সোমবার, ১৯ জুন ২০১৭

হঠাৎ বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ

Home Page » জাতীয় » হঠাৎ বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ
সোমবার, ১৯ জুন ২০১৭



হঠাৎ বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ
বঙ্গ-নিউজঃ  কালবৈশাখীর সময়  বজ্রপাতে প্রতি বছরই বাংলাদেশে মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। তবে ইদানিং এর মাত্রা চরম আকারে পৌঁছেছে। গতকাল রবিবার থেকে আজ সোমবার বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সারা দেশে বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা ১৭ জন। এই দুই দিনে শুধুমাত্র ফরিপুর জেলাতেই ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিকে হঠাৎ বজ্রপাতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বজ্রপাতের ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু বজ্রপাতকে এখনো আলাদা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। আশঙ্কার বিষয় এই যে, বজ্রপাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বজ্রপাতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় বাংলাদেশে। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, প্রতিবছর বজ্রপাতে যত মানুষ মারা যান তার এক-চতুর্থাংশ মারা যান এ দেশে।

জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিশ্বে বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়েছে। ২০০০ সালে যেখানে বছরের একটি নির্ধারিত সময়ে দুইবার বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে, সেখানে এখন ওই একই সময়ে তিনবার বজ্রপাত হচ্ছে। ২০১০ থেকে ২০১৫ সালে শুধুমাত্র এপ্রিল-মে মাসেই বাংলাদেশে বজ্রপাত বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। উপকূলীয় এলাকায় এর মাত্রা আরো কয়েক গুণ বেশি।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই শতাব্দীর শেষে পৃথিবীর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তখন বজ্রপাতের হার সাড়ে ১২ শতাংশ বাড়বে। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে, বাংলাদেশে প্রতি বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৪০ বার বজ্রপাত হয়। শুধু এপ্রিল মাসের হিসাবে দেখা যায়, দেশের ৩৫টি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে যেখানে ২০১০ সালে ৬৫৮টি বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে সেখানে ২০১৫ সালে ১২৯৫টি বজ্রপাত সংঘটিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত বলেই বাংলাদেশকে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এদিকে ২০১৬-২০১৭ সালের তথ্য এখনো পাওয়া না গেলেও আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন, শুষ্ক মৌসুমে বজ্রপাতের পরিমান ২০১৫ সালের চাইতে বেড়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ-এর ২০১০ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সহকারী অধ্যাপক ও লরেন্স বার্কলে জাতীয় গবেষণাগারের ফ্যাকাল্টি বিজ্ঞানী ডেভিড রম্প বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করছেন। বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ‘সায়েন্স’ এ প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে তিনি বলেছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বজ্রপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি সম্পর্কযুক্ত। ২০০০ সালে যেখানে বছরের একটি নির্ধারিত সময়ে দুইবার বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে, সেখানে এখন ওই একই সময়ে তিনবার বজ্রপাত হচ্ছে। তাঁর হিসেবে, তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাতের হার বাড়ে ১২ শতাংশ। জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, অত্যধিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার, গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন বৃদ্ধির কারণে গোটা বিশ্বেই বজ্রপাত বাড়ছে।

বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বায়ুদূষণ, আবহাওয়ার পরিবর্তন, মোবাইল-ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করেছেন। তাছাড়া গ্রামে অধিকাংশ বাড়ি টিনের তৈরি হওয়ায় বজ্রপাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। ইদানীং ভবন নির্মাণের সময় বজ্রপাত-সহায়ক স্থাপনার ব্যবহারও কমে এসেছে। সাধারণত বছরের কালবৈশাখীর সময় বজ্রপাত বেশি হয় এবং এ সময় বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর হারও স্বাভাবিক কারণে বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের দেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।

বজ্রপাতের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞরা মানুষকে পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর আকাশে মেঘের গুড়গুড় ডাক শুনলেই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে কোনোভাবেই এ সময় ফাঁকা মাঠে থাকা যাবে না। দুর্ঘটনা এড়াতে সরকার ও গণমাধ্যমে বজ্রপাতের সময় করণীয় সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে হবে। এ ছাড়া এ সময় মোবাইল ফোন কম ব্যবহার করা ও বজ্রপাতের সময় পানির সংস্পর্শে না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৬:৩১   ৪৬৯ বার পঠিত