শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০১৭

‘রায়হান’ অনুপ্রেরণার বাস্তব উদাহরণ- আয়েশা এরিনা শোহা

Home Page » ফিচার » ‘রায়হান’ অনুপ্রেরণার বাস্তব উদাহরণ- আয়েশা এরিনা শোহা
শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০১৭



Image may contain: 1 person, standing and outdoorদু-হাত নেই, তবু থেমে থাকেনি পড়াশোনা, মুখ দিয়ে লিখেই সে এখন চট্টগ্রাম ভার্সিটির স্টুডেন্ট। বাহার উদ্দিন রায়হান, বাড়ি কক্সবাজার জেলায়, চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে।

বাবার মুখ দেখার সুযোগ হয়নি তার, মায়ের গর্ভে থাকার সময়ই পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। কেবল মা-ই আছে, আর কোন ভাই বোন নেই । সেই ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্টে লালন পালন করেছেন রায়হানকে, বাড়ির পাশে ক্ষেত-খামার করে সংসারের খরচ জুগিয়েছেন ।

জন্ম থেকেই এমন প্রতিবন্ধকতা ছিল না রায়হানের। ২০০৪ সালের ঘটনা, সে তখন ক্লাস ফাইভে পড়ে। বাড়ির সামনে তখন বিদ্যুতের নতুন খুঁটি লাগানো হচ্ছিলো। সেই খুঁটিগুলো ছিলো তার বাড়ির সামনে গাছের পাশ দিয়েই। একদিন সকালে গাছে একটি পাখি আটকে যেতে দেখে সে। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে। কিন্তু’ পাখিটি বের হতে পারে না। এ অবস্থা দেখে সন্ধ্যার দিকে সে নিজেই গাছে উঠে গেল পাখিটিকে ছাড়িয়ে দিতে। গাছে চড়ার পর হাত দিতেই হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পায় সে। এরপর আর কিছু মনে নেই । হুঁশ ফিরতে নিজেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করে সে।

দুর্ঘটনার কারণে ছয় মাস হাসপাতালে পড়ে থাকতে হয় তাকে, পুরোপুরি সেরে উঠতে এরপর আরো দুই বছর চলে যায়।

এসময়টায় অন্যেরাই সব কাজে তাকে সহায়তা করতেন। কিন্তু এভাবে নিজেকে পরনির্ভরশীল দেখতে খুব বাঁধে ছোট রায়হানের। নিজে নিজে সব কিছু করার দিকে মনোযোগ দেয় সে। ২০০৬ সালে ভর্তি হয় তৃতীয় শ্রেণিতে। কনুই দিয়ে লিখতে তখনো ভালোমতো অভ্যস্ত হতে না পারায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়নি। তখন থেকেই শুরু তার পথচলা।

মুখ দিয়ে লিখে একে একে পাশ করেছে জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা, এবং অবশেষে পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পাওয়া।

শারীরিক অক্ষমতাকে জয় করার চেষ্টা করেছে সে প্রতিটি ক্ষেত্রে। পড়ালেখার অদম্য ইচ্ছা তাকে নিয়ে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে। এত শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিয়োজিত আছে রায়হান, নিজ গ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইয়োথ হাঙ্গারসহ বিভিন্ন সমাজ সেবা সংগঠনের। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে তৈরি করছে জনসচেতনতা। সে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে দিতে চায় শিক্ষার আলো। ভবিষ্যতেও হতদরিদ্র মানুষের জন্য কিছুর করার স্বপ্ন তার।

বর্তমান সময়ে মানুষ মানুষের জন্যই দয়া দেখায় না, সেখানে এই মানুষটি একটি পাখির জন্য নিজের অঙ্গ খুইয়েছেন! তাকে কি স্যালুট না দিয়ে পারা যায়! বেঁচে থাকুক ভালোবাসা! সবাই দোয়া করবেন এই অদম্য মেধাবী ভাইটার জন্য!

বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৫:০৮   ৫৫৪ বার পঠিত