রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৭
“প্রবাস জীবনের বাস্তবমুখী ইতিকথা নিয়ে ইমন”
Home Page » ফিচার » “প্রবাস জীবনের বাস্তবমুখী ইতিকথা নিয়ে ইমন”ওমর সানিঃ–বঙ্গ-নিউজঃ- আমরা অনেকেই মনে করি প্রবাসে যারা থাকেন তারা অনেক সুখেই দিনযাপন করেন। এ ধারনা আদৌ ঠিক নয়। প্রবাসীরা কখনোই নিজেদের দুঃখ প্রিয়জনকে বুঝতে দেননা। অনেক যন্ত্রনায় নীরবে সহ্য করে যান। যা ধারনা করার ক্ষমতা প্রিয়জনদের হয়না। বুক ভরা যন্ত্রনায় জর্জরিত থাকলেও প্রিয়জনকে কখনোই বুঝতে দেননা। যন্ত্রনা বুকে চেপে মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে প্রিয়জনের মুখে একটুখানি হাসি ফোটানোর জন্য সবসময়ই বলেন আমি ভাল আছি তোমরা ভাল থেকো। এই কথার আড়ালে লুকিয়ে থাকে অনেক বলা না বলা কথা,,,প্রবাস জীবনের কিছু বাস্তবমুখী ইতিকথা টানলেন বাংলাদেশের এক প্রবাসী স্বপ্নবিলাসী ইমন। উনার বলা কথাগুলো তুলে ধরা হলোঃ-
**হাঁটতে হাঁটতে পথ হয়তো শেষ হয়ে যাবে,কিন্তু মানুষের চাওয়া পাওয়া আর স্বপ্ন আশা কখনোই শেষ হবে না।মানুষের দৃষ্টিসীমার যেমন শেষ নেই তেমনি মানুষের চাহিদার ও পরিসীমা বা কোন আয়তন নেই।মানুষ মানুষের জন্য,জীবন জীবনের জন্য এই শ্লোগানে আজ কিছু কথা বলে যেতে চাই প্রবাস জীবনের ইতিকথায়।
“গতির অভাবে সুর থেমে যাবে না, হাত বাড়ালে কখনো অপ্রাপ্তি মিলবেনা”"
প্রতিটি মানুষের একটি একান্ত বৃত্ত থাকে, যার কেন্দ্রে তার একান্ত সবকিছুর অবস্থান। তার অনুভূতি, ব্যক্তিত্ব, দুর্বলতার একান্ত অংশ!অন্য কাউকে সেই বৃত্তের ভেতর প্রবেশ করতে দেয়া মোটেই উচিত নয়। স্বকীয়তা নষ্ট হয়ে যায়! ডমিনেন্সী চলে আসে! যেটা লং টার্মে কারো জন্যেই সুখকর নয়!একমুঠো একান্ত এই স্বপ্নের দখল মানুষ কখনোই কাউকে দিতে চায়না, নিজের অবচেতন মনকেও না!বৃত্ত অতিক্রম করলেই ব্যাপারটার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে, স্বপ্নের যৌক্তিকতা নিয়ে জবাবদিহি করতে হয়! কে চায় এমনটা করতে বলুন!কিন্তু প্রবাস এমন একটি জীবন যেখানে নিজের স্বকীয়তা বলতে কিছুই নেই,সম্পূর্ন সময়টা উৎসর্গ করতে হয় পরিবারের জন্য।হাসি,কান্না সুখ,দুঃখ সব কিছুকে নিজের পরিসরে বেঁধে রাখতে হয়।সম্পূর্ন টাইম মেশিনের মত হয়ে যায় প্রবাসীদের জীবন। তার পরেও সুখ দুঃখ মিলিয়ে জীবন।এটাকে উপভোগ করতে হয় নিজের মত করে,যদি মনে করেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ আপনি তাহলে তাই,আর যদি মনে করেন আপনার চেয়ে দুঃখী কেউ নেই তাহলেও তাই।দুঃখ যেখানে গভীর,স্বান্তনা পাওয়া সেখানে অহেতুক।ধরুন,কোন একটা চাদের যদি আপনি পুরো ভিউ দেখতে চান তাহলে একটা কর্নারে দাঁড়িয়ে যান তাহলে পুরো ভিউ দেখবেন।