মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৭
ফৌজদারি মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডঃ দেশের ইতিহাসে প্রথম রায়
Home Page » জাতীয় » ফৌজদারি মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডঃ দেশের ইতিহাসে প্রথম রায়বঙ্গ-নিউজঃ গতকাল আপিল বিভাগ এক রায়ে বলেছেন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ আমৃত্যু কারাবাস। কোনো মামলায় যদি আপিল বিভাগ বা হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের সাজা পরিবর্তন করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন তবে সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাভোগ করতে হবে। আদালতের এ রায়ের কপি পাওয়ার পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অপরাপর আসামির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে বলা হয়েছে।
১৫ বছর আগে সাভারে সংঘটিত জামান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে আপিল বিভাগের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ কথা বলা হয়েছে।
বলা হচ্ছে বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে এটিই বোধহয় ফৌজদারি মামলায় প্রথম কোনো আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়।
সোমবার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। চার বিচারপতির স্বাক্ষরের পর অবকাশকালীন সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে (www.supremecourt.gov.bd) ৯২ পৃষ্ঠার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।
আপিল বিভাগ থেকে প্রকাশ করা পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী দোষী ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবে এটাই বিধান। এক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডটা হচ্ছে ব্যতিক্রম। যখন এ ধরনের পরিস্থিতিতে কাউকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়, তখন অবশ্যই এর কারণ উল্লেখ করতে হয়।
দণ্ডবিধির ৫৩ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের অর্থ ৪৫ ধারার সঙ্গে মিলিয়ে পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে দেখা যায়- যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড।
রায়ে বলা হয়, যদি হাইকোর্ট বিভাগ বা এই আদালত (আপিল বিভাগ) মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন তখন এবং নির্দেশ দেন যে, তার স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত এই কারাদণ্ড ভোগ করবে, তখন এ ধরনের মামলায় সাজা কমানোর আবেদন গ্রাহ্য হবে না। দণ্ডবিধির ৫৭ ধারা সেখানেই প্রযোজ্য হবে, যেখানে সর্বোচ্চ দণ্ড হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ ধরনের বিধান যদি করা হয়, তখন সাজার ভগ্নাংশ গণনা করাটা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
সাজা কমানোর (রেয়াদ প্রদান) ক্ষেত্রে কারাবিধি প্রশাসনিক আদেশ হিসেবে বিবেচিত। মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মামলায় কোনো আদালত বিচারের প্রাথমিক পর্যায়ে আসামি যদি দোষ স্বীকার করেন, সেক্ষেত্রে সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে আদালত বা ট্রাইব্যুনাল নমনীয় দৃষ্টিতে দেখতে পারেন। কিন্তু এ ধরনের মামলায় আদালতকে নিশ্চিত হতে হবে আসামি জেনে বা বুঝে দোষ স্বীকার করেছেন কি না।
আদালত মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দণ্ড দিতে বাধ্য থাকবেন না এবং এই আদালত (আপিল বিভাগ) বা হাইকোর্ট বিভাগ কোনো সাজা দিলে তা ক্ষমা করা, বাতিল করা বা দণ্ড কমানো বা সাজা কার্যকরে বিলম্ব করতে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে দেয়া ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি প্রয়োগ করতে পারবেন।
আইনবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে এটিই বোধহয় ফৌজদারি মামলায় প্রথম কোনো আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়। এর আগে কোনো ফৌজদারি বা হত্যা মামলায় কোনো আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫০:৪৮ ৩৭৯ বার পঠিত