সোমবার, ৮ মে ২০১৭
ভারত্তোলক মাবিয়া এখন টিভি বিজ্ঞাপনের মডেল
Home Page » খেলা » ভারত্তোলক মাবিয়া এখন টিভি বিজ্ঞাপনের মডেল
বঙ্গ-নিউজ: রান এনার্জি বারের মডেল হয়েছেন ২০১৬ সালে সাফ গেমস ভারোত্তলনে সোনা বিজয়ী মাবিয়া আক্তার সীমান্ত।
শরীয়তপুরের মেয়ে মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। বাবা মায়ের সাথে ঢাকায় থাকেন। খেলোয়াড় কোটায় চাকরি করেন বাংলাদেশ আনসার বাহিনীতে। শৈশব থেকেই খেলার প্রতি হৃদয়ের টান। মনটা খেলাতেই পড়ে থাকে। বলতে গেলে স্পোর্টস ধ্যানজ্ঞান। আর সেই টান থেকেই ভারত্তোলনে প্র্যাকটিস শুরু। এর পরের গল্পতো সবার জানা। জীবনের লক্ষ্যও এখন ভারত্তোলনে দেশের হয়ে নেতৃত্ব দেওয়া। দেশের জন্য কাজ করা। দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম বয়ে আনা।
অন্তঃপ্রাণ খেলার মানুষ মাবিয়া ভারত্তোলন থেকে টিভিসির মডেলিং এ কীভাবে আসা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবারই মনের গহীনকোণে জমানো কিছু স্বপ্ন থাকে। খেলার পাশাপাশি স্বপ্ন দেখতাম মডেলিং করবো। ছোট বেলায় টিভিতে সিনেমা, নাটক ও বিজ্ঞাপনে প্রিয় অভিনেতাদের অভিনয় দেখে ইচ্ছেটা প্রবল হতে থাকে। বলা চলে স্বপ্ন দেখতে দেখতে বড় হওয়া। এর পর ২০১৬ সালে সাফ গেমসে সোনা বিজয়। মূলত এ সোনা জয়ই পাল্টে দিয়েছে আমার জীবনধারা। এর এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয় নি।
প্রথমেই অফার এলো স্কয়ার এর জয়া সেনেটারি ন্যাপকিন টিভিসি মডেল হওয়ার। সেটাই প্রথম মডেলিং। এর কিছু দিন পরই অফার পেলাম রান এনার্জি বারের মডেল হওয়ার। রান-বারের এই টিভিসিতে আমার চরিত্রটা আমার খেলার সাথে সম্পৃক্ত। তাই এক কথাতেই রাজি হয়ে যাই। অবশ্য এর পেছনে কারণও ছিল। আমার স্বপ্ন দেখার দুইটা স্থানই এক সাথে একই ফ্রেমে দেখতে পাবো। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি আমার স্পোর্টস এর জায়গা থেকে নতুনদের ভবিষ্যতের জন্য একটা মেসেজও দিতে চেয়েছি। আমার মতো মেয়ে যারা আগামীতে স্পোর্টসে সেরা হতে চায় বা আগ্রহী তারা যেন আমার কাজ দেখে শিক্ষা, উত্সাহ, মনোবল, সাহস নিয়ে কাজ শুরু করতে পারে।
আমি এটাই বলতে চেয়েছি একজন মেয়ে নিজের ইচ্ছে শক্তি দিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। রান বারের টিভিসিতে চমত্কার একটা স্লোগান রয়েছে যেটা আমার কাজে খুব পজেটিভ মানসিকতা তৈরি হয়েছে। স্লোগানটা হলো ‘জয় ছিনিয়ে আনতে চায় যারা তাদের শক্তি আরও বাড়িয়ে দিতে এলো রান দ্য এনার্জি বার থামবো না আর। ‘
এই বিজ্ঞাপনে শুটের বিষয়ে জানতে চাইলে মাবিয়া বলেন এর শুট হয়েছিল কুষ্টিয়ায়। ২০১৬ এর মে মাসে। টানা দুই দিন বিভিন্ন লোকেশনে এর শুট হয়। শেষ শুট হয় কুষ্টিয়া শহরে। শেষ শুটের সময় একটা মজার ঘটনা ঘটে। যেখানে শুট হচ্ছিল সেই জায়গাটার প্রায় বাড়িতেই আম গাছ ছিল। সময়টাও ছিল আমের। তো শুটের সময় যা হয়, সাধারণ জনগণ তো চারপাশে ভিড় করে শুটিং দেখে। সেখানে অনেক নারীরাও ছিল। শুট শেষে দেখলাম স্থানীয় নারীরা দলবেঁধে আমার জন্য কাচাঁ-পাকা আমের ভর্তা বানিয়ে এনেছে। আমাকে চার দিক থেকে ঘিরে রেখেছে ভর্তা খাওয়ার জন্য। একজন অভিনয় শিল্পী হিসেবে সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
