মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০১৭
ভাড়াটে কনসালটেন্টদের প্রেসক্রিপশনে শিক্ষা নয় - শাহেদ কায়েস
Home Page » পড়ালেখা ও সাজেশন্স।। » ভাড়াটে কনসালটেন্টদের প্রেসক্রিপশনে শিক্ষা নয় - শাহেদ কায়েস
বাংলাদেশ ও ভারতে পড়াশুনা করার সুযোগ হয়েছে আমার। এই দুই দেশের শিক্ষা পদ্ধতি যে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ পদ্ধতিতে গড়ে ওঠা কেরানি তৈরির শিক্ষা পদ্ধতি, সেটা আমি খুব ভালো করেই বুঝেছি। তারপরেও যারা এই শিক্ষা পদ্ধতিতে ভালো করছেন দেশ-বিদেশে (শুধুই সনদে না, জ্ঞানে) তাঁরা অনেকটাই নিজেদের চেষ্টায় এর বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসছেন। গত এক বছর যাবত আমি কোরিয়ান শিক্ষা পদ্ধতিতে পড়াশুনা করছি, যা (উচ্চ শিক্ষা) যতোটা কোরিয়ান, তার চেয়ে অনেক বেশি আমেরিকান। যেহেতু সরাসরি শিক্ষা বিষয়ক কাজের সাথে যুক্ত আছি অনেক বছর, এটা বুঝেছি ফিনল্যান্ডের বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি অনেক সৃষ্টিশীল। এছাড়া শিক্ষার্থীদের উপর চাপ প্রয়োগ না করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ফিনল্যান্ডের শিক্ষা পদ্ধতি যে বিশ্বে প্রথম সারির, সেটা এখন প্রমাণিত সত্য।
শিক্ষা তো আর জীবনের বাইরে কিছু না, পাশ-ফেলের কাহিনী সব দেশের শিক্ষায় আছে (যদিও ফিনল্যান্ডে ১৮ বছরের আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কোন পরীক্ষা নাই), কিন্তু আমাদের দেশের মত ইতরামি নাই; ইচ্ছে হল (নোংরা-রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য) সিস্টেম করে, গ্রেজ দিয়ে শতভাগ পাশ দেখাইলাম, ইচ্ছে না হলে ফেলের বন্যা বওয়াইয়া দিলাম, নিজ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে এমন নষ্টামি, এমন জুয়াখেলা দুনিয়ার কোন দেশেই নাই। এছাড়া আমাদের দেশের মত পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে শিক্ষার নামে শিশুদের মানসিক নির্যাতন করা হয় না। আমরা এমনই এক শিক্ষা পদ্ধতি, সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণ করেছি যে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সামান্য ফেল করার জন্য শিশুরা আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার নামে যে শিক্ষা পদ্ধতি চালু আছে, তা স্রেফ ঔপনিবেশিক দাস-মানসিকতা তৈরির শিক্ষা, এবং শিশুদের উপর এক ধরণের নিপীড়ন।
জীবনের সবচেয়ে মধুর সময় হচ্ছে শৈশব! মানুষ আজীবন তাঁর হৃদয়ে শৈশবকে লালন করে। এই শৈশব সমগ্র জীবনের তুলনায় খুবই সামান্য সময়। অথচ রাষ্ট্র দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই শিশুদের স্বাভাবিক শিক্ষার আনন্দ থেকে বঞ্চিত করছে, নিপীড়নমূলক শিক্ষা পদ্ধতি চাপিয়ে দিয়ে ধ্বংস করছে আমাদের শিশুদের শৈশব এবং সৃজনশীলতা!
ভাড়াটে কনসালটেন্টদের প্রেসক্রিপশনে শিক্ষার নামে আমাদের শিশুদের গিনিপিগ বানানোর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র বন্ধ হোক। বাংলাদেশে পাশ-ফেল-জিপিয়ে সর্বস্ব (যেখানে জ্ঞান অর্জন এবং শিক্ষা-আনন্দ মুখ্য না) শিক্ষা পদ্ধতির নামে শিশু-নির্যাতনের জন্য, শিশুদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রীসহ, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবগুলোর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়া উচিৎ।
বাংলাদেশের শিক্ষা পদ্ধতির দ্রুত সংস্কার হওয়া উচিৎ। রাষ্ট্র, অভিভাবক ও শিক্ষকদের শিশু নির্যাতনমূলক শিক্ষা পদ্ধতি থেকে বের হয়ে এসে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা উচিৎ।
●
২৫ জুলাই ২০১৭
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৮:৫৭ ৪৬৪ বার পঠিত