সোমবার, ১৪ আগস্ট ২০১৭
সুনামগঞ্জে বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্থ
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » সুনামগঞ্জে বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্থ
মোঃ আল আমিন আহমেদ সালমান,সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: গত তিনদিন ধরে টানা বর্ষণে পাহাড়ী ঢলে নেমে আসা পানিতে সুনামগঞ্জের জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। সকাল দশটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত সুনামগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলের বন্যা পরিদর্শনকালে এমন চিত্র ফুটে ওঠে। ধর্মপাশা উপজেলার প্রধান সড়ক ধর্মপাশা থেকে মহিষখলা পর্যন্ত রোডটি বিভিন্ন স্থানে ৭-১০ ইঞ্চি উচ্চতায় পানি গড়িয়ে চলছে।ফলে স্বাভাবিক গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে।উপজেলার বংশীকুন্ডা থেকে তাহিরপুরগামী ট্রলার যোগাযোগটি এখনো চালু থাকলেও যাত্রীর সংখ্যা ব্যাপক হৃাস পেয়েছে।ট্রলার চালক রেহান রেজা জানান,নিয়মিত ট্রলারে প্রায় দেড়শ থেকে দুশো জন যাত্রী আসা যাওয়া করেন কিন্তু গত দুদিনে তা প্রায় ১০ থেকে ২০ জনে নেমে এসেছে।উপজেলার কাউয়ানী গ্রাম থেকে পূর্বদিকে মাকরদি,লামাগাঁও,বীরসিংহ পুর,গোলাবাড়ি,শ্রীপুর,জাঞ্জাল,ভবানীপুর,পাঠাবুকা,মানিকখিলা প্রতিটি গ্রাম পরিদর্শন কালে তাদের সূচনীয় অবস্থায় দেখা গেছে।এসময় গ্রামবাসীদের নৌকায় ঝাউবন,জারমনি বন সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।এক প্রশ্নের জবাবে জহির উদ্দিন নামে পঞ্চাশোর্ধ বয়স্ক এক ব্যক্তি জানান ” এমনিতেই অকাল বন্যায় আমাদের সয়সম্পত্তি ডুবাইয়া নিছে এহন আবার বন্যায় হগলতা(সব) ভাসাইয়া নিতাছে।তাই ঝাউবন দিয়া কোনমতন ঘর বাড়িডা টিহাইয়া(টিকিয়ে) রাহি(রাখি)।” একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে প্রায় তাহিরপুর পর্যন্ত।সরেজমিনে তাহিরপুর পরিদর্শনকালে জনগনের ব্যাপক ভোগান্তির চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে।তাহিরপুরের ট্রলার ঘাটটি প্রায় তিনফুট পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে।তাছাড়া তাহিরপুর থেকে সুনামগঞ্জগামী একমাত্র রাস্তাটি স্থানে স্থানে ভেঙ্গে গেছে।আনোয়ারপুর থেকে পূর্বদিকে আধা কিলোমিটারের ভিতরে প্রায় তিনটি ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে।ফলে যাত্রীরা এসব স্থান ১০ টাকা ভাড়ায় বারকি ট্রলার দিয়ে পার হচ্ছে।আবার শক্তিয়ারখলা বাজারের ১ কিলোমিটার পূর্বে ১০০ মিটার দীর্ঘ পুল থেকে আধা কিলোমিটার রাস্তা প্রায় দুই থেকে আড়াইফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।এর একটু পূর্বেই আবারো আধাকিলোমিটার রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।তাই পুল থেকে যাত্রীরা বারকি ট্রলারে ২ কিলোমিটার রাস্তা ২০ টাকা দিয়ে পাড় হচ্ছে।এসময় যাত্রীদের মাঝে ভাড়া নিয়ে চরম অসন্তোষ লক্ষ করা গেছে।এদিকে মহিষখলা থেকে সুনামগঞ্জের একমাত্র রোডটি ও স্থানে স্থানে নিমজ্জনের স্বীকার হয়েছে।বাকাতলা গ্রামের ২ কি.মি. পূর্ব থেকে বাগলী পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তা প্রায় তিন ফুট পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।তাছাড়া চড়াগুলোতেও অত্যাধিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।টেকের ঘাট নিলাদ্রি লেক এলাকাতেও রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।চাঁনপুর থেকে বাদাঘাট যেতে প্রায় ১ কি.মি. রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে।সুনামগঞ্জ জেলা শহরেও অনেকাংশ পানিতে নিমজ্জনের চিত্র লক্ষ করা গেছে।জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা ও একই রকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্যতার খবর পাওয়া গেছে।এ পর্যন্ত প্রাথমিক সহ স্কুল, কলেজ মিলিয়ে জেলার প্রায় একহাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ পাঠদান বন্ধ রয়েছে।জানতে চাইলে বাংলাদেশ কবিসভা সিলেট জেলাশাখার সহসভাপতি, বংশীকুন্ডা সাহিত্য সংসদের সভাপতি, বিশিষ্ট লেখক ও কবি জীবন কৃষ্ণ সরকার বলেন-” এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যে আমরা হাওর এলাকায় জন্মেছি।আমাদের ছেলে-মেয়েদের এভাবে প্রকৃতির সাথে লড়াই করেই পড়াশোনা করতে হয়।এতে হতাশ হলে চলবেনা।দূঃখজনক যে,বছর বছর সরকার রাস্তা-কালভার্ট নির্মানে যথাযত বরাদ্ধ দিলেও কতিপয় আমলা ও কর্মকর্তাদের লাগামহীন দূর্নীতির কারনেই আজকে জনগনের এমন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।” রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি অবনতির দিকেই রয়েছে।তবে আগের চেয়ে পানি বৃদ্ধি কিছুটা হৃাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৫:৫০ ৯১৯ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম #সারাদেশ