শনিবার, ১৩ মে ২০১৭

পাত্র ৯৫, পাত্রী ৮৫!

Home Page » এক্সক্লুসিভ » পাত্র ৯৫, পাত্রী ৮৫!
শনিবার, ১৩ মে ২০১৭



পাত্র ৯৫, পাত্রী ৮৫!ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রায়গঞ্জের অশোকপল্লির পুষ্পপূর্ণ ভবন। বাইরে থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড় চলছে। ছাদে প্যান্ডেল বাঁধা। গোটা বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো। বাজছে সানাই। লোকজন বাড়িতে ঢুকছে, বেরোচ্ছে, ব্যস্ততা তুঙ্গে। কিন্তু বিয়েটা কার? বাড়ির ছেলের নাকি মেয়ের? কারোরই নয়, বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন খোদ বাড়ির কত্তা-গিন্নি।

পাত্রের নাম অধীরচন্দ্র দাস। বয়স ৯৫। আর পাত্রী শোভারানি দাসের বয়স ৮৫। অধীরবাবুর সঙ্গে শোভদেবীর বিয়ে হয়েছিল যখন শোভাদেবীর বয়স ১৪। তারপর এত বছরের সংসার। পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ের মা-বাবা। কিন্তু হঠাৎ এই বুড়ো বয়সে আবার কেন বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন দাস দম্পতি?

আসলে এই কর্মব্যস্ত জীবনে ছেলে, মেয়েরা কেউই কাছে থাকে না। যে যার নিজের সংসারে ব্যস্ত। তাই সকলকে একজায়গায় আনতে দাদা-দাদির ৭০তম বিবাহবার্ষিকীতে আবার বিয়ে দেওয়ার আয়োজন করল নাতি-নাতনিরা। ক’দিন আত্মীয়-স্বজন সকলে মিলে একসঙ্গে বেশ হই হট্টোগাল করে কাটবে। সঙ্গে জমিয়ে খাওয়াদাওয়াও করা যাবে। নাতি-নাতনিদের এই আবদার ফেলতে পারেননি তাঁরা। তাই গতকাল ফের একবার বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন অধীরবাবু ও শোভাদেবী। গয়নাগাটি পরে, বেনারসি শাড়িতে কনের সাজে সেজেছিলেন ৮৫ বছরের পাত্রী। কম যাননি পাত্রও। ধুতি-পাঞ্জাবি থেকে মাথায় টোপর বাদ যায়নি কিছুই। রীতি রেওয়াজ মেনে মালাবদল, সিঁদুরদান করে আরও একবার সাতপাকে বাঁধা পড়লেন অধীরবাবু ও শোভাদেবী।

অশোকপল্লির এই অভিনব বিয়েবাড়িতে পাড়া-পড়শি, আত্মীয়-স্বজন মিলে প্রায় ১৫০ জন নিমন্ত্রিত ছিল। মেনুতে মাছ, মাংস, মিষ্টি, চাটনি সব ছিল। আর শেষ পাতে রাখা হয়েছিল আইসক্রিম। সেই কোন ছোটো বয়সে বিয়ে হয়েছিল, সেদিনের কথা তেমন কিছু আর এবয়সে মনে ছিল না। তাই আরও একবার করে নিয়ে বেশ খুশি শোভারানিদেবী। বলেন, “১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। আমাদের পাঁচ ছেলে তিন মেয়ে। কিন্তু আজকালকার ব্যস্ততায় অনেকেই এখন দূরদূরান্তে থাকে। কেউ বহরমপুর, কেউ কলকাতা। নাতিপুতিরাও এখন নিজের নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তাই সকলকে এক ছাতার তলায় আনতেই বিয়ের পরিকল্পনা। ফের মালাবদল করলাম স্বামীর সঙ্গে। সবাই এসেছে। খুব ভালো লাগছে। ”

কথা বলতে এখন একটু অসুবিধা হয় অধীরবাবুর। ভালো করে করে বলতে পারেন না। তাও বললেন, “এখন সর্বত্র ছোটো পরিবারের কনসেপ্ট। কিন্তু বৃদ্ধাশ্রম বা ছোটো পরিবার নয়, যৌথ পরিবারেই শক্তি। বাস্তবে তা আর হয়ে ওঠে না। কটা দিনতো সকলে একসঙ্গে থাকতে পারি। তাই ফের বিয়ের পিঁড়িতে বসেছি। দ্বিতীয়বার এভাবে বিয়ে শুনে পরিজনরাও হাসিমুখে এসেছেন। ৭০তম বিবাহবার্ষিকীতে আবার বিয়ে করলাম। বেঁচে থাকলে একশোতম বিবাহবার্ষিকীতে এভাবেই বিয়ে করব।

বাংলাদেশ সময়: ২০:০৭:৪৬   ৩৬৯ বার পঠিত