রবিবার, ২১ মে ২০১৭

নিজের অজান্তে একেকটি শিক্ষিত অভদ্র মানুষ তৈরী করছি নিজের ঘরেই- সানী সানোয়ার

Home Page » ফিচার » নিজের অজান্তে একেকটি শিক্ষিত অভদ্র মানুষ তৈরী করছি নিজের ঘরেই- সানী সানোয়ার
রবিবার, ২১ মে ২০১৭



 Image result for অভদ্র শিশু

(১)

বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম, কেউ ফ্লোরে আবার কেউ বা খাটে বসে। আমি পা ছড়িয়ে ফ্লোরে আয়েশ করে বসে। এক বন্ধুর ছোট্ট মেয়ে আমার পা ডিঙ্গিয়ে এপাশ-ওপাশ যাচ্ছে আর আসছে। প্রতিবারই সে তার শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে আমার পা’য়ে একটি করে লাথি মেরে যাচ্ছে। ছোট বাচ্চার লাথি আর তেমন কি!

-আম্মু, পড়ে যাবা তো!

-না, পলব না

এবার আমি আমার পা’টা গুটিয়ে নিলাম। কারণ মেয়েটি সত্যি সত্যি পড়ে যেতে পারে। কিন্তু আমার পা গুটিয়ে নেয়াটা বাবুর ঠিক পছন্দ হল না। সে কাছে এসে আমার গালে একটা কসে চর মেরে বসল। আমি মূহুর্তের মধ্যে ‘ব্ল্যাক আউট’ হয়ে গেলাম। তবুও হাসতে থাকলাম। ছোট্ট বাচ্চার থাপ্পর আর তেমন কি! কিন্তু ব্যথা তো গালে লাগল না, মনে লেগে গেল। ব্যথাটা বাচ্চা তো দিল না, দিল তার মা-বাবা। আমার বন্ধু পত্নী ও বন্ধু তাদের মেয়ের এই কীর্তি দেখে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছে আর বলছে,

- ও সবার সাথেই এমন করে। যা দুষ্টু হচ্ছে না!

ঘরে উপস্থিত বাকি বন্ধুরা সবাই একটু অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপ রইল। ঘরের সবার বাচ্চা-কাচ্চা অনুশাসনের অভিজ্ঞতা কমবেশী রয়েছে। তাই সেই বন্ধু পরিবারের এই নির্লিপ্ততার সাথে কেউ একমত হতে পারল না।

(২)
এক আত্মীয় বাসার ড্রইং রুমে বসে আছি। চারিদিকে খান্দানীর ছোঁয়া। বেশ বড়লোক। পানি তৃষ্ণায় কাতর হয়ে এক গ্লাস পানি চাইলাম।

একটু পর পানি আসল,

-আঙ্কল, আসসালামু আলাইকুম। এটা আপনার পানি। আইস আলাদাভাবে নিয়ে এসেছি। কয়টা আইস দিব?

-না, আম্মু তোমার দিতে হবে না। আমি নিজেই নিয়ে নিচ্ছি।

-আব্বু, একটা ফোনে আছেন, একটু পর আসছেন। এই ফাঁকে আপনার সাথে একটু গল্প করতে চাই।

-তাই? বল, কি গল্প করবে?

-আচ্ছা, আপনি নাকি ডিটেক্টিভ। আচ্ছা যেকোন একটা আসামী সম্বন্ধে কিছু বলবেন? খুব দুর্ধর্ষ কোন আসামী।

….. গল্প চলতে থাকল তার বাবা না আসা পর্যন্ত।

(৩)
ভার্সিটি ক্যাম্পাসে পূণর্মিলনী অনুষ্ঠানে এক বন্ধুর সাথে দীর্ঘদিন পর দেখা। সে দু’বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে। ফুটফুটে বাচ্চা দু’টা যেন পুরাই বন্ধুর ফটোকপি। ছেলেটার বয়স ৮/৯ বছর।

-বাবা, তোমার নাম কি?

-তোর নাম কি?

একটা ধাক্কা খেলাম। খুব কষ্টে ‘তুই’ শব্দটা সামলে নিলাম। মুখে হাসি হাসি ভাবটা রেখেই উত্তর দিলাম-

-আমার নাম সানী। তোমার নাম?

-আমার নাম কমু না।

-কেন বলবা না? তুমি আমার উপর রাগ করেছ?

- তুই যা, আমি এখন খেলমু।

বন্ধু লজ্জা পেয়ে গেল। বন্ধু পত্নী লজ্জা এড়াতে শুধু বলল,

-বাবা, যাও তুমি খেল গিয়ে।

………

৩ টা উদাহারণের মধ্যে এমন ২টা খারাপ পরতেই পারে, তাই না? কিন্তু এরকম ২টা করে গুনতে গুনতে যখন পুরো দেশেজুড়ে ২০লাখ হবে তখন কি হবে?

স্নেহের আতিসাহ্যে আজ যে শিশুকে আমরা আদবকায়দা ছাড়া বড় করছি সেই শিশুটিই তো আগামী কাল কোন একটি পেশার হাল ধরবে। আর তার জন্যই হয়তো ঐ পেশাটি হবে অনেকের কাছে ঘৃণিত। তাহলে সমালোচনায় মুখর আমি নিজেই এ কি জিনিস বিনিয়োগ করছি জাতির জন্য?

পৃথিবী জয় করে ফেলছি, কত জনের কত সমালোচনা করছি, কত জনের পেশাকে খাটো করছি। অথচ, নিজের সন্তানকে ভদ্রতা, আন্তরিকতা, সামাজিকতা এবং আচার-নিষ্ঠা শিখাতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত স্নেহের কারণে নিজেই অন্ধ হয়ে বসে আছি।

এভাবেই নিজের অজান্তে একেকটি শিক্ষিত অভদ্র মানুষ তৈরী করছি নিজের ঘরেই। সবাই না, কেউ কেউ।

Image may contain: 1 person, close-up and indoor

সানী সানোয়ার

এডিসি , ডিএমপি

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪১:০৮   ১৮৬২ বার পঠিত