আাটলান্টিকের বিপুল জলরাশি-
জোতস্নার সাথে খেলা করে ; কি সুন্দর!
পৃথিবীর রূপ।
হঠাত অতি সরু একটা কালো সুতো
আটলান্টিকের পূর্ব থেকে পশ্চিম পাড় অবধি
ক্রম: দৃশ্যমান হয়ে উঠে,আমি বিস্ময়ে বিমুড়,অবিভূত;
সুতোটি স্থুলতর হয়, এক সময় পীচঢালা রাজপথ
তার পর দিগন্তজোড়া ধাবমান কালো রঙ, ক্রমন্বয়ে
দানবীয় গতি,উত্তরে নিশানা তার, আমি আতকে উঠি;
ভারত মহা সাগরের পুঞ্জিভুত নীলকন্ঠ বিষ!
ছড়িয়ে পরেছে বিশ্বব্যাপী?
যতদূর চোখ যায় কালো,শুধু কুচ- কুচে কালো।
ডাণে মরক্কোর কাসাব্লাংকা,বামে মেক্সিকো,
গুয়েতেমালা,কিউবা,ক্যারিবিয়ান সাগরে অন্যান্য
দ্বীপমালা ; বারমুডা ট্র্যাংগলের অনেক ডানে -
আর্জেস দ্বীপের পিছনে: অচেনা এক দ্বীপ
লোকালয় নেই, বৃক্ষ নেই, জীবনের স্পন্দন নেই
ধূঁ ধূঁ সীমাহীন বালুকাময় প্রান্তর, কালো রঙ
হামাগুরি দিয়ে দ্বীপে উঠে, কালো বর্ণ ঢেকে দেয়
বিশাল এক খন্ড দ্বীপ, চারধারে আটলান্টিকের
জলরাশি জোতস্নার সাথে খেলা করে।
উত্তর সীমান্তে এক চিলতে আলোর রেখা
আবছা আলো- আধারি দ্বীপ, রহস্যঘেরা
অসংখ্য মানুষ, মানুষের কঙ্কাল,কালো মানুষ,
পিঙ্গল,তাম্রবর্ণের, ছিটেফোঁটা সাদা মানুষ
বিচিত্র ভাষা, বিপুল কোলাহল ;-
জনতা হাজার কোটির ও বেশী
শত- শত বছরের নির্যাতীত মানুষ আজ প্রতিবাদী
চোখে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, মুখে রণম্মোত্ত ধ্বনি
বুকে দৃঢ় প্রত্যয়।
দ্বীপের এক ফালি সমতল উচু ভূমি,বিশাল মঞ্চের মতো
ডানে,সুদূরে আলেকজান্দ্রিয়ার নিস্প্রভ বাতিঘর
গুটিকয়েক মানুষ মঞ্চে উঠছে,বীরের ভঙ্গিতে
বাকি রা, সুস্থির, উন্মুখ,মঞ্চপানে চোখ আর কানের
উদগ্র নিশানা। সমগ্র দ্বীপ,তিল ধারণের ঠাই নাই
আলোর রেখাটি প্রসারিত হয়, কতো গুলো চেনা মুখ
ভেসে উঠে;- চে গুয়েভারা সামনে বুক চিতিয়ে দাড়িয়ে
পিছনে অসম্ভব দীর্ঘকায় একজন, প্রায় আকাশছোয়া,
ব্রাজিলের খ্রীষ্ট দ্যা রেডিমারের স্ট্যাচুর উপরে পৌছেছে
তার মাথা। ডানে লেনিন, মাওসেতুং,হোচিমিন আর
বামে,সুকর্ণ,আলেন্দে,জামাল আবদেল নাসের
পিছনে নেলসন ম্যান্ডেলা,সেন্ট মার্টিন লুথার কিং
তার ও পিছনে ক্লিষ্টমুখ পাবলো নেরুদা যেনো ফুসছে,
সবার পিছনে দৃঢ়প্রত্যয় সেনাপতির ভঙ্গিতে ফিদেল ক্যাস্ট্রো ঋজুদেহে দাড়িয়ে, চারদিকে বাজপাখি দৃষ্টি তার।
হঠাত, চে গুয়েভারার পিছনে,আকাশছোয়া আদমসুরসত;- এক খানা হাত তার আকাশে
বিদ্যুতের মতো ঝিলিক দিলো,মূহুর্তে, -
হাজার কোটি জনতা বিপুল চিত্কারে, -
বিভিষিকাময় আওয়াজ তোলে, বিদীর্ণ করে
আটলান্টিকের বিপুল জলরাশি,দুলছে সমুদ্র;
দুলছে লেটিন আমেরিকা,আফ্রিকা,এশিয়া
বিশ্ব কাঁপছে আহুত আতঙ্কে,আমার আকাশবাড়ি
কাপছে; আমিও কাপছি সীমাহীন উত্তেজনায়,
বজ্রকন্ঠ ভেসে এলো: চেয়ে দেখো সভ্য দূনিয়া
আজ হাজার কোটি নির্যাতীত,নিষ্পেষিত,
বুভুক্ষ মানুষ আমার পিছনে দাড়িয়েছে
তোমাদের বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে,
তোমরা তাদের অধিকার,ইজ্জত হরণ করেছো
কেড়ে নিয়েছো তাদের সন্তানের মুখের গ্রাস,
সভ্য মানুষেরা কান পেতে শোনো ;- তোমাদের
শোষণের ফলে, ঘরে ঘরে আজ কি নিদারুণ
হাহাকার ; অন্ন নাই,বস্র নাই,চিকিৎসার অভাবে
শিশুরা ধুকে ধুকে মরছে,মানবতা আজ তোমাদের
বুটের তলায়, শাসরুদ্ধ হয়ে নি:শেষিত প্রায়
