শনিবার, ১২ আগস্ট ২০১৭

বিয়ের আশ্বাসে বিদেশ থেকে এনে নারীকে গণধর্ষণ:ফেসবুকে বন্ধুত্ব

Home Page » জাতীয় » বিয়ের আশ্বাসে বিদেশ থেকে এনে নারীকে গণধর্ষণ:ফেসবুকে বন্ধুত্ব
শনিবার, ১২ আগস্ট ২০১৭



প্রতীকি ছবি
বঙ্গ-নিউজ: পাঁচ বছর ধরে জর্ডানের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন এক নারী (২৮)। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় মাসুদ রানা ওরফে জুয়েল মিয়ার সঙ্গে। জুয়েল মিয়া নিজেকে সিঙ্গাপুর প্রবাসী বলে পরিচয় দেয়। ফেসবুকে সম্পর্কের বছরখানেক পার হলে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ওই নারীকে দেশে আনা হয়। তারপর বিয়ের কথা বলে এলাকায় এনে গণধর্ষণ করা হয়। বীভৎস এই ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে। শুক্রবার বিকেলে গণধর্ষণের অভিযোগ এনে ওই নারী ৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরও তিনজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

ওই নারীর বাড়ি গোপালগঞ্জে। সাত বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের দু’বছর পর স্বামী মারা যান। এরপর তিনি ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। পাঁচ বছর আগে পোশাক কারখানার চাকরি নিয়ে চলে যান জর্ডান। বছর খানেক আগে ফেসবুকে পরিচয় হয় মাসুদ রানা ওরফে জুয়েল মিয়ার সঙ্গে। জুয়েলের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে রাজীবপুর ইউনিয়নের উজানচর নওপাড়া গ্রামে। সে ওই গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। সে দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুর থাকার পর দেশে ফিরেছে বলে জানায় ওই নারীকে। ফেসবুক ও মুঠোফোনে ওই নারীকে বিয়ের কথা বলে জুয়েল। পরিবারের সদস্য সাজিয়ে অন্য কারও সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলিয়ে বিশ্বাস অর্জন করে।

এমন পরিস্থিতিতে গত ৬ জুলাই জর্ডান থেকে দেশে ফেরেন ওই নারী। ওঠেন ঢাকায় ভাইয়ের বাসায়। সেখানে জুয়েল তার এক বন্ধু সজীব ওরফে সাঈদকে নিয়ে দেখা করে ওই নারীর সঙ্গে। পরে ওই নারী চলে যান গোপালগঞ্জে। বিধবা ওই নারীকে বিয়ে করতে রাজি জুয়েল এ কথা পরিবারের সদস্য সাজিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে বলানো হয়। পরে ওই নারীকে বিয়ের কথা বলে তার বোনকেসহ গত রোববার ঈশ্বরগঞ্জে নিয়ে আসে জুয়েল।

ওইদিন গোপালগঞ্জ থেকে ঈশ্বরগঞ্জ পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সেখান থেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মাসুদ রানা ওরফে জুয়েল মিয়া ও তার সহযোগী সজীব ওরফে সাঈদ তাদের সিএনজিতে তোলে। কিন্তু ওই নারীদের বাড়িতে না নিয়ে নেওয়া হয় উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের লাটিয়ামারি এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের কাছে। সেখানে পৌঁছলে আগে থেকে অপেক্ষা করা আরও কয়েকজন মিলে ওই নারীর বোনকে বেঁধে দূরে সরিয়ে নেয়। আর ওই নারীকে রাতভর পালা করে ধর্ষণ করা হয়। জুয়েল ও তার সহযোগীরা ওই নারীর সঙ্গে থাকা কয়েক ভরি স্বর্ণালঙ্কারও নিয়ে যায়। কাউকে কিছু জানালে হত্যা করে ব্রহ্মপুত্র নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়ে ভোররাতে স্থানীয় লাটিয়ামারি বাজারে রেখে সটকে পড়ে জুয়েল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। পরে ওই দুই নারী স্থানীয় ইউনিয়নের জাতীয় পার্টির সভাপতি আক্তারুজ্জামান শরাফতের বাড়িতে আশ্রয় নেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম মুদাব্বিরুল ইসলাম জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে শুক্রবার বিকেলে নির্যাতিত ওই নারী তার এক চাচাকে নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় জুয়েল মিয়া, আবু সাইদ, আজমল, নাসির উদ্দিন, বোরহান উদ্দিন, আবদুল মজিদ, কামাল হোসেন, রিপন মিয়া ও মোরশেদ মিয়াকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাদের মধ্যে রিপন মিয়ার বাড়ি নান্দাইল ও মোরশেদ মিয়ার বাড়ি গফরগাঁও এলাকায়। বাকিদের সবার বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জের উজানচর গ্রামে।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি বদরুল আলম খান বলেন, ওই নারীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরই মামলা নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ৮:২১:৪৭   ৪২৭ বার পঠিত