শনিবার, ২২ জুলাই ২০১৭

জীবন থেকে একটুখানী- রোকসানা লেইস

Home Page » সাহিত্য » জীবন থেকে একটুখানী- রোকসানা লেইস
শনিবার, ২২ জুলাই ২০১৭



 রোকসানা লেইস

ক’দিন সারভাইভালের মতন আদিম জীবনে আগুন পানি আলো বিহনে কাটিয়ে বেশ একটা নতুন অভিজ্ঞতা হলো। তাও শহরে জীবনের কিছুটা ছোঁয়া ছিল বোতলের পানি আর রান্না করা বক্সের খাওয়ারে প্রথমদিন কাটল। দ্বিতীয় দিন ফাস্টফুডের কেনা খাবারে দিয়ে চলে গেলো কোন রকমে আর তার পরদিন খান কতক বিস্কুট, ফল আর চিপস খেয়ে কাটালেও ক্ষুদা খুব একটা জ্বালাতন করল না। কিন্তু চা কফির অভাবটা সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে শরীর জানান দিতে থাকল। গহীন বনের গভীরতা থেকে বেরিয়ে শহরের পথে হেঁটে চা কফি কেনার ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রেখেছিলাম।
কেবল প্রকৃতির শব্দ শোনায় ছিলাম ব্যস্ত। রাতে আকাশে অসংখ্য তারা শেষ রাতে ভাঙ্গা একটুকরো চাঁদের উঁকি মারা। খানিকটা শীত বাতসে ঝিঁঝিঁর ডাক শোনা। কখনো কচ্ছপ ডেকে উঠছে কখনো কায়ওটি প্রহর জানান দিচ্ছে ডেকে ডেকে। কখনো রাত জাগা পাখিও ডেকে উঠে জানান দিচ্ছিল আছি তোমার পাশেই। এ তিনদিন ছিল শুধু প্রকৃতি কাছ থেকে অবলোকন আর তার সাথে সময় কাটানো।
রাতের আলোয় কোন প্রাণীর দেখা, পাওয়া না গেলেও উপলব্ধি করা যায় তাদের উপস্থিতি। দিনের বেলায় নানা রঙের পাখি ফড়িং, প্রজাপতি পোকাদের চলা ফেরা উড়াউড়ি ঘন পাতার নানা রঙের সবুজ রঙের ফাঁকে। নাম না জানা কত যে উদ্ভিদ লতা এবং ফুল ফল আপন মনে নিজেদের বিস্তার করছে সে পর্যবেক্ষণে সময় কাটাতে মন্দ লাগেনি। মাঝে মাঝে বাতাসে ভেসে আসে অদ্ভুত বনজ ঘ্রাণ। ঘুরতে ঘুরতে ঘন গাছের বনে ঢুকে পরলাম। সবুজ পাতার ছাউনির নিচে অফূরন্ত জীবন। রঙিন পাখি এ ডাল থেকে ওডালে উড়া উড়ি করছে। হয় তো বাসায় ছানা পোনাও আছে। সারা পেয়ে সতর্ক হয়ে চিৎকার শুরু করল। কাট বেড়ালি খোরগোশ সতর্ক হলো, দৌড়ে পালাল। দূরে বন মোরগ লম্বা পা ফেলে আরো দূরে সরে গেল। এসব বড় প্রাণীদের পাশাপাশি অনেক কীট পতঙ্গের বাসা। উই পোকার ডিবি। মথের বাসায় অসংখ্য বাচ্চা বিছা কিলবিল করছে, প্রজাপতি হওয়ার জন্য। এমন আরো কত নাম না জানা জীবন প্রবাহ। তার মাঝে পরিচিত পিঁপড়ার সারি। একটু ভেজা ভেজা জায়গায় কেঁচো। গাছের ডালে বাসা বেঁধে বসে আছে রঙিন মাকড়শা।
সবাই নিজের মাঝে বেশ আছে আনমনে। কিন্তু মশা আর মাছি এগিয়ে এলো ভালোবেসে অভ্যর্থনা জানাতে। এত মশা আর নীর রঙা বোমা মাছি, ছোট সবুজ মাছি, লাল মাছি কত রকমের মাছি। আর মশা নানা আকৃতির।
