শনিবার, ১ জুলাই ২০১৭

অশ্রুজলে সিক্ত হল সেই হলি আর্টিজান

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » অশ্রুজলে সিক্ত হল সেই হলি আর্টিজান
শনিবার, ১ জুলাই ২০১৭



 অশ্রুজলে সিক্ত হল  হলি আর্টিজান বঙ্গ-নিউজঃ শনিবার ভোর ৫টা। একবছর আগে দিনটি ছিল অন্যরকম। এদিন গুলশান ৭৯ নম্বর সড়কের আশেপাশে মানুষের ভোর হয়েছিল গুলি, বুট আর ভারি যানের শব্দে। এক বছর পরের আজকের সকাল ছিল নিস্তব্ধতায় ভরা। হলি আর্টিজান হামলার বছর পূর্তিতে সকাল থেকেই থমথমে গুলশান। সকাল থেকেই জঙ্গি হামলায় নিহত ব্যক্তিদের উদ্দেশে চলছে শ্রদ্ধা নিবেদন।

গুলশান হামলায় নিহত ব্যক্তিদের নিজ নিজ দেশের রাষ্ট্রদূত, স্বজন হারানো মানুষ আর বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতানেত্রীরা ফুল দিয়ে এক মিনিট করে নিরবতা পালন করেন। তাদের অনেকে ছিলেন অশ্রুসজল। যে স্থানে হত্যা করা হয়েছে স্বজনদের সেখানে উপস্থিত হয়ে তারা স্তব্ধ হয়ে যান। চোখে মুখে হতবিহ্বলতা। সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যেই ফুল ‍ফুলে ছেয়ে গেছে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নির্ধারিত বেদী।

শনিবার সকাল ৭টা ২২ মিনিটে কড়া পুলিশ পাহারায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জাপানি রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবি। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি ৭টা ২৮ মিনিটে বের হন। এসময় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ডিএমপির গুলশান বিভগের পুলিশকর্মকর্তারা ছিলেন।

এরপর নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ইতালির নিহত স্বজন ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধি দল। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সময় ঢুকরে কেঁদে উঠতে দেখা যায় তাদের কাউকে কাউকে। হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ১৭ জন বিদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ইতালিয়ান ৯ জন, জাপানি সাত জন ও একজন ভারতীয় নাগরিক।

সকাল পৌনে ১০ টার দিকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিরা দুর্বল হয়েছে, তবে নির্মূল হয়নি। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভর করলে চলবে না। আমাদের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’

এদিকে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী শ্রদ্ধা জানাতে এসে বলেন, ‘আমাদের আবহমান বাংলার যে সাম্প্রতিক বন্ধন, তাতে কালিমার তিলক দিয়েছে এই হামলা। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে যখনই বলা হয় উগ্রবাদ নির্মূল করা হয়েছে, তখনই দেশের কোথাও না কোথাও উগ্রবাদের হিংসাত্মক থাবা পড়ছে।’

এর আগে সকাল ১০টার দিকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এসময় সংগঠনটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘শক্তি দিয়ে জঙ্গিবাদ হয়তো সাময়িকভাবে দমন করা যায়, কিন্তু নির্মূল করা সম্ভব নয়। জঙ্গিবাদ দমন করতে হবে আদর্শ দিয়ে। এজন্য ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে, জামায়াতকে নিষেধ করতে হবে। ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃস্থাপন করতে হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী নূপুর, ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনী, শহীদ আলীম চৌধুরির স্ত্রী শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, কন্যা নূজহাত চৌধুরী, মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর, শহিদ বুদ্ধিজীবী শহিদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার প্রমুখ।

গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নারকীয় জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিক ও দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়। জঙ্গিরা প্রায় ১২ ঘণ্টা অবরোধ করে রেখেছিল রেস্টুরেন্টটি। পরদিন (২ জুলাই) সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি। এসময় সাইফুল ইসলাম চৌকিদার নামে ওই রেস্তোরাঁর একজন শেফও নিহত হন।

অশ্রুজলে সিক্ত  হলি আর্টিজান

বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হলি আর্টিজানের ওইদিনের ঘটনাটা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট। এ ধরনের ঘটনার যে ব্যাপকতা দেখা দিয়েছিল সেটা মোকাবিলা করা ছিল আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তা মোকাবিলা করতে গিয়ে দুজন সিনিয়র অফিসারকে হারিয়েছি। বাংলাদেশ যাতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি না পায় কার জন্য সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় এবং পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর পেশাদারিত্ব বজার রেখে জীবন বাজি রেখে বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচিত করতে পেরেছি। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনও স্থান নেই। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সফল অভিযানের প্রশংসা পাচ্ছে।’

এসময় তার সঙ্গে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলামসহ আরও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩৬:৫১   ৪০৮ বার পঠিত