মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০১৭

বাবার আদর্শ বুকে নিয়ে এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করছি: প্রধানমন্ত্রী

Home Page » জাতীয় » বাবার আদর্শ বুকে নিয়ে এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করছি: প্রধানমন্ত্রী
মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০১৭



অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা- ফোকাস বাংলা

 

বঙ্গ-নিউজঃ মঙ্গলবার মাগুরার মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন মানুষের কল্যাণে বাবার মতো যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছেন।

তিনি বলেন, আমি জাতির পিতার মেয়ে। আমি কারও কাছে মাথানত করতে জানি না। আমি একটি কথাই জানি, এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে আমার বাবা জীবন দিয়েছেন। তাই আমিও বাবার আদর্শ বুকে নিয়ে এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার মানুষের কল্যাণে বাবার মতো আমিও আমার জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছি। এজন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি। প্রয়োজনে বাবার মতো আমিও আমার জীবন দিয়ে হলেও বাংলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাবো।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে। আর বিএনপি কী করেছে? ২০০১ সালে বাংলাদেশের গ্যাস ভারতের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার মুচলেকা দিয়ে আমেরিকা আর ভারতের ‘র’ এর ষড়যন্ত্রে তারা ক্ষমতায় আসে। দেশের মানুষও ভুলে যায়নি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত কী সন্ত্রাস করেছিল! সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তারা।

আগামী জাতীয় নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনারা বারবার আওয়ামী লীগকে ভোট দিেেয়ছেন। আশা করি, আগামী ২০১৯ সালে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনেও যে নৌকা এদেশের স্বাধীনতা দিয়েছে, ভাষার মর্যাদা দিয়েছে, উন্নয়ন দিয়েছে- সেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ দেবেন। আপনাদের সহযোগিতা চাই, দোয়া চাই, ভালোবাসা চাই।’

বিএনপি-জামায়াত জোট আবারও ক্ষমতায় এলে দেশে আবারও দুঃশাসন কায়েম করবে- এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা ভোটচুরি করে জনগণের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছে, যারা সন্ত্রাস, দুর্নীতি-লুটপাট ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে- তারা ক্ষমতায় এলে আবারও দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। কেননা তারা দেশের স্বাধীনতায়ই বিশ্বাস করে না।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসনসহ আন্দোলনের নামে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এই জোটের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার বিবরণও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধাপররাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করছি। জাতির পিতার খুনিদের বিচার ও বিচারের রায়ও কার্যকর করেছি। যারা এদেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মানুষকে অত্যাচার-নির্যাতন করেছে- তাদের স্থান বাংলার মাটিতে নেই। তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবেও না।

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার পাশাপাশি নিজ নিজ ছেলে-মেয়েদের এগুলো থেকে দূরে রাখার জন্য অভিভাবকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আপনাদের কাছে একটাই দাবি, এই মাগুরাসহ সারাদেশে কোনো রকম সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তির স্থান না হয়- সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সমাজটাকে উন্নত করতে হবে। সন্তানরা যেন বিপথে না যায়- অভিভাবকরা সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আর যারা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাককাসক্তি ছেড়ে দেবে, যারা ভালো হতে চায়- তাদের জীবন ও জীবীকার সবরকমের ব্যবস্থা সরকার করে দেবে।’

পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্টে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বিয়োগান্তক হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সমবেত হয়ে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করুন। আপনাদের কাছে আমার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি মা-বাবা-ভাই ও সব স্বজন হারিয়েছি। এই ব্যথা বুকে নিয়ে আপনাদের সেবা করে যাচ্ছি, আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি একটাই কারণে। জাতির পিতা দেশকে স্বাধীন করেছেন। এই দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু যখনই আমরা দেশের উন্ননয়ন করতে চাই- তখনই একটি শ্রেণী তাতে বাধা দেয়।’

দীর্ঘ নয় বছর পর প্রধানমন্ত্রীর মাগুরা আগমন ও তার জনসভাকে ঘিরে গোটা মাগুরায় উৎসবমুখর পরিবেশের সূচনা ঘটেছিল। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার এটিই ছিল মাগুরায় প্রথম সফর। এর আগে ২০০৮ এর নির্বাচনের আগে এখানে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে প্রথম মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৯৮ সালে মাগুরায় এসে দেশের প্রথম জেলা হিসেবে মাগুরাকে নিরক্ষরতামুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি।

দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাছে পেয়ে মানুষের মধ্যে বিপুল উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা দেখা গেছে। তার আগমন উপলক্ষে মাগুরা শহর ও সংলগ্ন এলাকাগুলোকে বর্ণাঢ্য সাজে সাজিয়ে তোলা হয়। গোটা জেলা শহরসহ সবগুলো সড়কে ফুল, নৌকার প্রতিকৃতি এবং ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

বিকেলের এই জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা জনসভাস্থলে আসতে শুরু করেন। মাগুরা ছাড়াও যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ফরিদপুর ও রাজবাড়ীসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ও পায়ে হেঁটে জনসভায় যোগ দেন তারা। তাদের সঙ্গে ছিলেন সর্বস্তরের সাধারণ মানুষও। অনেকে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচেগেয়ে জনসভাস্থলকে আনন্দমুখর করে তোলেন।

দুপুর নাগাদ মানুষের ভিড় জনসভাস্থল ছাড়িয়ে আশপাশের কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখতে স্টেডিয়ামের আশপাশের উঁচু ভবনে ভিড় জমান। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার সুযোগ করে দিতে শহরের বিভিন্নস্থানে দুই শতাধিক মাইক বসানো হয়। এসব মাইকের সামনেও ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারযোগে দুপুর ২টায় জেলা সদরে পৌঁছান। স্থানীয় সার্কিট হাউসে মধ্যাহ্ন ভোজ ও বিশ্রাম শেষে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে জনসভাস্থলে এসে পৌঁছলে জনতা বাধভাঙা উচ্ছ্বাস ও তুমুল স্লোগানের মাধ্যমে স্বাগত জানান তাকে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী ১৫০ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে শেষ হওয়া ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে জনসভায় বক্তব্য শেষে বিকেল পৌনে ৫টায় হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় রওয়ানা হন। সন্ধ্যা নাগাদ তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ফিরে যান প্রধানমন্ত্রী।

১৯৯৪ সালের ২০ মার্চ মাগুরা-২ আসনের উপ-নির্বাচনে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ভোটডাকাতির অভিযোগ ওঠে। এর পরদিন মাগুরায় জনসভা করে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা তীব্র গণআন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকারের পতন ঘটে।

প্রধানমন্ত্রী তার ৩৩ মিনিটের বক্তব্যের শুরুতেই এই ঘটনাকে স্মরণ করে বলেন, মাগুরা উপ-নির্বাচনে ভোটচুরির বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ আন্দোলন- সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল। এই ভোটচুরির কারণে পরে খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হন। এজন্য মাগুরাবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।

একই সঙ্গে শ্রীলংকার সঙ্গে বাংলাদেশের শততম টেষ্ট জয়ের নায়ক মাগুরার কৃতি সন্তান সাকিব আল হাসানসহ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকেও অভিনন্দন জানান তিনি।

দেশ ও মানুষের কল্যাণে তার সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটাই চাওয়া, এদেশ যেন দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যায়। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এখন দেশের ৮০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে দেশের কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না। প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলবে। প্রতিটি ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবো।

এ প্রসঙ্গে মাগুরার উন্নয়নে সরকার গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মাগুরায় খালি হাতে আসিনি, উপহার নিয়ে এসেছি। আজ মাগুরায় অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করলাম। মাগুরাবাসীর দাবি তারা রেললাইন দেখতে চায়। ইনশাল্লাহ এই মাগুরায়ও রেললাইন হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটাই আদর্শ, দুঃখী মানুষের মুখ হাসি ফোটানো। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ইনশাল্লাহ এদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।

মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তানজেল হোসেন খানের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট ড. বীরেন শিকদার, পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমদ পলক, স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আবদুল ওয়াহাব, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন, পারভীন জামান কল্পনা, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি নির্মল ব্যানার্জী, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন প্রমুখ। পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পংকজ কুমার কুণ্ডু।

বাংলাদেশ সময়: ২০:৩৮:১৯   ৩৭৬ বার পঠিত