সোমবার, ৭ আগস্ট ২০১৭

লালমনিরহাটে স্বামীর দায়ের কোপে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে দুই সন্তানের জননী মোর্শেদা বেগম।

Home Page » বিবিধ » লালমনিরহাটে স্বামীর দায়ের কোপে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে দুই সন্তানের জননী মোর্শেদা বেগম।
সোমবার, ৭ আগস্ট ২০১৭



 মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে দুই সন্তানের জননী মোর্শেদা বেগম

বঙ্গ নিউজঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম। হাতীবান্ধা থানা প্রতিনিধি :নেশার টাকা দিতে না পারায় লালমনিরহাটে এক মাদকাতাসক্ত স্বামীর দায়ের কোপে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে দুই সন্তানের জননী মোর্শেদা বেগম (২৪) নামে এক গৃহবধূ। বর্তমানে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের ৩য় তলার মহিলা বেডে মৃত্যু যন্ত্রনায় দিন কাটছে ওই গৃহবধূর।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আদিতমারী উপজেলার শাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের খাতাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মাদকাসক্ত স্বামীর নাম তোজাম্মেল হক সে একজন ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি এবং খাতাপাড়া এলাকার মোকছেদ আলীর ছেলে।
আহত গৃহবধূ মোর্শেদা বেগম জানায়, আদিতমারী উপজেলার শাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের খাতাপাড়া এলাকার মোকছেদ আলীর ছেলে তোজাম্মেলের সাথে প্রায় ৭/৮ বছর আগে তার বিয়ে হয়।
বিয়ের পর তাদের দিন ভালই চলছিল। এরমধ্যে মোর্শেদার কোল জুড়ে একটি মেয়ে ও একটি পুত্র সন্তান আসে। বর্তমানে তাদের মেয়ের বয়স ৮ বছর ও ছেলের বয়স ৩ বছর। ছেলে-মেয়ে যত বড় হতে তোজাম্মেল ততই নেশায় আসক্ত হতে থাকে। এক সময় তোজাম্মেল নেশার টাকা না পেয়ে তার স্ত্রী মোর্শেদাকে তার বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলে। মোর্শেদা বলে আমার বাবা একজন দিন মূজুর সে টাকা পাবে কোথায়? তাই সে টাকা আনতে পারবে বললে প্রতিদিন তার উপরে স্বামীর শারীরিক নির্যাতন চলতে থাকে। এক সময় তোজাম্মেল পুরোপুরি নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে।
এর আগে বিয়ের পর পরই তোজাম্মেল ও মোর্শেদা দুজনের সম্মতিতে রমজান আলী পঁচা নামে ৫/৬ বছরের একটি ছেলেকে দত্ত্যক নেয় তারা। বর্তমানে পঁচার বয়ষ ১৫/১৬। পঁচাকে তারা ছেলে হিসেবেই বড় করে তোলে এবং শাপ্টিবাড়ি বাজারে একটি ইলেক্ট্রিক দোকান ধরে দেয় মোর্শেদা।
স্বামীর এহেন নির্যাতন ও অত্যাচার ছেলে পঁচার সাথে আলোচনা করা করাই হলো মোর্শেদার আরও বড় অপরাধ। এসময় খাতাপাড়া এলাকার তমিজ উদ্দিন নামে এক বখাটের ওই সময় কু-নজর পড়ে তোজাম্মেলের স্ত্রীর উপর। স্বামী যখন নেশা করতে বাহিরে চলে যায় সেই তমিজ বিভিন্ন অজুহাতে তার বাড়িতে গিয়ে মোর্শেদাকে কু-প্রস্তাব দেয়। তমিজ মোর্শেদাকে বলে তার প্রস্তাবে রাজি না হলে তাদের সংসারে অশান্তি লাগিয়ে দেবে। ওই লম্পট তমিজ তার স্বামী তোজাম্মেলের খুব কাছের বন্ধু এবং তার টাকা দিয়েই নেশা করতো। এক সময় তোজাম্মেল যখন নেশার টাকা যোগার করতে পারতো না সেই সময় তোজাম্মেলের মন-মেজাজ এমনিতেই খারাপ থাকতো তার উপর তমিজ উদ্দিন তোজাম্মেলকে তার স্ত্রী সম্পর্কে বিভিন্ন কুৎসা রটাতে থাকে। এক সময় তার স্ত্রী পঁচার সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত