মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০১৭
গাজীপুরে সরকারি কর্মকর্তারা বন খাচ্ছেন
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » গাজীপুরে সরকারি কর্মকর্তারা বন খাচ্ছেনফজলুল হক গাজীপুর প্রতিনিধি বঙ্গ নিউজঃ গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ২টি রেঞ্জের আওতায় বন বিভাগের জমিতে হাজার হাজার ঘর নির্মাণ করে জমি দখলের মহোৎসব চলছে। জমি দখলের সাথে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শিল্প কারখানার মালিক ও অতিদরিদ্র লোকজনও জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে রাতের আধারে ঘরবাড়ি, শিল্পকারখানা গড়ে উঠায় শত শত একর বন বিভাগের জমি থেকে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনের গাছ। বনের গাছ উজাড় আর জমি দখলের সাথে বনদস্যু, ভূমিদস্যু ও বন বিভাগের চন্দ্রা বিটের অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
কালিয়াকৈর রেঞ্জের চন্দ্রা বিটের বিভিন্ন স্থানে বিট কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ হচ্ছে অহরহ। পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার শওকত হোসেন ড্রাইভার বনের জমি দখল করে ৭০ হাত লম্বা একটি চার চালের ঘর তৈরি করেছেন। এ নিয়ে চন্দ্রা বিট অফিসের কর্মকর্তা মুরাদ একাধিকবার ওই বাড়িতে গিয়েও উচ্ছেদ না করে অজ্ঞাত কারণে ফিরে এসেছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
অপর দিকে কালামপুর এলাকার পুরাতন সিনেমা হল সংলগ্ন বনের জমিতে বহুতল একটি ভবনের কাজ করছেন সিরাজ উদ্দিন নামের এক লোক। তবে ওই ভবনের মালিক সিরাজ উদ্দিনের দাবী, স্থানীয় একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে চন্দ্রা বিট কর্মকর্তাসহ বনের কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এখানে বহুতল ভবনের কাজ তিনি করছেন।
এদিকে হরতুকিতলা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে বাবুল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি ২০ হাত লম্বা একটি চারচালা ঘর তুলে ভিটি পাকাকরণ কাজ করছেন। এ সময় ৭-৮ জন রাজমিস্ত্রিকে কাজ করতে দেখা গেছে। এছাড়া চন্দ্রার কালামপুর এলাকায় শিল্পকুঞ্জ পার্কের সামনে ৪ তলা বিশিষ্ট আরেকটি ভবনের কাজ করছেন রাজমিস্ত্রিরা।
কালিয়াকৈর রেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, কালিয়াকৈর রেঞ্জের আওতায় বোয়ালী, কাশিমপুর, বাড়ইপাড়া, মৌচাক, রঘুনাথপুর, চন্দ্রা ও গোবিন্দপুর নামের ৭টি বিট ও ভান্নারা এবং গোবিন্দপুর নামের ২টি সাব বিট অফিস রয়েছে। অপরদিকে কালিয়াকৈরের কাচিঘাটা রেঞ্জে কাচিঘাটা সদর, জাথালিয়া ও খৈলশাজানি নামের ৩টি বিট অফিস রয়েছে। কালিয়াকৈর রেঞ্জের আওতায় সিএস মূলে গেজেটভুক্ত মোট বনভূমির পরিমাণ ১২ হাজার ৭ শত ৯৫ দশমিক ১৯ একর। ওই দুই রেঞ্জের জবর দখলকৃত বনভূমি রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৭ শত ২০ দশমিক ৬৬ একর। কাচিঘাটা রেঞ্জের আওতায় ৯টি মৌজায় মোট বনভূমির পরিমাণ ৯ হাজার ৬ শত ৮৯ দশমিক ৩৫ একর। ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে প্রায় ২ হাজার ৪ শত ৫৮ দশমিক ৭৭ একর।
পূর্ব চান্দরা এলাকার শহিদুল আলম জানান, কালিয়াকৈর রেঞ্জ ও কাঁচিঘাটা রেঞ্জের আওতায় বনবিভাগের জমি দখল করা হয় এক শ্রেণির দালালদের মাধ্যমে। ওইসব দালালরা বন কর্মকর্তাদের সাথে মোটা টাকা লেনদেনের মাধ্যমে জমি দখল করতে সহায়তা করে।
চন্দ্রা এলাকায় ওয়ালটন কারখানার সামনের সড়কের পূর্ব পাশে বহু লোকের কাছ থেকে বন কর্মকর্তারা ২০ হাজার টাকা করে নিয়ে ঘর তৈরি করতে সহায়তা করেন। শুধু ওই এলাকা ছাড়াও চন্দ্রা, কালামপুর, ডাইনকিনি, পূর্বচন্দ্রা (পল্লীবিদ্যুৎ), খাড়াজোড়া, বাড়ইপাড়া, সফিপুর, রাখালিয়াচালা, মাঝুখান, মৌচাক সদরচালা, কাশিমপুর, রঘুনাথপুর, পূর্ব মৌচাক, লস্করচালা, মাদবপুর এলাকায় ঘরবাড়ি তৈরি করতে সহায়তা করেছেন।
এ ব্যাপারে চন্দ্রা বনবিট কর্মকর্তা মুরাদ মিয়া, বন বিভাগের জমি দখলের খবর পাওয়া মাত্র বন্ধ করে দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান করার পর পুনরায় দখল করছে একটি চক্র। গাজীপুর অঞ্চলের বিভাগীয় বন সহকারী বন কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, বনের জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৪:২১ ৪৪৩ বার পঠিত