বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৭
পাটগ্রামে বোরো কমে বাড়ছে ভুট্টার আবাদ
Home Page » বিবিধ » পাটগ্রামে বোরো কমে বাড়ছে ভুট্টার আবাদবঙ্গ নিউজঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম। হাতীবান্ধা থানা প্রতিনিধি :লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় গত পাঁচ বছরে বোরো আবাদ কমেছে। আর ভুট্টার আবাদ হয়েছে দ্বিগুণ। বোরো ধান চাষে সেচের খরচ বেশি। সে তুলনায় ভুট্টার আবাদ সহজ। ফলনও হয় বেশি। ফলে চলতি মৌসুমে উপজেলার কৃষকেরা বোরো ছেড়ে ভুট্টা আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ২১ হাজার ২ শত ৬০ হেক্টর চাষযোগ্য জমি রয়েছে। ২০১৩ সালে উপজেলার ৭ হাজার ১৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান ও ৮ হাজার ৫৯ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছিল।
পরের বছর ২০১৪ সালে ৬ হাজার ১৮ হেক্টর জমিতে বোরো ও ৯ হাজার ৫ শত ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ২০১৫ সালে ৮ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ও ৯ হাজার ৫ শত ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা এবং ২০১৬ সালে ৬ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ও ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়। আর চলতি বছর সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ও ১৫ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে বোরো চাষের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বোরো ধান চাষের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা কমে যাবে। অন্যদিক ভুট্টার চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে যাবে। কারণ, বোরো চাষে সেচ খরচ বেশি। অপরদিকে ভুট্টার বাজারদর ভালো। তাই কৃষকেরা বোরো বীজতলা তৈরি করার পরও মাঠে ভুট্টার আবাদ বেশি দেখা যাচ্ছে। তা ছাড়া বোরো বীজতলা তৈরিতে খরচও বেড়েছে। এতে কৃষকেরা বীজতলার পেছনে বেশি খরচ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তবে যাঁদের বোরো চাষে সেচ খরচ বেশি বলে মনে হচ্ছে, তাঁদের আউশ ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারণ, আউশ ধান চাষে সেচের খরচ কম।
উপজেলার পানবাড়ি গ্রামের কৃষক আবদুল কুদ্দুস (৫৭) বলেন, এ বছর নিজের পরিবারের খাওয়ার জন্য অল্প (১ বিঘা) জমিতে বোরো চাষ করেছেন। আর ৩ একর জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন। ভুট্টাতে সেচ খরচ কম লাগে। দাম ভালো পাওয়া যায়, লাভও বেশি হয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ধান আবাদ করিলে বিক্রি করিয়া ঋণোত থাকিবার লাগে।’
সরেজমিনে উপজেলার বাউরা, কুচলিবাড়ি, বুড়িমারী, জোংড়া ও জগতবের ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামে ১২ ও ১৩ এপ্রিল দেখা গেছে, বেশির ভাগ মাঠজুড়েই ভুট্টার আবাদ। একসময় ফসলের এসব মাঠে শুধু বোরোর আবাদই চোখে পড়ত।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ২০ জনেরও বেশি কৃষকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, একসময় এ উপজেলার প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল বোরো ধান। কিন্তু বাজারে উৎপাদিত ধান বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা, আবাদের খরচই উঠত না। এ ছাড়া কয়েক বছর ধরে বোরো ধানের দামও ক্রমাগত কমে যাচ্ছে।
তাই ধানের পরিবর্তে আদা, বেগুন, মরিচসহ সবজিজাতীয় ফসল বিশেষ করে ভুট্টার আবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকেরা।
উপজেলার বাউরা গ্রামের কৃষক মামুন হোসেন (৩৫) বলেন, তাঁর সব জমিতেই গতবার বোরো চাষ করেছিলেন। এতে খরচ বেশি। ফলনও খুব একটা ভালো হয় না। আবাদের খরচও ওঠে না। তাই এবার আর বোরো ধান চাষ করেননি। ভাবছেন সব জমিতেই ভুট্টা লাগাবেন।
পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর আলম বলেন, এ উপজেলার মাটি বেলে-দোআঁশ প্রকৃতির। তাই বোরো ধান চাষে সেচের পানি বেশি লাগে। খেতে একদিনের বেশি পানি থাকে না। এতে সেচ খরচ বেশি হয়। তাই বোরো চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
তা ছাড়া ভুট্টা চাষে সেচ খরচ কম। কিন্তু ফলন ও দাম দুইই বেশি পাওয়া যায়। তাই উপজেলার কৃষকেরা ভুট্টা চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৬:৩৪ ৩৮২ বার পঠিত