মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০১৭
বহুত্ববাদিতা ও সহনশীলতাই ভারতের অন্তরাত্মা-প্রণব মুখার্জি
Home Page » প্রথমপাতা » বহুত্ববাদিতা ও সহনশীলতাই ভারতের অন্তরাত্মা-প্রণব মুখার্জি
বঙ্গ-নিউজঃ দীর্ঘ এক ধারাবাহিকতার অবসান ঘটতে চলেছে আজ থেকে। আজ মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই থেকে প্রণব মুখার্জি আর কোনো দিন কোনো সরকারি ফাইলে সই করবেন না। ৪৪ বছর ধরে যা করে আসছিলেন তিনি। আর কোনো দিন সরকারি কোনো অফিসারের কাছ থেকে কোনো ব্রিফও নেবেন না। আজ থেকেই শুরু তাঁর অবসরকালীন জীবন।
আজই ভারতের চতুর্দশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের পর রামনাথ কোবিন্দ প্রথা অনুযায়ী বিদায় জানাবেন ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে। প্রয়াত স্ত্রী শুভ্রার একটি ছবি নিয়ে রাইসিনা হিলস থেকে ১০ রাজাজি মার্গের সরকারি নিবাসে গিয়ে উঠবেন প্রণব মুখার্জি। শুরু হবে তাঁর অখণ্ড অবসর।
রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন যা কিছু উপহার প্রণব মুখার্জি পেয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী সবকিছুই ছেড়ে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ভবনে। নিয়ে যাচ্ছেন শুধু উপহার পাওয়া বইগুলো। এক মাস ধরে রাজাজি মার্গের দোতলা বাড়ির একতলায় দুটি ঘরের ভেতরকার দেয়াল ভেঙে তৈরি হয়েছে তাঁর পাঠাগার, আক্ষরিক অর্থেই যা হতে চলেছে তাঁর বার্ধক্যের বারানসি। বইয়েই ডুবে থাকবে তাঁর বাকি জীবন। রাজনীতি, সরকারি কাজকর্ম ও বই-এই ছিল তাঁর জীবন। বইয়ের প্রতি প্রেম তাড়িয়ে বেড়িয়েছে বলেই রাষ্ট্রপতি ভবনের অমূল্য গ্রন্থাগারকে তিনি দিতে পেরেছেন এক অনন্য চরিত্র। তৈরি করেছেন এক অসামান্য মিউজিয়াম। দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেই যোগ্য বাঙালি স্থপতি সরোজ ঘোষকে, কলকাতার সায়েন্স সিটি
যাঁর তৈরি। সেই মিউজিয়ামে থরে থরে যেমন সাজানো রয়েছে রাষ্ট্রপতিদের প্রাপ্য ১১ হাজারের বেশি উপহারসামগ্রী, তেমনই রাখা হয়েছে এই প্রাসাদ তৈরির ইতিহাস, তার নকশা, পুরোনো আসবাব। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে যা তিনি গড়ে দিয়ে গেলেন, তা আগামী দিনের সম্পদ বলেই গণ্য হবে। সেই মিউজিয়ামে প্রণব মুখার্জি দিয়ে গেছেন তাঁর ব্যবহৃত ও উপহার পাওয়া ৫০০ পাইপ, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান তাঁকে যা উপহার দিয়েছেন।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া শেষ ভাষণে প্রণব মুখার্জি রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর ওপর আস্থা ও ভরসার জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তাঁর ভাষায়, ‘দেশকে যা দিয়েছি, পেয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি। এ জন্য ভারতের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা অশেষ।’ পাঁচ বছর আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশের সংবিধানকে সুরক্ষা ও সমুন্নত রাখার শপথ নিয়েছিলেন তিনি। দায়িত্ব পালনের সময় প্রতিদিনই নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ ছিলেন। কতটা সফলভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন, সেই মূল্যায়নের ভার তিনি ছেড়ে দিলেন সময় আর ইতিহাসের হাতে। গত ৫০ বছরের জীবনে তাঁর কাছে মন্দির ছিল ভারতের সংসদ আর ব্রত ছিল জনগণের সেবা। প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘বহুত্ববাদিতা আর সহনশীলতাই হচ্ছে ভারতের অন্তরাত্মা।’ দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের অখণ্ডতার মূলে যে বহুত্ববাদিতা চরিত্র আর সহিষ্ণুতা, শেষ দিনে সেটা আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি ভবনের শেষ রজনীতে প্রণব মুখার্জি প্রথানুযায়ী নৈশভোজ দিলেন গতকাল সোমবার। উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি সস্ত্রীক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সব সদস্য সেই নৈশভোজে আমন্ত্রিত ছিলেন। শুতে শুতে রাত যতই হোক, খুব ভোরেই ঘুম ভাঙে তাঁর। মঙ্গলবারও ভোরেই উঠবেন তিনি। অভ্যাসমতো হয়তো হাঁটতেও বেরোবেন। তারপর তৈরি হয়ে উপস্থিত হবেন সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের পর রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে নতুন রাষ্ট্রপতিকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেওয়ার পর বিদায়ী রাষ্ট্রপতির ছুটি। এরপর প্রণব মুখার্জিকে তাঁর রাজাজি মার্গের সরকারি বাসভবনে ছেড়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে ফিরে আসবেন রামনাথ কোবিন্দ। শুরু হবে তাঁর ইনিংস।
আর গাদা গাদা বই ও রাশি রাশি স্মৃতি হবে প্রণব মুখার্জির অবসরের সঙ্গী। সরকারি নিয়মে সাবেক রাষ্ট্রপতির স্বাচ্ছন্দ্যের কোনো অভাব রাখা হয় না। এই প্রথম সময়ের অভাব তাঁকে বিচলিত করবে না। রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাবলি নিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁর বই প্রকাশিত। ইচ্ছে আছে রাষ্ট্রপতির জীবনের স্মৃতিও ইংরেজিতে লিখে ফেলার। আর চান বাংলায় একটা আত্মজীবনী লিখতে। কিন্তু বীরভূম জেলার কীর্ণাহারের ‘পল্টু’ থেকে দেশের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি হওয়ার এই দীর্ঘ যাত্রাপথ আত্মজীবনী হিসেবে প্রকাশে কিছুটা দ্বিধা তাঁর এখনো রয়েছে। রয়েছে বেশ কিছু সংশয়। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে প্রতিদিন যে ডায়েরি তিনি লিখে গেছেন, তিনি চান, তাঁর চলে যাওয়ার সঙ্গে সেই ডায়েরিও যেন লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। ঘনিষ্ঠ মহলে প্রণব মুখার্জির মন্তব্য, ‘কিছু সত্য অজানা থাকাই ভালো।’
তবে রাষ্ট্রপতি হিসেবেও তো তাঁর নিত্য ডায়েরি লেখায় খামতি ছিল না। সেই ডায়েরির মালিক তিনি করে যাচ্ছেন কন্যা শর্মিষ্ঠাকে। তাঁকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি ভবনে লেখা ডায়েরি ‘ডিজিটালাইজড’ করে ফেলতে। ভবিষ্যতে যাতে তা গবেষণার কাজে লাগতে পারে
বাংলাদেশ সময়: ৯:০১:২৭ ৪৪৮ বার পঠিত