এত মশা থাকে গাছের বনে, আধঘন্টার মধ্যে মশা সুস্থ্ মানুষের শরীরের সব রক্ত শুষে নিতে পারে। মৃত্যু অনিবার্য। মশার বাসার কাছে চলে গিয়েছিলাম। মশারা ছেঁকে ধরে ছিল চারপাশ থেকে। জিন্স জুতা মোজা, ভাড়ি কাপড় ভেদ করে খুঁজে বেড়াচ্ছিল মনুষ্য শরীর রক্ত শুষে নেয়ার জন্য। কপালে গালে হাতে, মাসরুমের মতন ফুলে উঠেছে ওদের কামড়ে।কানের কাছে এখনও পিনপিন মশা সঙ্গীত শুনতে পাচ্ছি যেন যা খুবই বিরক্তিকর। বেশীক্ষণ বেড়াতে পারলাম না। দুচারটা কামড় খেয়ে চলে আসতে হলো। গভীর বনের ভিতরে যদিও ছিল অমৃত তা ধরতে পারলাম না।বিরক্তিকর মশার কামড় আর মাছির মুখের কাছে উড়াউড়ির জন্য।
গোসল না করে আর বোতলের পানির কৃপণ ব্যবহার করে, ক্যাম্পিং জীবন অভিজ্ঞতা মন্দ না। আধুনিক বাথরুমহীন খোলা মাঠে ছোট প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে উপলব্ধি করলাম, মানুষ আসলে সব রকম ভাবেই বাঁচতে পারে। গতানুগতিক পাটে বাঁধা জীবন প্রায় সময় আমাকে ক্লান্ত করে ফেলে। তাই সুযোগ পেলেই অন্যরকম কিছু চেখে দেখার নেশায় বেরিয়ে পরি। সাজানো পরিপাটি হোটেল, মোটেল রির্সোটগুলোতে অনেক সুখ কিনতে পাওয়া যায়। তবে প্রতি দিনের ঘরের জীবনের চেয়ে আলাদা মনে হয় না অনেক সময়।
ভালোলাগার সাথে, পাশাপাশি অসুবিধা গুলো ভাবলে এবং বড় করে দেখলেই অসুবিধা নয় তো বেশ মজা।

মাঝে মধ্যে অন্য রকম হওয়ার জন্য চেষ্টা করা মন্দ না। প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থা একটা না একটা ঠিক আবিস্কার হয়ে যায়। শহুরে অভ্যস্থ জীবনে কিছুটা অসুবিধা হলেও।
তিনদিন অন্যরকম বাঁচার চেষ্টার মাঝে আধুনিক সেলফোন চার্জ করার জন্য গাড়ি ছিল। যদিও সেল ফোনের ব্যবহারটাও রেখেছিলাম সীমিত। তবে সব জায়গায় জিপিএস কানেকসন ফোনের ডাটার সাথে পেতে এবং প্রয়োজনে ফোনে যোগাযোগের ব্যবস্থা খোলা ছিল। ফিরে এসে, এক রাতের আরামের গৃহি জীবন কাটিয়ে পরিচ্ছন্ন গোসল এবং ঘুম দিয়ে সাথে কয়েক কাপ চা কফি পান করে শরীরের নিস্তেজ ভাবটা সারাতে গিয়ে সারারাতের ঘুমটাই হারাম করে দিলাম। অথবা এমনও হতে পারে দু রাতের বিছানা, কঠিন কাঠের টুকরোয় শুয়ে থাকা শরীর অভ্যস্থ হয়ে নরম বিছানায় আরাম পাচ্ছিল না তাই ঘুম আসছিল না। ভোর সাড়ে চারটার দিকে খানিক ঘুমের আদর শরীর জড়িয়ে ধরলেও তা থেকে বেরিয়ে যেতে হলো, অনেক পথ পারি দেয়ার জন্য। আজ সারা দিনে এগারো বারোশ কিলোমিটার পথ পার হবো।
সকালে পাঁচশ মাইল দূরের মন্ট্রিয়াল শহরে চলে গেলাম। সাড়ে পাঁচশ মাইল পার হতে হতে একটা কথাই মনে হচ্ছিল।
বিশাল দেশটায় এত বিরান ভূমি; আর কোথাও পৃথিবীতে মানুষের ঠাসাঠাসি বসবাসের কথা। সূর্য তখনও জাগেনি যখন রওনা হলাম।পূর্ব দিকে সকালবেলা চলা মানে সূর্যের সাথে চোখের যুদ্ধ করে চলা। সূর্য উঁকি দিতে শুরু করল। ঘন নীল পাহাড়, নদী, মেঘের আড়ালে সবুজ গাছের ফাঁকে এক এক সময় এক একদিক থেকে উঁকি দিয়ে লুকোচুরি খেলছে যেন আমার সাথে। আধঘন্টর পথ পেরুতে ঢুকে পরলাম গ্রীনবেল্ট এরিয়ায়। আর সেখানে মেঘবালিকারা যেন রাতে ঘুমাতে এসেছিল মাঠের বিছানায়। আলোর তাড়া খেয়ে উড়তে শুরু করেছে আকাশের পথে। যত গভীরে যাই তত ঘন মেঘ মাটি কামড়ে ধীরে উঠে আসছে। এক সময় চোখের দৃষ্টি খুব কাছে সীমাবদ্ধ হয়ে গেল।
