শুক্রবার, ১৪ জুলাই ২০১৭

ফরহাদ মজহার স্বেচ্ছায় গিয়েছেন,অপহৃত হননি:আইজিপি

Home Page » এক্সক্লুসিভ » ফরহাদ মজহার স্বেচ্ছায় গিয়েছেন,অপহৃত হননি:আইজিপি
শুক্রবার, ১৪ জুলাই ২০১৭



বঙ্গ-নিউজ: পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বলেছেন, ‘ফরহাদ মজহার অপহৃত হননি। তিনি স্বেচ্ছায় গিয়েছেন। সরকারকে বিব্রত করতে ও বিপাকে ফেলতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সদরদফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি একথা বলেন।

তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি জানান, ‘কবি ফরহাদ মজহার কীভাবে খুলনায় পৌঁছেছিলেন তা পুলিশ নিশ্চিত নয়, সেটা তিনিই বলতে পারবেন। পুলিশ মনে করে, তিনি বাসে গেছেন।’

ফরহাদ মজহারকে নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ও বিবৃতির মাধ্যমে সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা উদ্দেশ্যমূলক বলে আইজিপি মন্তব্য করেন।

আইজিপি বলেন, ‘ফরহাদ মজহার একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বুদ্ধিজীবী। তার অপহরণের অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ তাকে উদ্ধারে তৎপর হয়ে ওঠে। মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে তার অবস্থান জানার পর রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে সব মাইক্রোবাস তল্লাশি করা হয়।’

ফরহাদ মজহার কীভাবে খুলনায় গেছেন-এমন প্রশ্নে আইজিপি বলেন, ‘কীভাবে খুলনায় গেছেন সেই ব্যাখ্যা তিনিই দেবেন। তবে আমি বিশ্বাস করি, তিনি বাসে গেছেন। কারণ মাইক্রোবাসে গেলে তল্লাশির সময় তাকে পাওয়া যেত।’

ফরহাদ মজহার ‘অপহরণ নাটক’ করেছেন কি-না-সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে আইজিপি বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত ও পারিপাশ্বিক অবস্থা দেখে এটা পরিষ্কার। খুলনায় তার সে চলাফেরার দৃশ্য সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে পাওয়া গেছে। সিসিটিভির ফুটেজ ও তদন্তে পাওয়া তথ্যপ্রমাণ করে তিনি স্বেচ্ছায় গেছেন।’

ফরহাদ মজহারের বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, তিনি ব্যাগ ছাড়া বের হন, তা হলে ব্যাগ এলো কিভাবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘হয়তো ব্যাগটি পাঞ্জাবির নিচে নিতে পারেন।’

ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে ফরহাদ মজহারের জবানবন্দির সঙ্গে তদন্তের তথ্য-উপাত্তের মিল পাওয়া যায়নি জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘তিনি আদালতে বলেছেন, সন্ধ্যা ৭টায় অপহরণকারীরা ছেড়ে দিয়ে একটা টিকিট হাতে ধরিয়ে দেয়। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে, তিনি নিজে গিয়ে কাউন্টারে গফুর নামে ঢাকার টিকিট কাটেন।’

পুলিশপ্রধান আরও বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, তিনি ৪টা ২১ মিনিটে খুলনা নিউমার্কেট এলাকায় ঢোকেন ও বের হন ৬টা ২৮ মিনেটে। পুলিশ তদন্তে পেয়েছে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি ১০ বার স্ত্রীর সঙ্গে এবং অপর একটি মোবাইল নম্বর থেকে এক নারীর সঙ্গে ছয়বার কথা বলেছেন। এসব কথোপকথন পুলিশের কাছে রয়েছে। ঘটনার দিন ওই নারী তাকে ফোনে জিজ্ঞাসা করেছেন, আপনি নাকি অপহরণ হয়েছেন। প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ মজহার ভালো আছেন বলে জানান। ওই নারীকে সন্ধ্যায় খুলনা থেকে দুই দফায় ১৫ হাজার টাকা পাঠান ফরহাদ মজহার। এসব তথ্যপ্রমাণ রয়েছে পুলিশের কাছে।’

আইজিপি বলেন, ‘বুঝলাম অপহরণকারীদের কাছে থাকাকালে মুক্তিপণের টাকার জন্য স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু অন্য একজনের সঙ্গে যখন কথা বলেন, তখন তো অবশ্যই তদন্তকারীদের সন্দেহ জাগে। সেই ব্যক্তি কে, তাকে বের করাও তদন্তের অংশ। সেই নারীকে আদালতে নেওয়া হয় সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য।’

আইজিপি বলেন, ‘ফরহাদ মজহারকে সরকারবিরোধীরা ভালোবাসে। এজন্য সরকারবিরোধীরা নানা রকম কথা বলেছেন।’

এ ঘটনায় ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না-এমন প্রশ্নে আইজিপি বলেন, ‘তিনি একজন বুদ্ধিজীবী। মাঝে মাঝে তিনি এলোমেলো কথা বলছেন। বিষয়টি পরবর্তী সময় খতিয়ে দেখা হবে।’

আইজিপির বক্তব্যের বিষয়ে ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আইজিপির সংবাদ সম্মেলন বলেন, ‘মামলার তদন্তই শেষ হয়নি। তাহলে অপহরণ হয়নি, এ কথা তিনি কীভাবে বলেন? ফরহাদ ঢাকা থেকে কীভাবে খুলনায় গেল-এ ব্যাপারে কিন্তু পুলিশের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য নেই।’

ফরিদা আরও বলেন, ‘তিনি (ফরহাদ) অপহৃত হয়েছেন, অথচ তাকেই এখন দোষারোপ করা হচ্ছে। পুলিশ এখন রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছে।’

গত ৩ জুলাই ভোরে রাজধানীর শ্যামলীর রিং রোডের বাসা থেকে বেরোনোর পর কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার অপহৃত হন বলে অভিযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা। ওই রাতেই যশোরে ‘হানিফ এন্টারপ্রাইজের’ একটি বাস থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর ৪ জুলাই আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি। বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বুধবার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন ফরহাদ মজহার।

আদালতে জবানবন্দিতে ফরহাদ মজহার দাবি করেন, বাসা থেকে ওষুধ কিনতে বের হওয়ার পর অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এরপর মুক্তিপণের জন্য ৩৫ লাখ টাকা দাবি করে তারা। পরে এক নারী ও ‘হানিফ এন্টারপ্রাইজের’ কাউন্টার ম্যানেজার আদালতে জবানবন্দি দেন।

বাংলাদেশ সময়: ৮:৩৪:৫৬   ৩৩৬ বার পঠিত