রবিবার, ১৮ জুন ২০১৭
বাবার আদর্শে জীবন গড়ে উঠুক ( বিশ্ব বাবা দিবসের শ্রদ্ধা )
Home Page » এক্সক্লুসিভ » বাবার আদর্শে জীবন গড়ে উঠুক ( বিশ্ব বাবা দিবসের শ্রদ্ধা )‘বাবা কতদিন দেখি না তোমায়, কেউ বলে না তোমার মতো কোথায় খোকা ওরে বুকে আয়’ কিংবা ‘বাবার মতো কেউ বলে না, আয় খুকু আয়’। বাবার কথা ভাবলে কানে ভেসে আসে এই গানগুলোর সুর। বাবা ও সন্তানের সম্পর্ক যেমন নিঃস্বার্থ নির্ভরতার, তেমনি তা স্নেহে মধুর। সন্তানের চোখে বাবা হলেন নায়ক। আজ বিশ্ব বাবা দিবস। আমাদের দেশে যদিও বাবা দিবসের প্রচলন হয়েছে মাত্র কয়েক বছর আগে। মা দিবসের মতো দিবসটি অত জনপ্রিয়তাও পায়নি। তবে সন্তানের জন্য বাবার আত্মত্যাগ, পরিশ্রমও মায়ের তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ নয় মোটেই। মধ্যযুগে ইউরোপে ক্যাথলিকদের মধ্যে ১৯ মার্চ পিতৃদিবস পালনের রীতি ছিল। যিশু খ্রিস্টের পালক পিতা সেন্ট যোসেফের নামে প্রচলিত ছিল দিবসটি। স্প্যানিস ও পর্তুগিজদের মাধ্যমে এই রীতি লাতিন আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। লাতিন আমেরিকার অনেক দেশে এখনো ১৯ মার্চ পিতৃদিবস পালন করা হয়।
তবে আধুনিক বাবা দিবসের প্রচলন শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রে। মা দিবস প্রচলনে আনা জার্ভিসের সাফল্য দেখে ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে বাবা দিবস পালিত হয়। এর অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন গ্রেস গোল্ডেন ক্লেইটন নামে এক নারী। তিনি তার বাবার মৃত্যুতে শোকার্ত ছিলেন। ১৯০৭ সালে এক ভয়াবহ খনি দুর্ঘটনায় ওই এলাকার অনেক শিশু পিতৃহীন হয়। সেই মৃত পিতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই বাবা দিবসের প্রচলন করা হয়। অন্যদিকে ওয়াশিংটনের সনোরা স্মার্ট ডড নামে এক নারীও বাবা দিবস পালনের উদ্যোগ নেন। তার বাবা গৃহযুদ্ধে মারা যান। ১৯ জুন ১৯১০ সালে তার উদ্যোগে বাবা দিবস পালন হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে এই দিবস পালিত হয় এবং ছুটির দিন হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে বাবা দিবস হিসেবে পালনের রীতি প্রচলিত। বাবা দিবসে বাবাকে উপহার প্রদান, তার প্রিয় খাদ্য রান্না, তাকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার রীতি রয়েছে।
বাবা ও সন্তানের সম্পর্ক নিয়ে বিশ্বে অনেক সাহিত্য ও চলচ্চিত্র সৃষ্টি হয়েছে। শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত নাটক ‘কিং লিয়ার’-এ পাওয়া যায় বাবার প্রতি কন্যার অপরিসীম ভালোবাসার কথা। আবার ‘হ্যামলেট’ নাটকে মৃত বাবার প্রতি কর্তব্য আর মায়ের প্রতি ভালোবাসার মধ্যে দ্বন্দ্ব ফুটে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হৈমন্তী’সহ বিভিন্ন গল্পে বাবা-কন্যার মধুর সম্পর্ক চিত্রায়িত হয়েছে। তবে কন্যার প্রতি পিতার স্নেহ ও মমতার সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ রবীন্দ্রনাথের ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পটি। সেখানে জাতি-ধর্মের বাধা ভেঙে পিতৃহৃদয়ের স্নেহকে তুলে ধরা হয়েছে। রুশ সাহিত্যিক ভেরা পানোভার ‘পিতা ও পুত্র’ উপন্যাসটিও অসাধারণ একটি সৃষ্টিকর্ম। ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ চলচ্চিত্রে সন্তানের জন্য হাসিমুখে বাবার জীবনদানের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। ‘বাইসাইকেল থিফে’ও চিত্রিত হয়েছে বাবা ও শিশুপুত্রের নির্ভরতার সম্পর্ক। বাংলাদেশে ‘দ্য ফাদার’ চলচ্চিত্রে বিদেশি বাবা ও তার পালিত কন্যার সম্পর্ক ফুটে উঠেছে।
বাংলাদেশে বাবা দিবসের প্রচলন খুব পুরনো না হলেও পিতৃভক্তি এ দেশের ঐতিহ্য। বাবার আদর্শকে ধারণ, বাবার প্রতি নির্ভরতা এবং বৃদ্ধ বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে গড়ে ওঠে এ দেশের পরিবারগুলো। বাবা বৃদ্ধ হলেও তিনিই পরিবারের প্রধান হিসেবে বিবেচিত হন আমৃত্যু। বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো এ দেশের রীতি নয়। কিন্তু আজকাল অনেক সন্তান বৃদ্ধ বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেন এবং তাদের খোঁজখবরও খুব একটা করেন না। বাবা দিবস, মা দিবসের মতো দিনগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বছরের প্রতিটি দিনেই বাবা-মায়ের প্রতি যত্নশীল থাকতে হবে। বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও নির্ভরতায় জীবনকে আরও উজ্জ্বল ও মধুর করে তোলে এই দিনগুলো।
। শান্তা মারিয়া ।
বাংলাদেশ সময়: ১০:১১:৪৮ ৫১৬ বার পঠিত