বুধবার, ৩১ মে ২০১৭

সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই জোরদারে ঢাকা-ভিয়েনা ঐকমত্

Home Page » জাতীয় » সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই জোরদারে ঢাকা-ভিয়েনা ঐকমত্
বুধবার, ৩১ মে ২০১৭



যৌথসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশে বক্তব্য রাখছেন অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ক্রিশ্চিয়ান কার্ন। (ছবি: ফোকাস বাংলা)
বঙ্গ-নিউজঃ পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করার ব্যাপারে ঢাকা-ভিয়েনা ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ক্রিশ্চিয়ান কার্ন বলেন, ‘আমরা পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার ও পৃথিবীর স্থায়িত্বের বিষয়ে একমত হয়েছি।’ মঙ্গলবার অস্ট্রিয়ার ফেডারেল চ্যান্সেলারিতে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তারা এই ঘোষণা দেন।

বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার এই অস্ট্রিয়া সফর ঢাকা ও ভিয়েনার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে গতিশীলতা সঞ্চার করবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমার এই অস্ট্রিয়া সফর দু’দেশের সম্পর্কের মধ্যে আরও গতিশীলতা আনবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, আমি ও অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর যৌথভাবে খুঁজে বের করেছি, দু’দেশের মধ্যকার সহযোগিতার প্রধান ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে-কৃষি, পশু পালন, যোগাযোগ, ব্যবসা ও বিনিয়োগ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বৈশ্বিক প্রেক্ষপটে বিশেষ করে বৈশ্বিক সন্ত্রাস ও উগ্রচরমপন্থা নিয়েও মত বিনিময় করেছি।’

বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়ার ঘনিষ্ঠতার সূচনা হয় ‘৭০ দশকের গোড়ার দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অস্ট্রিয়ার তৎকালীন সরকার প্রধান ব্রুনো ক্রিসকির নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর অনেক পথ অতিক্রম করেছে। দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, স্বাস্থ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তাদের মূল স্রোতে নিয়ে আসা, সামাজিক নিরাপত্তাবলয় কর্মসূচিকে আরও পরিব্যপ্ত করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত করেছে। আমাদের সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নম্বর বোর্ডই সেই সাক্ষ্য দিচ্ছে-বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের রোল মডেল বলে স্বীকৃত। আমরা এ বছর ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি অর্জন করেছি।’ এ সময় তিনি তাকে ও তার সফরসঙ্গীদের ভিয়েনায় উষ্ণ আতিথেয়তা প্রদর্শন করায় অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলরকে ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে একজন সাংবাদিক বাংলাদেশে ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাত হানার সম্পর্কে প্রশ্ন ‍তুললে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ধরনের সাইক্লোন ষড়ঋতুতে সাজানো এই দেশটায় বিশেষ কোনও ঘটনা নয়। বিশেষ করে এ ধরনের সাইক্লোন বাংলাদেশে আঘাত হানার আর একটি কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এই সাইক্লোনের বিষয়ে সরকার দ্রুত ও সার্বিক পদক্ষেপ নেওয়ায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশেই ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে আমাদের সক্ষমতার বিকাশ প্রশংসনীয়।

বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন মিলিটারি কায়দায় কখনও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, যতটা না সম্ভব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে।’

বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাইনা কোনও সংঘাতের কারণে কোনও দেশের নাগরিক অন্য দেশে শরণার্থী হোক।’

অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ক্রিশ্চিয়ান কার্ন বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অস্ট্রিয়ায় প্রথম সরকারি সফর। এতে ঢাকা ও ভিয়েনার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ‘৭০-এর দশকের গোড়ার দিকেই একটি গর্বিত স্বাধীন জাতি হিসেবে জন্মলাভ করলেও এই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক কাছাকাছি ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরের মধ্যদিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।’

বৈঠকের পর, ফরেন অফিস কনসালটেশন বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়।

আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: বাসস

বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৯:৫৫   ৩০০ বার পঠিত