সোমবার, ১৯ জুন ২০১৭
আমার বাবা-মাহমুদা মায়া ( বাবা দিবসের খণ্ডানুভুতি)
Home Page » ফিচার » আমার বাবা-মাহমুদা মায়া ( বাবা দিবসের খণ্ডানুভুতি)
আমার বাব-মা’র ছয় কন্যা। আসলে আট। দু’জন মারা যাওয়াতে ছয়। আট কন্যার পরে তা’দের পুত্রসন্তান লাভ। আমার মায়ের জেদ ছিল, পুত্রসন্তান তা’র চাই-ই চাই!
যাইহোক, এতগুলো সন্তানের মধ্যে, বাবা শুধু বড়বোনের নামটা রেখেই হাল ছেড়ে দিলেন। একের পর এক কন্যাসন্তান লাভে তিনি যে খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন, তা’ কিন্তু নয়। তিনি ছিলেন উদাসীন প্রকৃতির। সংসারে থেকেও তিনি ছিলেন বাউল।
মা’র সেই তোরঙে কাঁসার থালা-গ্লাসে বড় দু’বোনের নাম খোদাই করা। ওগুলো হয়তো দাদি-নানী বা অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া। আমার বেলায় তা’রা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন অলরেডি!
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, চার দশকের মতো হবে, মেয়েদের হাতঘড়ির সেকী মহিমা তখন!
বড় দু’বোন ম্যাট্রিক পাশ করল। আত্মীয়স্বজনেরা রীতিমতো হৈচৈ বাঁধিয়ে ফেলল, যেন তা’রা কোনও অসাধ্যসাধন করে ফেলেছে। খালা-মামা’রা লন্ডন-সুইডেনে থাকে। দুই বোনের জন্য হাতঘড়ি আরও কী-কী যেন পাঠিয়ে দিল।
অথচ আমি যখন এসএসসি(ম্যাট্রিক) পাশ করলাম, নো হাতঘড়ি, নাথিং! । ‘ম্যাট্রিক পাশ দেওয়া’ ততদিনে হারিয়েছে তার মাহাত্ম্য! হাতঘড়িও তেমন মহার্ঘ থাকেনি আর! (বড় দু’বোনের পরে, সাত বছরের গ্যাপ), যে কারণেই হোক… সবাই যে হাল ছেড়ে দিয়েছিল, এটা বুঝতে আমাকে রকেট-সাইয়েন্টিষ্ট হতে হয়নি।
বহু সন্তানের ঘরে ‘মিড্ল্’-সন্তান হিসেবে আমার এহেন বঞ্চনার-অগাধ-সমুদ্রে ডিঙি-নৌকাসম আশার আলো জুগিয়েছিল— আর কেউ নয়, বাবা।
বাবা যখন রবীন্দ্রনাথের ‘সঞ্চয়িতা’ কিনে দিয়েছিল, সেখানে আমার নামটাও ছিল। সেখানে চার বোনের নাম উল্লেখ করেছিলেন বাবা। আমি তখন মোটে পাঁচ। আমার পিঠেপিঠি ছোট যে বোন, ওর নামও ছিল। আমরা খুব কম বয়সেই পড়তে শিখে গিয়েছিলাম।
এ ছাড়া আর কী-ই বা করার ছিল তখন!
“তাই বলে সঞ্চয়িতা!” সবাই ভাবছে।
হ্যাঁ, আমার বাবার জন্য খুবই স্বাভাবিক। হঠাৎ-হঠাৎ এ ধরণের কাজ বাবা বিস্তর করেছেন।
বাবার হাতে লেখা, চার বোনের নামের মধ্যে আমার নামটার দিকে আমি কতোই না চেয়ে থেকেছি! আহা!
বাংলাদেশ সময়: ১০:০৮:০১ ৪৬৬ বার পঠিত