সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

তিস্তা চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়িই একমাত্র ভরসা!

Home Page » এক্সক্লুসিভ » তিস্তা চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়িই একমাত্র ভরসা!
সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭



বঙ্গ নিউজঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম। হাতীবান্ধা থানা প্রতিনিধি :কালের বিবর্তনে, যান্ত্রিকতার প্রভাবে প্রাচীন বাহনগুলো যখন বিলুপ্তির পথে এমন সময় লালমনিরহাটের
কালীগঞ্জ, আদিতমারী, হাতীবান্ধা তিস্তার চরাঞ্চলের লোকজনের একমাত্র ভরসার বাহন হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। আর এ ঘোড়ার গাড়িতে করে চরাঞ্চলের উৎপাদিত ফসল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আসা যাওয়া করতে হয়। এমনকি চরাঞ্চলে বসবাসকারী পরিবারগুলোর কোন লোকজন অসুস্থ হলেও ওই ঘোড়ার গাড়িই তখন একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। শত কষ্টের মাঝেও তাতেই সুখ খুঁজে পান চরাঞ্চলের পরিশ্রমী মানুষজন।
উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চর গোবরধন ও নর শিংহ চরে প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের বসবাস। প্রতি বছর একের পর এক তিস্তার ভাঙ্গনে বাড়িঘর বিলীন হওয়ার পর নতুন করে চর জেগে উঠায় সেখানে স্থাপনা গড়ে বসবাস শুরু করেন তারা। নদীর আশপাশ কোনভাবেই ছাড়তে রাজি নন সেখানকার লোকজন।
বর্ষা মৌসুম পেরিয়ে যাওয়ার পর শুকনো মৌসুমে নতুন চরে বসবাস করার পর তাদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় নতুন করে বাঁচার প্রতিযোগিতা। কথায় বলে, চরের মাটি বালু কণা, চাষতে জানলে মিলবে সোনা-এই স্লোগানটিকে বাস্তবে রুপ দিয়েছেন চরাঞ্চলের লোকজন। বর্তমানে এসব চরে মিষ্টি কুমড়া, আলু, গম ,ভুট্টা, তামাক, বাদাম সরিষাসহ নানা ধরনের ফসলের সমারোহ লক্ষ্য করা গেছে। এসময় কথা হয়, গোবরধন চরের আফজাল হোসেন, ছকিমুদ্দিনের সাথে। তারা জানান, বর্ষার সময় চরাঞ্চলে কোন ফসলের চাষাবাদ হয় না। তাই এ মৌসুমের ফসল দিয়ে একটি বছর পার করার জন্য পরিবারের লোকজন নিয়ে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।এদিকে চরাঞ্চলের লোকজনের একমাত্র বাহন হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি।
এ ঘোড়ার গাড়িতে করে তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন ফসল চরাঞ্চল থেকে পারাপার করে নিয়ে আসতে হয়। এখানকার লোকজন ঘোড়ার গাড়ি চলাচলের জন্য বালুর উপরে খড় বিছিয়ে দিয়ে রাস্তা তৈরি করেছেন। এ রাস্তা দিয়ে অতি সহজেই ঘোড়ার গাড়িতে মালামাল বহন করা যায়। শুধু মালামালই নয়, সেখানকার কোন লোকজন অসুস্থ হলে তাকে ঘোড়ার গাড়িতে করে মূল ভুখন্ডে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় বলে চরবাসী জানান।দীর্ঘদিন যাবত তিস্তার চরাঞ্চলে কাজ করে আসছেন ওভার নদী ও জীবন-২ নামের একটি প্রকল্প। সম্প্রতি এই প্রকল্পটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে চরাঞ্চলের লোকজন সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মতবিনিময়, সভা সেমিনার, প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ,দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা। এছাড়া বাল্য বিবাহের কুফর সর্ম্পকে ধারণা, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার, নিজেকে আত্ননির্ভরশীল করার লক্ষ্যে কাজ করা। সম্প্রতি তিস্তার চরে গণশুনানীতে অংশগ্রহণ করেন চরাঞ্চলের কয়েক হাজার নারী ও পুরুষ।
ওভার নদী ও জীবন-২ প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার ওহিদুল মিয়া জানান, চরাঞ্চলের লোকজন খুবই পরিশ্রমী।
আর পরিশ্রমের কারণেই তারা চর ছেড়ে মূল ভুখন্ডে আসতে চায় না। তবে এ চরের লোকজনের বাহনই হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। ঘোড়ার গাড়িতে করে চরবাসী তাদের উৎপাদিত ফসল আনা নেয়া করে থাকেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৭:৩০   ২৯৬ বার পঠিত