মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

ইংরেজি ঢঙে ‘বাংরেজি’ বলা ছাড়াতে হবে: শেখ হাসিনা

Home Page » প্রথমপাতা » ইংরেজি ঢঙে ‘বাংরেজি’ বলা ছাড়াতে হবে: শেখ হাসিনা
মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৭



আন্তরজাতিক মাতৃভাষা ইন্সিটিউট এ শেখ হাসিনা এর চিত্র ফলাফল

বঙ্গ-নিউজঃ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের ইংরেজি ঢঙে বাংলা বলার প্রবণতা ছাড়াতে কী করা যায়, সে পথ বের করতে শিক্ষাবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এই  অনুষ্ঠানে ভাষা বিজ্ঞানী, গবেষকরাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা কথ্য ভাষা বলব, ঠিক আছে। দয়া করে আমাদের ভাষার যে প্রচলিত ধারা সেটাকে এভাবে বিকৃত করে .. বাংরেজি বলে ফেলছি; এটা যেন আর না হয়। এদিকে একটু বিশেষ ভাবে দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ।”

ইংরেজি ঢঙে বাংলা বলার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগও ঝরে বঙ্গবন্ধুকন্যার কণ্ঠে।

“এটা ছেলেমেয়েদের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে। যেন ওইভাবে কথা না বললে তাদের মর্যাদাই থাকে না। এই জায়গা থেকে আমাদের ছেলেমেয়েদের সরিয়ে আনতে হবে।”

“যখন যেটা বলবে, সেটা সঠিকভাবে বলবে, সঠিকভাবে উচ্চারণ করবে, সঠিকভাবে ব্যবহার করবে,” বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার ছাত্রী শেখ হাসিনা।

ভাষা শহীদ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলা শুদ্ধভাবে ব্যবহারের উপর জোর দেন তিনি।

“আমাদের ভায়েরা জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে এই ভাষা আমাদের উপহার দিয়ে গেছে। এর মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমাদের ছেলেমেয়েদের এই ভাষা শিখতে হবে।”

প্রমিত বাংলার পাশাপাশি আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্বও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

“বাংলার কথ্য ভাষায় বৈচিত্র আছে এবং সেটা থাকা উচিৎ।”

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে আঞ্চলিক উচ্চারণের প্রয়োগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

“জাতির পিতার সাতোই মার্চের ভাষণ শোনেন .. দেখবেন সেখানে গোপালগঞ্জের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।”

“আমি বাংলা বিভাগের ছাত্রী ছিলাম। বাংলা বিভাগের শিক্ষকরা বলতেন, ‘উনি এভাবে বললেন কেন?’ আমি বলতাম, ‘স্যার উনি যখন কথা বলেন, জনগণের জন্য কথা বলেন। জনগণের জন্য সহজে উপলব্ধি করার মতো করেই তিনি বলতেন’।”

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠায় ইউনেস্কোর সহায়তার জন্য জাতিসংঘ সংস্থাটিকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

“আমরা এত দ্রুত এই ইনস্টিটিউটের কাজ শুরু করেছিলাম এবং গবেষণা শুরু করেছি এবং অনেক ভাষার নমুনা এখানে সংরক্ষণ করা আছে। ইউনেস্কো এই প্রতিষ্ঠানকে ক্যাটাগরি দুইয়ে উন্নীত করেছে।”

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এই ইনস্টিটিউট একদিন তাদের গবেষণা, ভাষা সংরক্ষণ, ভাষা সম্পর্কে আরও জ্ঞান সংরক্ষণ করবে। প্রত্যেকটা ভাষার উৎস কী, কীভাবে বিকশিত হল, কীভাবে ভাষা বিভিন্ন জাতির কাছে এল, তা নিয়ে গবেষণার আধার হয়ে উঠবে।

“আমরা সেভাবে এই ইনস্টিটিউটকে গড়ে তুলতে চাই। আশা করি, বিশ্বের বুকে একদিন এই ইনস্টিটিউট আলাদা মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হবে,” বলেন তিনি।

বাংলার পাশাপাশি জীবিকার তাগিদে অন্য ভাষা শেখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান, যে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিটেন্স।

“অন্য ভাষার প্রতি বৈরিতা নয়। মাতৃভাষা শিখতে হবে, সাথে সাথে আমরা অন্য ভাষাও শিখব। জীবন-জীবিকার জন্য অনেক সময় অন্য ভাষা শিখতে হয়।”

জ্ঞান পিপাসা ও প্রযুক্তির চাহিদা মেটাতেও অন্য ভাষা শেখার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা অন্য ভাষা শিক্ষার বিরোধী না। অন্য ভাষা শিখতে হবে। কিন্তু, মাতৃভাষা ভুললে চলবে না।”

বাংলা ভাষার জন্য আত্মত্যাগের ইতিহাস ব্যাপকভাবে প্রচারের উপরও গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা।

“আমরা বাঙালি.. আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে সংগ্রাম করে প্রতিটি দাবি অর্জন করতে হয়েছে। কোনো কিছু সহজে আসে নাই। ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শাসকবর্গ এসেছে। কিন্তু, এদেশের মানুষ কাউকে মেনে নেয়নি।”

বাংলাদেশের সব অর্জনের আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর সম্পৃক্ততার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “এই মাটির সন্তান হিসাবে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানই মনে হয় একজন, যিনি এই দেশে এই মাটির সন্তান হয়ে এই দেশকে শুধু স্বাধীন করেন নাই, এই দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন। আর তারপর আমি একজন .. অভাগা আছি।

“আর, এর বাইরে যারাই যখন এসেছে .. আপনারা যদি একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন; তারা কিন্তু এই বাংলার মাটিতে জন্মগ্রহণ করেনি। আশেপাশের দেশে জন্মগ্রহণ করে আমাদের দেশে এসেছে। এটা হলো বাস্তবতা। সেই জন্য স্বাভাবিকভাবে এই মাটির সন্তান হিসাবে, আমাদের এই মাটির প্রতি টান আছে। মাটির টানটা কিন্তু বড় টান।”

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে তার যে এই বক্তব্য, তা স্পষ্ট।

জিয়ার শৈশব কেটেছে ভারত, কৈশোর কেটেছে পাকিস্তানে। এরশাদের জন্ম ভারতের কুচবিহারে। খালেদা জিয়ার জন্ম ভারতের জলপাইগুড়িতে।

জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি আদায়ে আরও সক্রিয় হওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

“জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলা ভাষাভাষীর স্থান ষষ্ঠ.. সেই হিসাবে জাতিসংঘের একটি ভাষা হিসাবে বাংলাকে গ্রহণ করে কি না- এ ব্যাপারে আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। যদিও এটা কার্যকর করতে অনেক রকম সমস্যা আছে। তবুও আমরা আমাদের দাবিটা তুলে রেখেছি। আমরা দাবিটা একদিন বাস্তবায়ন করতে পারব।”

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জিন্নাত ইমতিয়াজ আলী, বাংলাদেশের ইউনেস্কোর আবাসিক প্রতিনিধি বিয়েত্রিস কালদান বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইউনেস্কোর লিঙ্গুয়াপ্যাক্স ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা আনভিটা অ্যাবি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা সচিব সোহবার হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১:১৮:৪৪   ৩৮৪ বার পঠিত