গুমরে কাঁদছে পৃথিবীর সব ঠাই।
তোমাদের শোষণের বিরুদ্ধে আজ আমি
হিমালয়ের প্রত্যয় নিয়ে এখানে দাড়িয়েছি,
তোমরা আমার বুকে গুলি চালাও ; তোমরা
অতীতে ও আমাকে হত্যা করতে পারো নাই
আজও পারবে না। আমি অমৃতেরপুত্র।
ক্ষুধার্ত মানুষের উপর অত্যাচার করার চেষ্টা করো না,
ভালো হবে না।আজ আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে
শিখেছি, আমাদের দমায়ে রাখতে পারবা না।
আমি এশিয়া,আফ্রিকা,লেটিন আমেরিকার
মানুষের অধিকার চাই, আমি বর্ণবাদের অবসান চাই,
চাই বিশ্বের সকল শিশুর সম- অধিকার, খাবার
অধিকার চাই। চেয়ে দেখো সভ্য দূনিয়া; তোমরা
সোমালিয়া,ইথোপিয়া,সুদানের শিশুদের সাথে
কি করেছো,আমি তাদের অধিকার চাই,আর চাই
তাদের বেচে থাকার অধিকার চাই। তারাও মানুষ,
তোমাদের শিশুদের মতো বেচে থাকার অধিকার,
তাদেরও আছে।
শোষণের যাতাকল বন্ধ করো, অন্যের ঘরে আগ্রাসন
নীতি চলতে পারে না ; পরিণাম ভালো হবে না। প্রাচ্য
আজ জেগে উঠেছে, দিকে দিকে আমি আগুনের
স্ফুলিঙ্গ দেখতে পাচ্ছি ; আক্রোশের দাবানলে পুড়ে
একদিন তোমরা ধ্বংস হবে, সে দিন বেশি দূরে নয়।
চেয়ে দেখো আজ আমি একা নই, বিগত শতাব্দীর
সকল মূক্তিকামি নেতা আজ আমার পাশে আছেন।
বিশ্ব- মানবতার মূক্তি আজ আর স্বপ্ন নয়, আমাদের
এবারের সংগ্রাম: এশিয়ার মূক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম:আফ্রিকার মূক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম: লেটিন আমেরিকার মূক্তির সংগ্রাম। বিশ্বের সকল নিপিড়িত মানুষ মূক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।
আমেরিকা- ইউরোপের ভদ্রবেশীদের বলে দিবার চাই
নিপিড়িত দেশ হতে লোলুপ দৃষ্টি ফিরাও, তোমাদের
দিন শেষ, নির্যাতীতরা জেগে উঠেছে, এবার হিসাব
নেয়ার পালা। হাজার কোটি শোষিত মানুষের ক্রোধে
বিস্ফারিত আগুনের লেলিহান শিখা তোমাদের ভস্ম
করবেই, এটাই নিয়তি,ইতিহাসের নিষ্ঠুর পরিশীলন।
জাতীসঙ্ঘের সভায় আমি পরিস্কার ভাষায় বলেছি;
পৃথিবী আজ দূটি পক্ষে বিভক্ত- শোষক আর শোষিত,-
আমি শোষিতের পক্ষে। তোমরা আমাকে হত্যা করেছো
কিন্তু নি:শেষ করতে পারোনি ; আমি আছি এবং থাকবো,যে পর্যন্ত একজন শোষিত মানুষ থাকবে বিশ্বে,
আমাদের যুদ্ধ, শোষকের বিরুদ্ধে,ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে
চলবেই-চলবে। এ লড়াইয়ে জয় আমাদের অনিবার্য।
জয় শোষিত মানুষের জয়,জয় নিপিড়ীতের জয়,জয়
হোক মুক্ত মানুষের, মুক্ত পৃথীবির, বিপন্ন মানবতার।
বজ্রকন্ঠ থেমে গেছে,- সাথে সাথে গগনবিদারি উল্লাশ
জয় শোষিত মানুষের জয়,জয় নিপিড়িত মানুষের জয়,
জয় মুক্তির মহা- নায়কের জয়, জয় মানবতার জয়,
হাজার কোটি মানুষের মিলিত কন্ঠস্বর,বজ্রনিনাদে
কেপে কেপে উঠছে ধরণি বার বার। আমিও কাপছি,
থর থর করে কাপছি, দাড়িয়েথাকা আমি কখন মেঝেতে
বসে পরেছি? বেঘোর চৈতন্য,বিস্ফারিত চোখ, আমি কি
দেখলাম ! যে কন্ঠ আমি শুনেছি তাতো মিথ্যা নয়।
আমি বঙ্গবন্ধুকে দৃঢ় পদক্ষেপে মঞ্চ থেকে নেমে আসতে
দেখলাম,মুখে চিরচেনা বিজয়ীর হাসি। হাত উচু করে
সবার সম্ভাষণ গ্রহন করছেন। এমন দৃশ্য প্রথম যৌবনে
দেখেছি বহুবার; শুধু এত দীর্ঘকায় বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি আর।

বাংলাদেশ সময়: ১১:১০:৩৩   ৭৬৭ বার পঠিত