বুধবার, ৫ জুলাই ২০১৭
নজরুল গবেষক অধ্যাপক রাজীব হুমায়ুন আর নেই
Home Page » সারাদেশ » নজরুল গবেষক অধ্যাপক রাজীব হুমায়ুন আর নেইব্ঙ্গ-নিউজঃ ঢাকার অ্যাপোলো চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ভোররাতে তার মৃত্যু ঘটে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপকের বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি দুই ছেলে রেখে গেছেন।
রাজীব হুমায়ুনের মামাত বোন হাসিনা খাতুন প্রথমে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানান।
কিশোর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জসিমের বড় ভাই রাজীব হুমায়ুনের মামাত বোন হাসিনা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তার সাক্ষ্যেই মীর কাসেমের প্রাণদণ্ড হয়।
প্রয়াতের ভাতিজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আখতার হোসেন বলেন, “কিডনিসহ নানা জটিলতা নিয়ে গত সাত দিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত রাত আড়াইটার দিকে তিনি মারা যান।”
১৯৫১ সালে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে জন্ম নেওয়া রাজীব হুমায়ুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার পরে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসনও ছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যও ছিলেন তিনি।
রাজীব হুমায়ুন সত্তরের দশকে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠানও করতেন তিনি, লিখেছেন নাটকও।
দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজীব হুমায়ুনের জানাজায় অংশ নেন তার সাবেক সহকর্মী, ছাত্ররা।
বিকালে ঢাকার মিরপুরের পূর্ব মনিপুরে তার বাসার কাছে আমতলা মসজিদে জানাজায় অংশ নেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
অধ্যাপক রাজীব হুমায়ুনের ছেলে কায়সার রাজীব শেরপা বলেন, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার বাবাকে সমাহিত করা হবে।
কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাজায় অংশ নেন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতা ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
এক শোকবারতায় উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “অধ্যাপক রাজীব হুমায়ুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও একাডেমিক কাউন্সিলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন।
“রাজীব হুমায়ুন শুধু শিক্ষক ছিলেন না, তিনি স্বনামধন্য সংস্কৃতিসেবী ছিলেন। তিনি মননশীল রচনার পাশাপাশি সৃষ্টিশীল রচনায় সুনাম অর্জন করেছেন।”
সন্দ্বীপের মৌলভী সৈয়দ আহমদ ও আজমতেন্নেসা বেগমের ঘরে জন্ম নেওয়া রাজীব হুমায়ুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৭২ সালে স্নাতক এবং ১৯৭৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
১৯৭৮ সালে তিনি ভারতের পুনে ইউনিভার্সিটি থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ১৯৮৫ সালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন রাজীব হুমায়ুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৯২ সাল থেকে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৪ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যান।
রাজীব হুমায়ুন আন্তর্জাতিক কাউন্সিল অব টিচার এডুকেশন (সিটিই)-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সিটিইর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
গবেষক রাজীব হুমায়ুনের উল্লেখযোগ্য প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে নজরুল ও বিশ্বসংস্কৃতি, নজরুল ইসলাম ও বাংলাদেশের সাহিত্য, নজরুলের লেখার কৌশল, আবুল মনসুর আহমদের ব্যঙ্গ রচনা ও সংস্কৃতি চিন্তা, সমাজ ভাষাবিজ্ঞান, সমাজ ও সংস্কৃতি।
তিনি বাংলা একাডেমি, এশিয়াটিক সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সন্দ্বীপের ইতিহাস গ্রন্থটি তিনি সম্পাদনা করেছেন।
রাজীব হুমায়ুনের টেলিভিশন নাটকের মধ্যে রয়েছে মহাপ্রস্থান (১৯৮৪), নীলপানিয়া (১৯৮৬), মাগো তুমি কেমন আছো (১৯৯৯), ব্রীফকেস, একটি পরিবারের গল্প, লাগুক দোলা। তার একমাত্র মঞ্চনাটক ‘নীলপানিয়া’ গ্রন্থাকারেও প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৭:১০ ৪৮৯ বার পঠিত