বুধবার, ১০ মে ২০১৭

লালমনিরহাটে তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিকের বোতল বাড়ি !

Home Page » এক্সক্লুসিভ » লালমনিরহাটে তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিকের বোতল বাড়ি !
বুধবার, ১০ মে ২০১৭



 

বঙ্গ নিউজঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম। হাতীবান্ধা থানা প্রতিনিধি :ব্যাতিক্রমী বোতল বাড়ি নির্মান করে আলোরন সৃষ্টি করেছেন এক দম্পতি। দেশের প্রথম প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক দম্পতি।
কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত নওদাবাস গ্রামে আব্দুল বারী ছেলে রাশেদুল আলম ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন। প্রায় ১৭ শ স্কয়ার ফিট বাড়ি তৈরীর কাজ প্রায় শেষের দিকে। যেখানে নেই কোন ইটের ব্যবহার। তবে আকর্ষনীয় ওই বাড়ি দেখেতে আশপাশের গ্রামসহ অনেক দূরদূরন্তের উৎসুক মানুষের ভিড় জমাচ্ছেন।সরেজমিনে কথা বলে জানা গেছে, রাশেদুল আলম ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন দুই জনেই ঢাকার শেখ বোরহান উদ্দিন পোষ্ট গ্রাজুয়েট কলেজে অস্থায়ী ভাবে শিক্ষকতা করতেন। তাদের দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রাফিদুল মানসিকভাবে অসুস্থ। তাই শহরের কোলাহল ছেড়ে ও চিকিৎসকের পরামর্শে দূষন মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেলেকে বড় করতে চলতি বছর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন তারা।
ফলে নিজেদের একটি বাড়ির প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে ইন্টারনেটের সাহায্যে স্বল্প খরচ আর পরিবেশ বান্ধব বাড়ির তৈরীর ফর্মূলা খুঁজতে থাকেন ওই দম্পতি।প্রযুক্তির সাহায্যে জানতে পারেন পরিত্যাক্ত প্লাসটিকের বোতল দিয়ে ইকো হাউস নামে চমৎকার বাড়ি তৈরী করছেন জাপানীরা। স্বামী-স্ত্রী দু‘জনরেই পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র ছিল বলে বিষয়টি নিয়ে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেন তারা। তবে শুরুতে অনেকেই তাদের ওই প্লাস্টিকের বোতলের তৈরী বাড়ি করা নিয়ে হাসি তামাশা করেছে ঠিকই।
কিন্তু নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছপা হননি তারা। প্রয়োজনীয় প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করে মিস্ত্রি দিয়ে চালিয়ে যান বাড়ি তৈরীর কাজ। যা বর্তমানে প্রায় শেষের দিকে। আর সেই বাড়ি যখন অনেক দূরদূরন্তের মানুষজনও দেখতে আসছেন। তখন গর্বে বুক ভরে যায় ওই দম্পতির। কারণ পরিবশে বান্ধব বাড়ি তৈরি করে এক সময় হয়তো দেশের মানুষের কাছে বোতল হাউজের উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত লাভ করতে পারেন রাশেদুল-আসমা দম্পতি।
১৭ শ স্কয়ারফিট বসতভিটায় চার রুমের থাকার ঘর, দুটি বাথরুম, রান্নাঘর ও বারান্দা তৈরীতে সর্বত্র বিভিন্ন সাইজের বোতল ব্যবহার করেছেন তারা। এমনকি বাথরুমের সেফটিং ট্যাংক ও মেঝেতে ব্যবহার করা হয়েছে প্লাসটিকের বোতল। বাড়ির ভিত্তি মূলে ১ লিটার এবং দেয়ালে ব্যবহার করা হয়েছে হ্ফা লিটার প্লাসটিকের বোতল। প্লাসটিকের বোতলে বালি ঢুকিয়ে তা ইট হিসেবে সিমেন্ট দিয়ে লাগানো হয় বাড়ির কাজে।
বোতলে বালি ব্যবহার করায় বোতল স্বাভাবিক ইটের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ গুন বেশি শক্ত হয় বলে দাবী করেন বাড়ির মালিক রাশেদুল। ওই বালি গরমে তাপ শোষণ করে ঘরকে অপেক্ষাকৃত যেমন ঠান্ডা রাখবে। তেমনি অন্যান্য ইটের বাড়ি থেকে বেশ মজবুত আর শক্ত হবে বলে জানান তিনি।
বাড়ি তৈরীতে নিয়োজিত রাজমিস্ত্রী রুদ্রেশ^র রায় বলেন, ‘সারা জীবন মানুষকে ইট দিয়ে বাড়ি তৈরী করে দিয়েছি। এবার প্লাসটিকের বোতল দিয়া বাড়ি তৈরী করে দিতে খুবই ভালো লাগছে। তবে ওই বাড়ি তৈরীর সমস্ত দিকনির্দেশনা মূলত রাশেদুল আর তার স্ত্রী আসমা খাতুন দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
বাড়ির মালিক রাশেদুল আর তার স্ত্রী আসমা খাতুন জানায়, তাদের এ বাড়ি করতে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার প্লাসটিকের বোতল প্রয়োজন হয়েছে। তাই বোতল কিনেছেন ৬০ মন। প্রতি কেজি বোতল প্রকার ভেদে কিনতে হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। টিনের চালা বাদে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে বাড়ির পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন ওই দম্পত্তি। চলতি বছরের ৮ ফেব্রæয়ারী বাড়ির কাজ শুরু করেন তারা। বর্তমানে প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জের প্রবীন সাংবাদিক শেখ আব্দুল আলিম জানান, দেশে পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে যে বাড়ি করা যায়, তা রাশেদুলের এই বাড়িটি না দেখলে বিশ্বাস হতো না। তার এই বাড়িটি দেখে এলাকার অনেকেই উদ্ধুব্ধ হচ্ছেন আবার অনেকে তাদের কাছ থেকে বাড়ির নকশা করে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান বলেন, স্বল্প খরচে তৈরী প্লাস্টিকের বোতলের বাড়িটি দেখে এসেছি। এটি পরিবেশ বান্ধব।

বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৮:৩৩   ৫৩৬ বার পঠিত