মেঘের পর্দা সরিয়ে দেখতে হচ্ছে, দূরে ঝাপসা জগত। রাস্তায় গাড়ি খুব বেশী ছিল না। তারপরও ডে লাইটের জায়গায় হেড লাইট জ্বালিয়ে নিতে হলো অন্যদের চোখে আলো যেন পড়ে,আমার উপস্থিতি টের পায়। গায়ের উপর এসে হুমড়ি খেয়ে না পরে সেই সতর্ক ব্যবস্থা নিয়ে।উল্টো পথের গাড়ি আসার পথ অবশ্য আলাদা। তবে ভয় পিছনের গাড়িকে; না দেখে ধাক্কা দিতে পারে। মাঝে মাঝেই বিশাল ষোল, বিশ চাকার ট্রাকগুলো পার হচ্ছে পাশ দিয়ে। অনেক দূর যাওয়ার তাগদা। কুয়াশা, বৃষ্টি ঝড় তাদের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটছে তারা। কতদূর যাবে কোন অচেনা দেশে। আমার খুব ট্রাক ড্রাইভার হতে ইচ্ছ করে। আজ এখানে তো কাল ওখানে। নতুন নতুন জায়গা প্রতিদিন। আর বিশাল ট্রাক রাস্তার পাশে পার্ক করে ঘুমানো। একটা মুভি দেখেছিলাম, মহিলা ট্রাক চালায় একাকী জীবন। যদিও মুভিতে তার জীবনে কিছু কষ্ট ছিল কিন্তু আমার কাছে খুব থ্রিলিং লেগেছে।কেমন হবে বরয়ের রাস্তা ধরে পার হয়ে উত্তর মেরুর শেষ সীমানায় পৌঁছে গেলে। কিযে অদ্ভুত সন্দির লাগে বরফে ঢাকা চারপাশ দেখতে। তার মঝ দিয়ে চলছি। ইস্, ভাবতেই মজা লাগছে।
কখনো প্রায় ঘন্টা খানেক ঘন কুয়াশার ভিতর চলার পর। সূর্যের দেখা পাওয়া গেল আবার। দিগন্ত ছাড়িয়ে তখন বেশ উপরে উঠে গেছে তখন।

মেঘ, কুয়াশা. আলোর সাথে মিতালী আর রোদের কারুকাজ পার হয়ে বেলা নটা থামলাম পথের পাশে গ্যাস স্টেশনে। গাড়িকে খাওয়াতে হবে, সাথে নিজের পেটেও কিছু দিতে হবে। রওনা হওয়ার সময় অত ভোরে কিছু খাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। ফ্রেস হয়ে খেয়ে দেয়ে চাঙ্গা হয়ে আবার পথে নামলাম। মাঝে মাঝে রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। সে সব জায়গায় ভীড় আর গতি কমছে চলার। এখানে মজা করে বলা হয়, সিজন হলো দুটো; উইন্টার আর কন্সট্রাকসন। গ্রীষ্মকাল জুড়ে রাস্তা মেরামতের কাজ চলতে থাকে। শীতকাল বরফের সাথে পাল্লা দিয়ে পথ চলতে হয়। পথের এই দুই সিজন তাই সবার পরিচিত এখানে।
এই যে এত বড় দেশ সারা দেশ ঘিরে আছে মশৃণ পীচ ঢালা রাস্তা। এবং সব সময় যেন ঠিকঠাক মশৃণ থাকে তার জন্য যত্ন নিতেই হবে। সাড়ে দশটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম মন্ট্রয়াল শহরে। সেখানে চলছে ফ্লাইওভার তৈরির কাজ। ঝাঁকে ঝাঁকে রাস্তা উড়ে চলে যাচ্ছে এদিক থেকে সেদিক। তার সাথে যোগ হচ্ছে আরো অনেক। গত চার বছর ধরে কাজ চলছে দেখছি। কবে শেষ হবে এই সব ফ্লাইওভার তৈরি নির্মাণ কৌশলের জালে ধরা পরবে, নতুন রূপে শহরের রূপ তা দেখার অপেক্ষায় আছি।