তেমনি আমাদের প্রবাস জীবন,সুখটাকে উপভোগ করতে হলে কিছুটা দুঃখের সাথে আলিঙ্গন করে নেয়া শ্রেয়।কিন্তু তাতেও সুখ আছে,কারন পরিবারের জন্য উৎসর্গ করা প্রতিটা সেকেন্ড,প্রতিটা মিনিট,প্রতিটা ঘন্টা।সবাই এই কাজ গুলো করতে পারেনা।নিজের বুকে হাজার কষ্ট চেপে রেখে মা,বাবা,ভাই বোন,পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমরা মুখ ফুটে বলতে পারি”আমরা ভালো আছি”।তবে পার্থক্য হলো এটাই মন মানসিকতা।কর্মময় জীবনের হাঁপিয়ে উঠা সময় গুলো থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে সামান্য সময় মা,বাবা আত্মীয় স্বজনের সাথে মোবাইলে কথা বলে নিজের মনকে যতটা প্রশান্তি দিতে পারে তা মনে হয় অন্য কিছু দ্বারা সম্ভব নয়।
প্রবাসে যদিও সবুজের সমারোহ নেই,তবে নেই যান্ত্রিক জটিলতা।তবে সব সময় মনের মধ্যে দেশের জন্য ট্রাফিক সিগন্যাল লেগেই থাকে।আর এই সিগন্যাল ক্রমেই বড় হতে থাকে যতদিন যায়,,তারপরও আমরা হাসি মুখে বলতে পারি আমরা ভালো আছি
“চকচক তকতক প্রবাসের ঘড়ি করে যতদিন,দাম থাকে তার সবার মাঝে টাকা আছে ততদিন।
মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজায় নানান সাজে,কেউ কি জানে সেই ঘড়িটা লাগবে কয়দিন কাজে!!!”
আমরা প্রবাসীরা আমাদের দেশের সম্পদ।দেশের উন্নয়নে আমরা বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের রাজস্ব খাতের উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছি আমরা প্রবাসীরা।
মাঝে মাঝে হৃদয় না, বিবেক দিয়ে ভাবতে হয়!আমরা প্রবাসীরা যা কিছু করছি সেটা হয়তো ক্ষণিকের কষ্ট নিয়ে কিন্তু সেটা যেন ভবিষ্যতের এবং পরিবারের ভালোর জন্যেই হয়!এমন ভাবেই কিছু কাজ করা উচিত।আমরা তাই করছি।
পুরো জীবনটা এখন একটা যান্ত্রিক মেশিন।সকালে স্টার্ট করলে মধ্যরাতে শেষ হয়।তারপরও আমরা বলি আমরা ভালো আছি,,,,আসুন একটু ছন্দে ছন্দে খুঁজে নেই আমাদের প্রবাস জীবন,,,
“নীল আকাশে উড়তে দেখে
দেশ হারা পাখি,
পাথর চাপা দুঃখে মোদের
ভীজে উঠে আঁখি,
সীমানা মোদের খুবই ছোট
চারটি মাত্র দেয়াল,
ব্যস্ত সবাই জীবন নিয়ে
কেউ করেনা খেয়াল।
নীরব ধুসর চেহারায় মোদের
আছে শুধু মৌনতা,
ক্লান্ত মোদের মন খোঁজে
বাঁচার স্বাধীনতা।
তাই কখনো প্রবাসীরা
নেয় না বুকে ব্যথা,
সেই জন্যই বলে যাই
প্রবাসের ইতিকথা।
অবশেষে মোদের এলো মুক্তি
সব দুঃখ শেষ,
দেহ থেকে আত্মা যখন
হলো নিরুদ্দেশ।”"
এত কিছুর পরও যখন আমরা দেখি আমাদের দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশের মান উজ্জল করছে তখন আমরা বুক ফুলিয়ে বলি”আমরা বাংলাদেশী”"
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩০:৩০ ৫৪৪ বার পঠিত