মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০১৭
মহাসড়কে তীব্র যানজট
Home Page » প্রথমপাতা » মহাসড়কে তীব্র যানজট
বঙ্গ-নিউজঃ রাজধানী থেকে দূর গন্তব্যের প্রায় সবগুলো মহাসড়ক কমবেশি যানজটের আবর্তে পড়েছে। ঈদে গৃহমুখী মানুষ একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে যানজটে নাকাল হচ্ছেন। কোন কোন মহাসড়কে যানযট ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রার শুরুতেই অনাহুত ভোগান্তিতে মানুষের চোখেমুখে এক রাশ বিরক্তি। অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক প্রায় থমকে আছে গত দুই দিন ধরে। কালিয়াকৈরের চন্দ্রা মোড় থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা অবধি ৬০ কিলোমিটার পথ যানজটে স্থবির। গতকাল সোমবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট ছিল। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টঙ্গী স্টেশন রোড, টিঅ্যান্ডটি, মাঝুখান, পূবাইল, কালিগঞ্জ ও পূবাইল থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর হয়ে মেঘনা ব্রিজ পর্যন্ত তীব্র যানজট ছিল।
অতিরিক্ত গাড়ির চাপে ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-কালিয়াকৈর ও আব্দুলা হপুর-বাইপাইল সড়কেও যানজট দেখা গেছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১টি জেলার সংযোগস্থল পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটেও ভয়াবহ যানজট ছিল। যানজট নিরসনে পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও।
ঈদে বাড়ি ফিরতে নগরবাসী এরই মধ্যেই রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি পণ্যবাহী যান চলাচলও বেড়েছে। মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, ভারী বৃষ্টিপাত ও সড়ক সংস্কারের অভাবে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে যানজট বেড়েছে। বৃষ্টিতে খানাখন্দ আরো গভীর হচ্ছে। গর্তে পড়ে বিকলও হচ্ছে অনেক গাড়ি, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে সেগুলো সরাতে আবার বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে। এছাড়া অতিরিক্ত পণ্যবহন করতে গিয়ে যান বিকল হয়ে যাওয়ায় প্রায় সবগুলো মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ যানজট। আরো রয়েছে ওভারটেক, যত্রতত্র যাত্রী ওঠা-নামা করা এবং যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং এর কারণে সৃষ্ট যানজট।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া ফ্লাইওভারের কাজ চলায় রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এসব কারণে ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন ধীরগতিতে চলছে। ঈদে সামনে রেখে রাস্তা মেরামত করার নির্দেশ থাকলে ফ্লাইওভার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান তা করেনি বলে জানা গেছে।
আমাদের মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতাও কালিয়াকৈর (গাজীপুর) সংবাদদাতা জানান, গত রবিবার রাত থেকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও বঙ্গবন্ধু সেতু জাতীয় মহাসড়কে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। গতকাল সোমবার মহাসড়ক ঘুরে দেখা দেছে যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে মহাসড়ক। যানজটের কারণ হিসেবে জানা গেছে, চন্দ্রা, কোনাবাড়ি ও চৌরাস্তায় তিনটি ফ্লাইওভারের কাজ, বেশ কয়েকটি ভাঙ্গাচোরা ব্রিজ, রাস্তায় ছোট বড় গর্ত এবং সড়কের দুই পাশে কাদা। এছাড়া রয়েছে মহাসড়ক দেখা শোনার কাজে নিয়োজিত সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ চার লেন কাজে নিয়োজিত দুই কোম্পানির মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাব।
মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই হাইওয়ে থানার পুলিশ ও মির্জাপুর থানা পুলিশ জানায়,গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট শুরু হয়। মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই, ক্যাডেট কলেজ, বোর্ডঘর, কালিয়াকৈর ও চন্দ্রা এলাকায় পর পর কয়েকটি মালবাহী ট্রাক বিকল হয়ে মহাসড়কের দুই পাশে যানজট শুরু হয়। থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ খবর পেয়ে বিকল হওয়া ট্রাকগুলো সরানোর চেষ্টা করে।আবার মহাড়কের কালিয়াকৈর রেলওয়ে অভার ব্রিজের উপর ট্রাক ও বাস বিকল হয়ে পরায় যানজট আরও তীব্র হতে থাকে।এই যানজটের ফলে গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত এই ৬০ কিঃ মিঃ এলাকায় তীব্র যানজটে আটকে থাকা যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।বিশেষ করে যানজটে আটকে থাকা এ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগী, নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন বলেন, যানজটের মুল কারণ এ মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে পাকুল্যা পর্যন্ত ৮-১০টি ভাঙ্গাচোরা ব্রিজ এবং ভাঙ্গা রাস্তা।
গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি মো. খলিলুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, গত কয়েক প্রণ ধরে প্রবল বর্ষণ হচ্ছে। এতে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। যানবাহনের অধিক চাপ থাকায় চন্দ্রা এলাকায় যানবাহন ঠিকমত পারাপার হতে পারছে না।
এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত আট কিলোমিটার সড়ক আট লেনের। তবে ফুটপাত অবৈধ দখলে থাকায় দুই লেন গাড়ি পার্কিং, ময়লার স্তুপ আর পথচারীদের দখলে। এতে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে সৃষ্টি হয় যানজট। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার থেকে আট লেন সড়কের চার লেন দিয়ে তিন-চারটি গাড়ি একসঙ্গে আসে। কিন্তু কাঁচপুর সেতুতে উঠতে হয় এক লেনে। ঈদের সময় ঘরমুখী মানুষের চাপ বেশি থাকায় যানবাহনের চাপ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। সিলেট থেকে ঢাকায় আসা যানবাহনগুলোকে ইউটার্ন নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে কাঁচপুর সেতুতে উঠতে হয়। এ সময় বিপুল সংখ্যক গাড়ি অতিক্রম করতে গিয়ে কাঁচপুর পয়েন্টে সৃষ্টি হয় যানজট।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ জানান, সরু সেতু ও সড়কে ময়লা-আবর্জনার জন্য যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে মদনপুর থেকে দাউদকান্দি যেতে গতকাল স্বাভাবিকভাবে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গত কয়েকদিনে অব্যাহত বৃষ্টিতে পানি জমে গেছে। এতে যানবাহন চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। গতকাল সকাল থেকে ভারী বর্ষণে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। উতৃন্তু ড্রেনের ও রাস্তার পাশে কল-কারখানা, ঘর-বাড়ি ও মার্কেটের ময়লা পানি মহাসড়কে পড়ে সয়লাব হয়ে পড়েছে। ফলে টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লেগে যাচ্ছে ৪-৫ ঘণ্টা।
গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিন রেজা জানান, সওজ ও বিআরটি প্রজেক্ট যৌথভাবে মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের কাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২:২৪:২৮ ৪৫৭ বার পঠিত