কাজের জন্য গিয়েছিলাম তাই অফিসের পাশে, গাড়ি পার্কংয়ে এ ঢুকে ভীড়ের মাঝে ঘুরে মনে হলো এত বড় পাকিংলট সবটাই দখল হয়ে আছে। একটিও ফাঁকা জায়গা নেই গাড়ি পার্ক করার। বেরিয়ে অন্য কোথাও খুঁজতে হবে। তখন দু জন গার্ড এগিয়ে আসল। তারা বলল, এখানে রেখে যাও, চাবি দিয়ে। বেশ তাদের কাছে গাড়ির চাবি দিয়ে বেরিয়ে এলাম পার্কিংয়ের, ভুতল থেকে আকাশের তলে, ঝকঝকে রোদ সুন্দর একটি দিন। গেলাম কাজে।
ঘন্টা দুই কাজের জন্য ব্যয় হলো। তারপর ঘুরতে বেরুলাম আসে পাশে।
৩৭৫ বছর জন্মদিন শহরের, এ উপলক্ষে, নানা উৎসব চলছে অনেক দিন থেকে এবং চলবে আরো অনেক দিন। তার অংশ হিসাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলছে এখানে সেখানে। রাস্তার উপর খোলা মাঠে। ঘরে থিয়েটারে। অনেক মানুষের আনন্দময় চলার সাথে যোগ হয়ে মিশে গেলাম। মানুষের ভীড়ে মানুষের মাঝে চলার উষ্ণতা অন্য রকম, প্রকৃতির নিরবতার চেয়ে। জনারণ্যে একা হয়েও একাকী মনে হয় না। মন্ট্রিয়ল শহরটা এমনিতেও সব সময় জমজমাট। কিছু না কিছু উৎসব সব সময় লেগে আছে। আর এ সময় তো বিশাল আয়োজন।অনেক পর্যটক অনেক স্থানীয় সবাই দেখছে উপভোগ করছে ফেস্টিভ্যাল আনন্দ। আমিও সামিল হলাম তাদের সাথে।
হেঁটে হেঁটে দেখছি নানা কার্যক্রম।
খাওয়া বাজনা। কথা। ম্যাজিক খেলা, সঙদের আমোদ মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে কখনো পেতে রাখা বেঞ্চে, চেয়ারে বসে উপভোগ করছি স্ট্রিট ফেস্টিভেল। রাস্তার উপর মেলায় আসা খাবার দোকান, খাবারের ট্রাক নানা রকম খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছে। এছাড়া রাস্তার পাশে নানা রকম রেস্টুরেন্টগুলোও জমজমাট। আমি সুদৃশ্য একটি রেস্টরেন্টে ঢুকলাম অনেকক্ষণ হাঁটার পর দুপুরের খাবার খেতে।
আবার হাঁটতে শুরু করলাম খাওয়ার পর। জাজ গান হচ্ছে একটা মঞ্চে। দুজনের গান শোনার পর অন্য দিকে হাঁটা দিলাম বড় একটা মাঠের মাঝে পৌঁছালাম এবার। মাঠ জুড়ে বসে আছে অনেক মানুষ। আবার অনেকে দেখলাম সারিবদ্ধ নাচের মূদ্রায় দাঁড়িয়ে আছে। মঞ্চ থেকে আফ্রিকান আদি বাজনার সুর উঠল । বাঁশি ঢোল, খোল করতালের মতন তাঁদের বাদ্য যন্ত্রগুলো কোরে,ডিজেম্বে,
টকিং ড্রাম, আফ্রিকান হার্প, মবিরা, এরিকান্দি , লাউ দিয়ে বানানো, সেকার, বা ঝাকুনি বা ঝুনঝুনি।
আদিম বন জঙ্গল মাতিয়ে তুমুল বাজনার সুর উঠল বিকালের মায়াবী সময়কে জড়িয়ে ধরে। আর তখন মঞ্চে লাল রঙের খাদির নিজেস্ব স্টাইলে তৈরি কাপড় পরে উপস্থিত হলেন এক গায়ক। বাজনার সাথে তার গানের সাথে তিনি নির্দেশনা দিয়ে গেলেন উপস্থিত জনতাকে কি ভাবে গানের সাথে নাচতে হবে বা গাইতে হবে। সামনে সারি বদ্ধ মানুষ তার সাথে নাচতে শুরু করল।