থাকে বলেও তমিজ তার স্বামীর নিকট বিভিন্ন মিথ্যা কথা বলতে থাকে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তোজাম্মেল বাড়িকে এসে দেখে তার স্ত্রী মোর্শেদা মোবাইলে কার সাথে যেন কথা বলছে। এসময় দৌড়ে স্ত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে দেখে তার স্ত্রী তাদের পোশ্য সন্তান পঁচার সাথে কথা বলছে। এর পরপরই সে তার স্ত্রীকে বেদম মারপিট করতে থাকে। স্বামীর এহেন প্রহার সহ্য করতে না পেরে মোর্শেদা তার স্বামীর পা ধরে বলে আর কোন দিন পঁচার সাথে কথা বলবে না। এবারের জন্য তাকে যেন ক্ষমা করে দেয়। তারপরেও রেহাই মেলেনি মোর্শেদার। এক সময় তোজাম্মেল তার স্ত্রী মোর্শেদাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। উপায়ন্তর না পেয়ে মোর্শেদা স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফিজুলের বাড়িতে আশ্রয় নেয় এবং তার নিকট বিচার প্রার্থনা করেন। তখন ইউপি সদস্য হাফিজুল স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সাথে আলোচনা করে পরদিন শুক্রবার বিকেলে শালিস বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসার সিদ্ধান্ত নেন।
পরদিন শুক্রবার বিকেলে শালিস বৈঠক বসলে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সেখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য তোজাম্মেলকে ডাকা হয়। কিন্তু সে শালিস বৈঠকে না এসে তাদেরকে গালিগালাজ করেন এবং বলেন আমি তোমাদের বিচার মানি না। পরে বৈঠকে সর্ব সম্মতিক্রমে মোর্শেদাকে আবারও তার স্বামীর গৃহে রেখে আসা হয়।
বিষয়টি জানতে সন্ধ্যায় তোজাম্মেল বাড়িতে এসে মোর্শেদাকে দেখতে পেয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাংস কাটা চাপাতি দিয়ে মোর্শেদাকে মারতে যায়। মৃত্যু ভয়ে মোর্শেদা পাশের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপরেও তোজাম্মেল চাপাতি দিয়ে দরজ াকেটে ভিতরে প্রবেশ করে তার মাথায় কোপ মারে। জীবন বাঁচাতে মোর্শেদা তার বাম হাত উচিয়ে দিলে হাতের হাড়সহ রগ কেটে যায়।
এসময় মোর্শেদার আত্মচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। তার হাতের হাড়ে চিড় ও রগ কেটে প্রচুর রক্তক্ষরনের কারনে বর্তমানে হাসপাতালের ৩য় তলার মহিলা বেডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। বর্তমানে মোর্শেদার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু তার বাবা একজন দিনমজুর হওয়ায় তার পক্ষে টাকা যোগার করাও সম্ভব হচ্ছে না মেয়ের উন্নত চিকিৎসা করার। তাই মৃত্যু যন্ত্রনায় হাসপাতালের বেডে দিন কাটছে মোর্শেদার।
মোর্শেদার মা কান্না জড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গরীব মানুষ বলেই আমাদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার হচ্ছে। আমাদের মতো গরীব মানুষের দেখার যেন এদেশে কেউ নেই। কিন্তু কেন এখনও আইনের আশ্রয় নেয়া হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যেখানে মেয়ের চিকিৎসার জন্য টাকা যোগার করতে পারছি না, সেখানে আবার মামলা করবো কিভাবে।
এ ব্যাপারে মোর্শেদার স্বামী তোজাম্মেলের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি। উল্টো সাংবাদিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন।

বাংলাদেশ সময়: ৯:১২:১২   ৬৯৬ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #  #