বিষয়টা খুই মজার এবং আনন্দের ছিল। একজন শিল্পীকে সাধারণ মানুষ কেমন দৃষ্টিতে দেখে আর কতটুকু সম্মান দেয় তা অনেকটা অনুভব করেছিলাম সেই দিন। আজও সেই দিনটির কথা মনে হলে খুব ভাল লাগে। মজার কাজের সাথে থাকে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতাও। এমন একটা ঘটনাও রয়েছে এ কাজ করতে গিয়ে। কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর বালুচরে এর একটা অংশের শুট করা হয়। আমাকে খালি পায়ে উত্তপ্ত বালির মধ্যে দিয়ে অনেকটা পথ হেটে যেতে হবে। তখন প্রচণ্ড গরম আবহাওয়া ছিল। শটটা বার বার দিতে হয়েছিল। কিন্তু কোনোটাই পারফেক্ট শট হচ্ছিল না। যাই হোক কোনভাবে শট শেষ করি। তখন শারীরিক ও মানসিকভাবে এতটাই কষ্ট হচ্ছিল যে মনে মনে শুধুই বলেছিলাম কেন যে এই শুটিং করতে আসলাম। সেই শুট শেষে প্রচণ্ড গরমে আমি প্রায় এক মাস অসুস্থ্য ছিলাম। সত্যিই সেটা আমার কাজের একটা বাজে অভিজ্ঞতা ছিল বলে জানালেন মাবিয়া।
ভবিষত্ পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে মাবিয়া বলেন, খেলার সাথেই সারা জীবন কাটাতে চাই। সাথে খেলা সংশ্লিষ্ট কোনও কাজের অফার পেলে অবশ্যই ইচ্ছে আছে মডেলিং করার। যাতে করে আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবনকে আরো উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি। খেলার পাশাপাশি মডেলিং অন্যদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার খেলার সাথের অনেকেই এখন আমাকে অনুসরণ করে। এটা কম পাওয়া নয়। তাছাড়া যেখানেই যাই সবাই সম্মান করে। কথা বলতে চায়। ছবি তুলতে চায়। এসব পাওয়া একজন ব্যক্তির জীবনে অনেক কিছু। বলা চলে আমার জীবনের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে এসএ গেমস এ সোনা বিজয় আর টিভিসি মডেলিং।
এই ধরনের কাজ নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন? এ বিষয়ে মাবিয়া বলেন, নিজেকে যখন টিভিতে, পত্রিকার বা বিলবোর্ডে দেখি তখন অসাধারণ অনুভূতি কাজ করে। আবার যখন খেলার সাথীরা বা কোনও শুভাকাঙ্ক্ষী বলে তোমাকে তো দেখলাম টিভিতি বা অন্য কোনও মাধ্যমে তখন নিজের ভেতরে বেশ আনন্দ জাগে। সেই সময় কাজের প্রতি সম্মানবোধ ও কাজ করার স্পৃহা আরও অনেক গুণ বেড়ে যায়। অবশ্য আমার কাজের পেছনে আমার বাবা মায়ের ভূমিকাই বেশি কারণ তারাই আমাকে সকল কাজের প্রতি উত্সাহ, উদ্দীপনা ও ভালোবাসা দিয়ে আজ পর্যন্ত এতদূর আসার সুযোগ করে দিয়েছে। খেলাটাই আমার কাছে সবচেয়ে আগে। এরপর যদি অভিনয়ের সুয়োগ আসে তবে তা করে যেতে চাই
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫৬:৩৩ ৪১৪ বার পঠিত