শুক্রবার, ১১ আগস্ট ২০১৭

‘গান্ধীর’ সেই জোর কোথায়?

Home Page » জাতীয় » ‘গান্ধীর’ সেই জোর কোথায়?
শুক্রবার, ১১ আগস্ট ২০১৭



মা সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে রাহুলবঙ্গ-নিউজঃ ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও নেহরু-গান্ধী পরিবার স্বাধীনতার ৭০ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিধানসভা নির্বাচনে একের পর এক ভরাডুবির পর কংগ্রেস নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে। সর্বশেষ দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারের পর দলটির অবস্থান তলানির দিকে পড়েছে বলে কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।বলা হচ্ছে, ভারতে নেহরু-গান্ধীর পরিবারের নাম কেনার বিষয়টি কি পড়তির দিকে? ভারতের রাজনীতিতে গান্ধী পরিবারের যে ব্র্যান্ডনেম রয়েছে, ওতে কি আর কাজ হচ্ছে না?

গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি-সমর্থিত প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন কংগ্রেস-সমর্থিত প্রার্থী। এ জয়ের অর্থ হলো প্রথমবারের মতো ভারতের শীর্ষ তিনটি পদ এখন বিজেপির দখলে। গত মাসে দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দ ভোটের লড়াইয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ প্রার্থী মীরা কুমারকে হারিয়েছেন।

এটি কংগ্রেসের জন্য একটি সংকট তৈরি করেছে এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যাপারে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে। বিশেষ করে প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নাতি ৪৭ বছর বয়সী রাহুল গান্ধীর ক্ষেত্রে। দলটির সহসভাপতি রাহুলের এ অবস্থার শুরু ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন দিয়ে। তাঁর ব্যাপক প্রচারণার পরও কংগ্রেস মাত্র ৪৪টি আসন পায়। দলটির ভোটের রাজনীতির ঐতিহাসিক এ হারের পর রাজ্য নির্বাচনগুলোতে একের পর এক পরাজয়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে দলটি।

গুজরাটে রাহুলের ওপর হামলার পর কংগ্রেস নেতাদের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপিওয়াশিংটন-ভিত্তিক কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস থিংক-ট্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মিলান বৈষ্ণবের মতে কংগ্রেস এখন দুটি বড় সমস্যার মধ্য পড়েছে। প্রথমত, নেতৃত্বের অভাব; দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতের জন্য সংহতিপূর্ণ উচ্চাকাঙ্ক্ষা দৃষ্টিভঙ্গির অনুপস্থিতি।

মিলান বৈষ্ণব বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের ফলাফলের দুর্বলতাগুলোর ব্যাপারে দলটির কোনো উন্নতি হয়নি। বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দল হিসেবে কংগ্রেস ভবিষ্যতে আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে।’

যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তারপরও গত সপ্তাহে রাজ্যসভায় সর্ববৃহৎ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বিজেপি, যা ঘটল ছয় দশকের পরে। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মোদির হাতকে আরও শক্তিশালী করতে পারবেন। কারণ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। আগের জন ছিলেন কংগ্রেসের।

ভারতের ৭০ বছরের ইতিহাসে ৫০-এর বেশি সময় ধরে দেশটি শাসন করেছে কংগ্রেস; এর অধিকাংশই নেহরু ও তাঁর বংশধরদের হাতেই ছিল শাসনভার। নেহরু, তাঁর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী ও নাতি রাজিব গান্ধী ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে হতাশজনক ফলাফলের পর থেকে তথাকথিত ‘প্রকৃতিগতভাবে জন্ম নেওয়া নেতাদের’ দলে বহিরাগত বা আগন্তুকের মতোই দেখেছে। ইতালিতে জন্ম নেওয়া রাহুলের মাও সোনিয়া গান্ধীও এগিয়ে আসতে পারছেন না। ৭০ বছর বয়সী রাজীবের বিধবা স্ত্রী সোনিয়া মাঠে নেমেও এ বছরের মার্চে উত্তর প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় নির্বাচনে পরাজিত হয় কংগ্রেস জোট।

মুম্বাইভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং স্বরাজের সম্পাদকীয় পরিচালক আর জগন্নাথন এএফপিকে বলেন, ‘আজ এই সময় এসে অতীতের দিকে ধাবিত হচ্ছে, পরিবারের দলকে (কংগ্রেস) যতটুকু প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি দলের প্রয়োজন পরিবারকে।’

জগন্নাথন আরও বলেন, ‘আমি মনে করি গান্ধীজির নামটির এখন আর সেই ‘‘বিক্রিয় মূল্য” নেই। রাহুলের মায়ের রাজনীতিতে আগ্রহ আছে, রাহুলকে ঠিক ততটা আগ্রহী মনে হয় না…তিনি (রাহুল) নেতৃত্বের জন্য অনুপযুক্ত।’

গত মাসে বিহারের রাজ্য রাজনীতিতে মধ্যস্থতা করতে ব্যর্থ হন রাহুল গান্ধী। আর এই সুযোগে সেখানে ক্ষমতার অংশ হয়ে যায় বিজেপি। আর বিহারের এ অবস্থার কারণে তাঁর (রাহুল) দলীয় আনুগত্যও সন্দেহের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

জগন্নাথন পরামর্শ দেন, একসময় প্রভাবশালী এই পরিবারকে ‘সত্যিকারের তৃণমূল নেতাদের’ জন্য পথ তৈরি করে দিতে হবে। কিন্তু ওয়াশিংটন-ভিত্তিক আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সদানন্দ দুম মনে করেন, নেতৃত্বের পরিবর্তন সমস্যাযুক্ত ব্যাপার হবে।

সদানন্দ দুমে বলেন, ‘তত্ত্ব অনুযায়ী নেহরু-গান্ধী বংশের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত কংগ্রেসের। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে, পরিবারটি একসঙ্গে দলকে ধারণ করে আছে। এ থেকে না বের হতে পারলে কংগ্রেসের সামনের পথ আরও কণ্টকাকীর্ণ হবে।’

রাহুলের দিকে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা তাকিয়ে থাকলেও তিনি সেভাবে দলকে এগিয়ে নিতে পারছেন না। ছবি: এএফপিরাহুলের ছোট বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকেই বেশির ভাগই লোকই একজন বিকল্প নেতা হিসেবে দেখেন। কিন্তু স্বামী রবার্ট ভদ্রের সম্পত্তি-সংক্রান্ত বিতর্ক এবং দলে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে তিনি আবার ততটা আগ্রহী নন।

২৯টি রাজ্যর মধ্য ১৮টির ক্ষমতায় এখন বিজেপি বা তার মিত্ররা। আর অন্যগুলোর দিকেও দৃষ্টি তাদের।

দুমে বলেন, রাজ্যসভায় প্রায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। বিজেপির নিয়ন্ত্রণ পেলে যেকোনো অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারবেন মোদি।

রাজনৈতিক শূন্যতার মাঝে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারকে একসময় মোদির জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করা হতো। এখন সেই নিতীশ কুমার বলছেন, আগামী অর্থাৎ ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে মোদির বিজয় হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩:৩০:১১   ৭১৩ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #