শনিবার, ৮ জুলাই ২০১৭

‘সময় যখন- মুখোমুখি বসিবার মোনা লিসার’ (যেতে যেতে পথে. ৫৭) ড. মনিরুস সালেহীন

Home Page » ফিচার » ‘সময় যখন- মুখোমুখি বসিবার মোনা লিসার’ (যেতে যেতে পথে. ৫৭) ড. মনিরুস সালেহীন
শনিবার, ৮ জুলাই ২০১৭



লুভর মিউজিয়াম মোনা লিসা
সেই কবে! বিশ্ববিদ্যালয়ে থার্ড ইয়ারে পড়ার সময়। নীলক্ষেত থেকে কিনেছি পুরোনো একটা রিডার্স ডাইজেস্ট। ঢাকা থেকে গফরগাঁও এর পথে একতা ট্রেনের বুফে কারে বসে শেষ করেছিলাম রিডার্স ডাইজেস্টের বুক সেকশনে ছাপা বড় লেখা দ্য থেফট অব মোনালিসা ( The Theft of Mona Lisa)। কীভাবে প্যারিসের লুভর মিউজিয়াম থেকে একবার চুরি হয়েছিল লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বিশ্বখ্যাত পেইন্টিং মোনা লিসা (মোনা ও লিসা আলাদা শব্দ। বাংলায় যে কেন এক সাথে মোনালিসা লেখা হয় জানিনা)- সেই গল্প। সেই চমকপ্রদ কাহিনীটা এতোই ভালো লেগেছিল যে ইচ্ছা হয়েছিল অন্যদের সাথে তা শেয়ার করার।
বিশ্ববিদ্যলয়ের এরশাদ ভ্যাকেশনে গ্রামে বসে সেই লেখার অনুসৃতিতে লিখেছিলাম ‘ মোনা লিসা অপহরণ’ নামের বড়সড় একটা ফিচার। তারপর গ্রামের বাড়ি থেকে নিউজপ্রিন্ট কাগজে সেই লেখাটা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত রহস্য পত্রিকায়, লেখার কোনো কপি না রেখেই।
মাস খানেক পরে ভার্সিটি আবার খুলেছে। লেখাটার কথা ভুলেই গেছি। একদিন ক্লাস থেকে হলে নিজের রুমের দরোজা খুলে দেখি রহস্য পত্রিকার একটা খাম। খুলে তো আমার আনন্দ বিস্ময় আর ধরে না । চিঠি জানাচ্ছে আমার লেখাটা ছাপা হয়েছে আর এজন্য আমাকে দেয়া হবে ৫০০/- টাকার সম্মানী। তখন আমার পুরো মাসের খরচ পাঁচ শ’ টাকার চেয়ে কম। সেদিন বিকেলেই সেগুনবাগিচায় গিয়ে সংগ্রহ করেছি রহস্য পত্রিকার কপি আর সম্মানীর টাকা।
আহ, সেই মোনা লিসার সাথে এবার দেখা হলো সামনা সামনি। আগের বার চকিত সফরে যখন প্যারিস এসেছিলাম তখন লুভর প্রাঙ্গনে বেড়ানো হলেও সময়াভাবে ঘুরে দেখা হয়নি লুভর গ্যালারি।
মোনা লিসা আর লুভর মিউজিয়ামকে কল্পনায় দেখেছি ড্যান ব্রাউনের দ্য ভিঞ্চি কোড পড়তে পড়তে। এবার যখন সামনা সামনি দেখা তখন লুভর তার সব ঐশ্বর্য নিয়ে সমুপস্থিত। কল্পনাকেও শতগুণ ছাড়িয়ে গেছে লুভরের আকর্ষন। হাজার হাজার ভাস্কর্য, পেইন্টিং ও অঅন্যান্য সংগ্রহের শিল্পিত সুষমা উপভোগ করতে করতে, এর গোলক ধাধার মতো বিশালত্বের অলিন্দে ঘুরতে ঘুরতে কিছুটা উপলদ্ধি করা গেল কেন ড্যান ব্রাউন তার রহস্যোপন্যাসের জন্য বেছে নিয়েছেন লুভরকে।
আর মোনা লিসা? সত্যিই রহস্যময়, শাশ্বত নারী। কাছে থেকে দেখা অরিজিনাল পেইন্টিং দেখে আমার মতো আনাড়িও কিছুটা বুঝতে পারে কেন মোনা লিসা বিশ্বের সব মানুষকে এভাবে ভাবায়, এভাবে মাতায়। যুগ যুগান্তের শত শত মাস্টারপিস শিল্পকর্মের মধ্যেও মোনা লিসা অনন্য। লুভরে আসলে মনে হয় লুভর আর মোনা লিসা যেন সমার্থক।
৪/৫ ঘন্টা লুভর ঘুরে শিল্পসমুদ্রের পাড়ে নুড়ি কুড়ানোর অনুভূতিটুকুই হয়েছে। তবে প্রবলতর যে অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়েছি তা হচ্ছে উপরওয়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ যিনি এই স্বপ্ন সৌন্দর্যের শিল্পসমুদ্রের পাড়ে এনে দাড় করিয়েছেন। তিরিশ বছর আগের যে সদ্য তরুণ মোনা লিসা নিয়ে ফিচার লিখেছিল বিদেশী ম্যাগাজিনের গল্প পড়ে, সে-ই আজ সেই মোনা লিসা নিয়ে লিখছে তার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা দিয়ে- এরচে’ ভালো লাগার আর কী হতে পারে!

লেখক ড. মনিরুস সালেহীন

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩০:৪২   ৪১৫ বার পঠিত