একবার শুনে শুনেই শতশত দর্শক এক সাথে একই নিয়মে হাত পা দুলিয়ে নাচচ্ছে। সাথে গানও গাইছে গায়ক, যেমন শব্দগুলো সুর লাগিয়ে ছুড়ে দিচ্ছেন জনতার মাঝে। অপরিচিত শব্দগুলো এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঢেউয়ের মতন বয়ে যাচ্ছে। বসে থাকা থেকে উঠে গিয়ে যে কোন দর্শক নিজ ভালোলাগায় সামিল হয়ে যাচ্ছে নাচে। বেশ কিছু সময় সুন্দর কেটে গেল। এই গায়কের সাথে নেচে গেয়ে।বাসিতো বাসিতো । আমিতো আমিতো। ওইয়্ উ.হ ……আরো কি কি যেন শব্দ ছিল, ভুলে গেছি যার হয় তো বিশাল অর্থ আছে কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল বাচ্চাদের মতন শব্দ সৃষ্টি করে বলে যাচ্ছে সে। সুর ছিল যাদুকরি মায়াময়।উপস্থিত দর্শক তাদের নিজস্ব
এ্যাথিনিক ভুলে এক মায়াবী সুরের তালে খানিকের জন্য হারিয়ে গেল যেন।
গায়ক শেষ করল তার গান নাচ শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি নেমে গেলেন মঞ্চ থেকে। তখন অন্য জনের আসার প্রস্তুতি চলছে সে সময় পিছন থেকে অন্য রকম মায়াবতী শব্দ ভেসে এলো। সেখানে কি হচ্ছে তা দেখার জন্য রওনা হলাম। মঞ্চে তুমুল নাচছে স্পেনিস সুন্দরি তাদের বিখ্যাত নাচের ড্রেস, “ট্রাজে দে ফ্লামেন”কে পরে। মাথায় ফুল দেয়া গান হচ্ছে প্লেয়ারে তারা নাচছে তুমুল ঘুরে ঘুরে টানটান শক্ত মায়াবতী শরীর দুলিয়ে। শেষে দুজন পুরুষ এলো আগুন হাতে এবং আগুন নিভিয়ে নাচের শেষ হলো। তারাও একটার পর একটা বিভিন্ন রকমের নাচ এবং গান উপহার দিল। শব্দগুলো বুঝতে পারছিলাম না বলে অভিব্যাক্তির অনেকটা নাচের মূদ্রা দেখে বোঝার চেষ্টা করতে হচ্ছিল। তাও সবটা পরিচিত নয় বলে পুরো হৃদয়ঙ্গম করতে পারলাম না। কেন যে মানুষের ভাষার এত পার্থক্য এটাই মনে হলো শুধু। দুজন পুরুষ বাঁশের লাঠি নিয়ে যে নাচটি করল. মনে হলো তা কোন বিপ্লবের গল্প।
সব শেষের নাচটি ছিল ভয়ানক। নৃত্যরত দুজনের মুখের অভিব্যাক্তিতে বোঝা যাচ্ছিল, কতটা কষ্টের এবং যন্ত্রনার কথা তারা বলছে।
নাচের বিষয়টা ছিল প্রতারক, পুরুষটিকে শাস্তি দেয়ার প্রতিজ্ঞায় নদীতে ডুবে আত্মহত্যা করে স্ত্রী। এরপর থেকে যে পুরুষই সে নদীতে নামে, সেই ডুবে মরে। নারীটি প্রাতরণার শিকার হয়ে যে যন্ত্রনা সহ্য করছিল এবং তার কষ্ট অসম্ভব সুন্দর ভাবে প্রকাশ করেছিল নারী।
কাজের প্রয়োজনে গিয়ে একবেলার ঘোরাফেরায় সময়টা মন্দ কাটেনি। অতঃপর আবার সন্ধ্যাবেলায় রওনা হয়ে মাঝ রাতে বাড়ি ফেরা হলো সারাদিনে হাজার বিরাশি মাইল পারি দিয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১:৪২:০৮   ১২৮০ বার পঠিত