সোমবার, ১৪ আগস্ট ২০১৭

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে উকিল নোটিশ

Home Page » জাতীয় » সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে উকিল নোটিশ
সোমবার, ১৪ আগস্ট ২০১৭



ফাইল ছবি
বঙ্গ-নিউজ:  সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় নিয়ে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বি এম সুলতান মাহমুদ গতকাল রবিবার এ নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশে বলা হয়, বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নোটিশে বলা হয়েছে, “আপনি (বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক) সাবেক প্রধান বিচারপতি। আপনার বক্তব্যের জুডিশিয়াল মূল্য রয়েছে। আপনি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ‘হেডমাস্টার’ ও অপরাপর বিচারপতিকে ‘ছাত্র’ বলে অভিহিত করেছেন, যা আমাকে মর্মাহত করেছে। ” নোটিশে বলা হয়, ‘সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক। এটা জানার পরও আপনি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ববহির্ভূতভাবে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের সমালোচনা করেছেন। বর্তমান প্রধান বিচারপতি ও বিচার বিভাগ নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আপনি নিজে রায় দিয়ে জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা রেখে দিয়েছেন। অথচ এ বিষয়ে আপনি বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়ে অসততার পরিচয় দিয়েছেন।

‘ নোটিশে বলা হয়, ‘সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী-সংক্রান্ত রায় ঘোষণা করে আপনি বলেছিলেন যে আরো দুই মেয়াদে এ ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু আপনি এর পূর্ণাঙ্গ রায়ে তা বাদ দিয়ে জুডিশিয়াল ক্রাইম করেছেন। তাই আপনাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ‘
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী বলে গত ৩ জুলাই রায় দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এ রায় দেন। এর পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশিত হয়। এরপর ৯ আগস্ট বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এক সংবাদ সম্মেলন করে রায়ের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী-সংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায় অপরিপক্ব ও পূর্বধারণাপ্রসূত।

বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করায় বিচারকদের জবাবদিহি রইল কোথায়? কারণ জনগণের কাছে তো জবাবদিহি থাকছে না। এখন আমার মনে হচ্ছে ‘উই আর নো লংগার ইন পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ, উই আর র্যাদার ইন দ্য জাজেস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। ‘ তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালের আদি সংবিধানে বিচারপতি অপসারণক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল। তখনো আমরা জানতাম বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল না থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে না। ‘ তিনি আরো বলেন, ‘আইন করার ক্ষমতা সংসদের। আইন করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের নেই। ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পর পঞ্চদশ সংশোধনীতে যে ৯৬ অনুচ্ছেদ ছিল সেটি সংসদকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। কিন্তু তা না করে সুপ্রিম কোর্ট রায়ের মাধ্যমে এটিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। এটি কিভাবে সম্ভব?’

বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মতো একটি অস্বচ্ছ ও অস্পষ্ট পদ্ধতির কাছে না থেকে সংসদের হাতে থাকলে অনেক ভালো হতো। ‘ তিনি বলেন, অষ্টম সংশোধনী মামলায় আদি সংবিধানের বিধানকে বহাল করা হয়েছে। এরপর পঞ্চম, ১৩তম, সপ্তম সংশোধনীর মামলায়ও আদি সংবিধানের বিধানকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম আদি সংবিধানের বিধানকে সংসদ আনতে চেয়েছে, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আনতে দেয়নি।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল বিষয়ে সব বিচারপতিই একমত হয়েছেন। এ রায়ে সংবিধানের ১১৬ নম্বর অনুচ্ছেদ সংবিধান পরিপন্থী বলা হয়েছে। রায়ে দেশে আরো দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা, জাতীয় সংসদ, নির্বাচন কমিশন, গণতন্ত্র, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি বিষয়ে অভিমত দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারি দলের পক্ষ থেকে এ রায়ের তীব্র সমালোচনা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে। সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাত্ করে আওয়ামী লীগ কী চাচ্ছে তা জানিয়ে দিয়েছেন। তবে বিএনপি এ রায়কে স্বাগত জানিয়ে সরকারের পদত্যাগ চেয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৫:৩১   ৬৬৩ বার পঠিত