বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
যে কারণে হাজিদের ডাটাবেজ
Home Page » প্রথমপাতা » যে কারণে হাজিদের ডাটাবেজ
বঙ্গনিউজঃ হাজিদের ডিজিটাল ডাটাবেজ করা হয়েছে। সৌদি ই-হজ সিস্টেমের সঙ্গে সমন্বয়সহ প্রাপ্য কোটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গত বছর থেকে এই ডাটাবেজ চালু করা হয়। এর ফলে হয়রানি, প্রতারণা ও মানব পাচার বন্ধকরণসহ জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও রোহিঙ্গাদের সহজে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে এবং প্রতারক-দালালদের প্রতারণাও বন্ধ হয়ে যাবে। নিশ্চিতভাবে যে কেউ ‘জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতিমালা-২০১৬’-এর আওতায় হজে যাওয়ার সব প্রক্রিয়া শেষে হজ করে আসতে পারবেন। সারাজীবনের জন্য ওই হজ যাত্রীর সব তথ্য এই ডাটাবেজে সংরক্ষণ থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, কিছু এজেন্সি ও তাদের দালালদের হাতে দীর্ঘদিন থেকে হাজিরা হয়রানি-প্রতারণার শিকার হয়ে আসছিলেন। সেসব বন্ধেই সরকার ২০১৬ সালে জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতিমালা করে। তারই আলোকে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা ও তথ্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের জন্য ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ ডিজিলাইজড করার উদ্যোগ নেয় ধর্মমন্ত্রণালয়।
এ প্রক্রিয়ায় হজ যাত্রীরা কোনও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন না এবং সহজেই নিয়মমাপিক প্রক্রিয়াগুলো শেষ করে হজে যেতে পারবেন। বিলম্বে নিবন্ধন করার কারণে কোটা শেষ হয়ে গেলেও নিবন্ধন বাতিল না করলে পরবর্তী বছর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিনি হজে যেতে পারবেন। তার সম্পূর্ণ তথ্য সংরক্ষিত থাকবে ডাটাবেজে।
সরকারি কিংবা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়া যায়। এই দুই ব্যবস্থাপনার যেকোনও মাধ্যমে হজে যেতে পারবেন যে কেউ। তবে প্রাক নিবন্ধন না করে কেউ হজে যেতে পারবেন না। প্রাক নিবন্ধন পদ্ধতি হজে যাওয়ার প্রক্রিয়াগুলোর প্রথম ধাপ। এ পর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র, আর ১৮ বছরের নিচে হলে জন্ম নিবন্ধন সনদ, প্রবাসী হলে প্রবাস সংক্রান্ত কাগজপত্র ও মোবাইল ফোন নম্বর দিতে হবে। এসব কাগজপত্র ও প্রাক নিবন্ধনের জন্য সরকারের নির্ধারিত ফি ও জামানতের টাকা নিয়ে যারা সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে চান তাদের ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয় কিংবা ঢাকার হজ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যারা যেতে চান, তাদের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বৈধ হজ এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
তাদের কাছ থেকে পাওয়া ট্র্যাকিং নম্বরযুক্ত কাগজসহ ফি ও জামানতের টাকা নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এরপর ব্যাংক থেকে হজের প্রাক নিবন্ধন সনদ এবং মোবাইল নম্বরে এসএমএস পাঠানো হবে। এতেই নিশ্চিত হওয়া যাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রাক নিবন্ধন শেষ হয়েছে। এছাড়া হজের ট্র্যাকিং নম্বর দিয়ে হজের ওয়েব সাইট থেকে টাকা জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এই ডিজিটালাইজেশন হজ পদ্ধতি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বিজনেস অটোমেশন লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেক অতিরিক্ত সচিব বজলুল হক বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘তাদের কাজ তদারকির জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে একটি টিম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালাইসিস্ট, হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন ‘হাব’ এর তিন সদস্য এবং বুয়েটের দু’জন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী বিজনেস অটোমেশনের কাজ নিয়মিত তদারকি করেন।’’ তিনি বলেন, ‘প্রাক নিবন্ধন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের যাবতীয় তথ্য ডাটাবেজে সংরক্ষিত হয়ে যাবে। কেউ নিবন্ধন বাতিল করলেও তার তথ্য থেকে যাবে। এই ডাটাবেজের সঙ্গে এনআইডি’র সার্ভারের লিংক রয়েছে। যেন সহজেই সংশ্লিষ্ট হজ যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে নেওয়া যায়।’
বজলুল হক বিশ্বাস আরও বলেন, ‘প্রাক নিবন্ধন পদ্ধতি ও ডাটাবেজে হজ যাত্রীদের তথ্য সংরক্ষণের কারণে মানব পাচার, বাংলাদেশি পরিচয়ে রোহিঙ্গাদের সৌদি আরব যাওয়া, জঙ্গি ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা অনেক সহজ হয়েছে। হজে গিয়ে সৌদি আরব থেকে যাওয়ার আশঙ্কাও শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ২০১৬ সালে এ পদ্ধতি চালু হওয়ার একজন রোহিঙ্গাও বাংলাদেশি পরিচয়ে হজে যাওয়ার নাম করে সৌদি আরব যেতে পারেননি। এছাড়া এ বছর যিনি হজ করবেন তিনি পরবর্তী তিন বছর আর হজে যেতে পারবেন না। তবে মাহরাম হিসেবে যেতে যে কেউ তিন বছরের মধ্যে যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই।’
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘প্রাক নিবন্ধন ও হাজিদের যাবতীয় তথ্য ডাটাবেজের মাধ্যমে সংরক্ষণ করায় হজের নামে প্রতারণা ও মানব পাচার শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। কয়েকদিন আগেই ধর্মমন্ত্রীর নেতৃত্বে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি দল সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হজ চুক্তি করে এসেছেন। এবার এক লাখ ৪০ হাজার জন হজ করার সুযোগ পাবেন। তবে গত বছর প্রাক নিবন্ধিত যেসব ব্যক্তি কোটা শেষ হয়ে যাওয়ায় হজে যেতে পারেননি, তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবার হজে যেতে পারবেন।’
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩৭:১৬ ৩৪৪ বার পঠিত
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]