শনিবার, ১০ জুন ২০১৭

কবিতা সম্ভার

Home Page » সাহিত্য » কবিতা সম্ভার
শনিবার, ১০ জুন ২০১৭



মুহূর্তের মূর্ছনা 

আমাকে প্রতীক্ষায় রেখে তুমি গ্যাছো পশ্চিমে

প্রিয়তমা, জানি তুমি ফিরবে না
উত্তরে দক্ষিণে তোমার অনেক কাজ
ঈষাণে ও নৈঋতে তোমার অনেক কাজ
অনেক কাজের ভিড়ে ভুলে গ্যাছো তুমি
তোমার প্রতীক্ষায় আমি

মানুষ ভুলে যায়
ভুলে যাওয়া মানুষের স্বভাব
বিস্মৃতির ভেতর তারা তবু গান গায়
বিস্মৃতির ভেতর তারা তবু সংসার পাতে
বিস্মৃতির ভেতর এইভাবে একদিন
ম’রে যায় তারা

মৃত্যু সহজ খুব
এবং গভীর
তবু মানুষ এই সহজকে স্পর্শ করতে ভয় পায়
তবু মানুষ মৃত্যুর গভীরে যেতে ভয় পায়
প্রিয়তমা,
দ্যাখো, মৃত্যুকে স্পর্শ ক’রে
মৃত্যুর অনেক গভীরে
আমি তোমার প্রতীক্ষায়
এ এমন এক প্রতীক্ষা যেখানে যন্ত্রণা নেই
এ এমন এক প্রতীক্ষা যেখানে বিষাদ নেই
এবং
এই প্রতীক্ষার ভেতর এই অপেক্ষার ভেতর
কোনো ক্লান্তি নেই

ক্লান্তিহীন সময়ের প্রচ্ছদে
তোমারই মুখ উদ্ভাসিত, প্রিয়তমা
আমি ওই মুখে আরও কিছুটা সবুজ
আরও কিছুটা হলুদ
এবং আরও কিছুটা নীলের ছটা
মিশিয়ে দিতে চাই
এবং
তোমার চোখের তারায়
এঁকে দিতে চাই সূর্যের বর্ণ ও বিভা
এবং চুলের খোঁপায় গুঁজে দিতে চাই
রাত্রির আঁধার

রাত্রি অর্থ শেষ অধ্যায় নয়
প্রিয়তমা,
ভয় পেয়ো না
অন্ধকারও মনোরম
এবং
হলুদ অর্থ শেষ পরিণতির দিকে যাওয়া নয়
নীল অর্থ বেদনার ভাষা নয়
এইসব ভুল শিক্ষার পাঠ্যক্রম থেকে
এইসব ভ্রষ্ট শিক্ষার পাঠ্যক্রম থেকে
বেরিয়ে এসো
শোনো, মৃত্যু অর্থ শেষ নয়
বরং
মৃত্যু একটি সম্ভাবনা
একটি নতুন পথ

পথ থেকে পথে
অনেক সম্ভাবনার ভেতর
আমি হেঁটেছি
হেঁটেছি অন্ধকারে
এবং আলোর গুহায়
এবং হাঁটতে হাঁটতে আলো ও অন্ধকারের
বিপরীতে চ’লে গেছি
সেখানে,
সময়হীনতার ভেতর
অনবরত হেঁটেছি
এই হেঁটে যাবার ভাষা আমি রপ্ত করেছি
তোমারই কাছে
প্রিয়তমা,
এখন তোমার প্রতীক্ষায়
এই যে স্থবির আমি
এই স্থবিরতাও আমি রপ্ত করেছি তোমারই কাছে

এবং তোমার শরীরের নন্দন থেকে
আমি আবিষ্কার করেছি ভালোবাসা
এই ভালোবাসাকে শিল্পকলা বলে মানুষ
এই ভালোবাসাকে সুগন্ধী বলে মানুষ
এই ভালোবাসাকে প্রাণ-ঐশ্বর্য বলে মানুষ
আমি প্রতীক্ষায় থেকে দেখতে পাচ্ছি
মানুষ তোমার শীররকে আঁকড়ে বেঁচে থাকতে চাইছে
মানুষ তোমার ভালোবাসা
তোমার শিল্পকলা
তোমার সুগন্ধী
এবং তোমার প্রাণ-ঐশ্বর্যের পাশে কাঁদছে
জেনো, মানুষের এই কান্না পবিত্র
আর এই পবিত্র জলের ধারাই তো সমুদ্র
তুমি সমুদ্রের পাশে এসে বোসো
কখনও ইচ্ছে হ’লে দিগন্তে তাকিয়ো
দিগন্তে মেঘের ভেতর
অনেক অজানা সত্য লুকিয়ে থাকে
সেই সত্য মিলিয়ে যাবার আগে
একটি দুটি সত্য তুমি হাতে তুলে নিয়ো
ভুলে যেয়ো না
তোমার হাতই একদা নির্মাণ করেছিলো ইতিহাস
সত্যের আঘাতে দীর্ণ হ’তে সবাই পারে না
সত্য নির্মম
সত্য বহুরৈখিক
এই নির্মম বহুরৈখিকতায় তুমি দীর্ণ হও
পশ্চিমে, উত্তরে-দক্ষিণে
ঈষাণে-নৈঋতে
যেখানেই থাকো তুমি,
প্রিয়তমা,
সত্যের আঘাতে যদি দীর্ণ হও
তবে তুমি যন্ত্রণার ভাষা বুঝবে
তবে তুমি বিষাদের ভাষা বুঝবে
এবং
বেদনা তোমাকে স্পর্শ করবে
এবং তখন তুমি
প্রতীক্ষা শব্দটির সঠিক অর্থ জানবে

আমি প্রতীক্ষায় আছি তোমার
এ এমন এক প্রতীক্ষা যা হিরন্ময়
এ এমন এক প্রতীক্ষা যা সময়হীন
জীবন ও মৃত্যুর বাইরে
আরেকটি সত্যের ওপর আমি দাঁড়িয়ে আছি
এখানে অতীত হ’লো পাখির পালকের মতো শুভ্র
যা আমি স্পর্শ ক’রে আছি
এখানে ভবিষ্যৎ হ’লো চুম্বনের মতো গাঢ় একটি রঙ
যা আমার ওষ্ঠে লেগে আছে
আমার অতীত নেই
বর্তমান নেই
ভবিষ্যৎ নেই
একটি সমান্তরাল সময়ের ভেতর
একটি সমান্তরাল সময়হীনতার ভেতর
আমি তোমার প্রতীক্ষায় আছি

একটা শতাব্দী আমার কাছে একটি নিমেষ মাত্র
প্রিয়তমা,
এইভাবে তোমার প্রতীক্ষায় আমি
কোটি কোটি বছর পার ক’রে দেবো মুহূর্তের মূর্ছনায়
এসব তোমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হ’তে পারে
কিন্তু আমি তো বলেছি সত্য বহুরৈখিক
সত্যের শরীরে অনেক রঙের বিভা
এই বিভার ভেতর আমি ব’সে আছি
আমি প্রতীক্ষায় আছি তোমার
আমাকে প্রতীক্ষায় রেখে তুমি গ্যাছো পশ্চিমে
তুমি ফিরে না আসা অবধি
আমি প্রতীক্ষায় থাকবো তোমার
শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে যাবে
আমি প্রতীক্ষায় থাকবো তোমার
তুমি ফিরে না আসা অবধি
***

-সংগৃহীত

বাংলাদেশ সময়: ১৪:০১:৩৪   ৪৮১ বার পঠিত