বুধবার, ৩১ মে ২০১৭
শিক্ষার্থী বনাম শিক্ষক,প্রেক্ষিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Home Page » প্রথমপাতা » শিক্ষার্থী বনাম শিক্ষক,প্রেক্ষিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়বঙ্গ-নিউজঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতকড়া পরানোর ঘটনায় আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ৫ জুন হাজির হতে বলেছে হাইকোর্ট৷ হাসপাতালের এক উপপরিদর্শক ও দুই কনস্টেবলকেও হাজির হতে বলা হয়েছে৷
এর আগে গত সোমবার ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আশুলিয়া থানার ওসিকে ৩১ মে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন৷ সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ-ভাংচুরের ঘটনায় আটক ঐ শিক্ষার্থীকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতকড়া পরানোর ব্যাখ্যা দিতে আশুলিয়ার ওসিকে তলব করেছে হাইকোর্ট৷ এছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতকড়া পরানো কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে ওই রুলে৷
২৭ শে মে বিকালে পুলিশের হস্তক্ষেপে আন্দোলনকারীরা রাস্তা ছেড়ে দেন৷ পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে তার সাথে দেখা করতে চাইলে তিনি বের না হলে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং সেখানে ভাংচুর চালায়৷ এরপর উপাচার্য সিন্ডিকেট সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেন৷ সিন্ডিকেটের সভা শেষে গভীর রাতে পুলিশ উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে থাকা ১০ ছাত্রীসহ আন্দোলনকারী ৪২ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়৷ তবে পরদিন বিকেলে আটক শিক্ষার্থীদের জামিন দেয়া হলেও কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে এক ছাত্রকে হাতকড়া পরিয়ে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার ছবি আসে৷
গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, নাজমুল হোসাইন নামের ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪২তম ব্যাচের ছাত্র৷ তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোটের ও জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক৷ আন্দোলনের মধ্যে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়৷ পরে আশুলিয়া থানা পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম তাকে সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এনাম মেডিকেলে নিয়ে যায়৷ সেখানে গভীর রাতে বেডে শোয়া অবস্থায় নাজমুলের হাতে হাতকড়া পরানো হয় বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ৷
এ বিষয়ে সোমবার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম ও ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া৷
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অসুস্থ অবস্থায় কাউকে হাতকড়া পরানো পুলিশ রেগুলেশনসের ৩৩০ (এ) বিধির লঙ্ঘন৷
রেজিনা আহমেদ স্বর্ণা শিক্ষার্থীদের দাবির কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘‘এই তো ছিল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি৷ উপাচার্য কোনো সমাধান না দিয়ে গেল, তারপর পেটোয়া বাহিনী দিয়ে ছাত্রদের পেটালো, প্রশাসন মিথ্যা আশ্বাস জানিয়ে প্রতারনা করলো, পুলিশ দিয়ে হামলা চালালো৷’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে উদ্দেশ করে সেলিম অর্ণব লিখেছেন, ‘‘মাননীয় জাবি উপাচার্য, আপনি হল ভ্যাকেন্টের নির্দেশ দেয়ার আগে একবারও কি ভেবে দেখেছেন ঠিক প্রথম রোজার দিনে এতগুলো ছেলে-মেয়ে এরা কোথায় যাবে? কিংবা সবাই কী খাবে? আপনি শিক্ষক-উপাচার্য এগুলো পদের আগে একজন মা, এটা কী অস্বীকার করতে পারবেন? শিক্ষার্থীদের পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেয়ার আগে একবারও কি আপনার মনে হয়নি এমন জঘন্য অন্যায় আপনার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ঘটলে আপনার অবস্থান কী থাকত?’’
তিনি লিখেছেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল সামান্য৷ তারা তাদের সহপাঠী, বন্ধু কিংবা ছোট ভাইয়ের লাশ নিয়ে ক্যাম্পাসে জানাযা দিতে চেয়েছে৷’’
রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, ‘‘উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম জানিয়েছেন, বাসভবন ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়৷ ম্যাডাম, ১৪ হাজার শিক্ষার্থীই মামলা খেতে তৈরি আছে, পুলিশ নিয়ে আসেন৷ অথবা ওদের মাফ করেন৷’’
এদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আজ আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ৷ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ৷
সূত্রঃDW
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৩:৩০ ৪৬০ বার পঠিত