
শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের লোকজন
Home Page » এক্সক্লুসিভ » ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের লোকজন
বঙ্গনিউজঃ চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল অলক হালদারের। তার ব্যস্ত থাকার কথা ছিল পড়ার টেবিলে। কিন্তু অলক এখন শুয়ে আছে হাপসাতালের বিছানায়। ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছে গত ৩ মাস ধরে সে হাসপাতালে। অলকের মা কনক হালদার ছেলের সঙ্গে হাসপাতালে আছেন। তিনি বলেন, ‘ভালোই ছিলাম। ঈশ্বর সুখ দিয়েছিল কপালে, সইলো না। ছেলের এমন এক অসুখ দিলো যে, তারে নিয়ে এখন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে আমাদের।’
রাজধানীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের তৃতীয় তলার এক ওয়ার্ডে ভর্তি অলক। তার দুই হাতে লাগানো ক্যানোলা দেখিলে মা কনক বললেন, ‘দেখেন হাত দুইটার কী অবস্থা হয়েছে। একটু জায়গাও ফাঁকা নেই, সব সুঁই লাগানো।’
গত ৩ মাসে তাদের খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকার ওপরে। ১৪ দিন পর পর অলকের কেমোথেরাপি দিতে হয় বলে পাশেই ছোট একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন তারা। কনক বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করবো। কিন্তু ছেলে নিথর হয়ে পড়ে থাকে।’
একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ১০ বছরের সাথী। গত বছর রোজার ঈদের পর পায়ে ব্যথা নিয়ে প্রথমে পঙ্গু হাসপাতালে তার চিকিৎসা করা হয়। সেখানে রোগ না সারায় বায়োপসি করে দেখা যায় বাম পায়ের হাড়ের ভেতরে ক্যান্সার হয়েছে। সেই থেকেই এখানে ভর্তি। এখন পর্যন্ত তার ৬টি কেমো হয়েছে। একেকটা কেমোতে খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকা।
সাথীর বোন মাইফুল বেগম বলেন, বাবা স্থানীয় এক মসজিদে ইমামতি করে সংসার চালান। তার পক্ষে এই চিকিৎসা ব্যয় চালানো সম্ভব নয়। তাই আত্মীয় স্বজনের কাছে হাত পেতেছেন। কিন্তু তারাও একসময় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
অলক কিংবা সাথীর পরিবার নয়, ক্যান্সারের ব্যয়বহুল খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি বছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের (আইএআরসি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লাখ ২২ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। মারা যায় ৯১ হাজার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন তদারকির জন্য গঠিত উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল প্রায় অকার্যকর। ক্যান্সার নির্ণয় ও স্ক্রিনিং খাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত। যা বরাদ্দ দেওয়া হয় তার সিংহভাগ ব্যয় হয় অবকাঠামো ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে। এছাড়া ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা রোগীর চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতালটিতে সারাদেশের রোগীরা ভিড় লেগেই থাকে। ফলে অপারেশনের জন্য একমাস, কেমোথেরাপির জন্য ২-৩ সপ্তাহ আর বিকিরণ চিকিৎসার জন্য অনেককে ৪ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
আবার দেশের ১৫টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে রেডিওথেরাপি বিভাগ চালু আছে। যার মধ্যে ৯টিতে বিকিরণ চিকিৎসা যন্ত্র আছে।
অনকোলোজিস্ট এবং হেলথ ইকোনোমিস্ট অধ্যাপক গোলাম মঈনুদ্দীন ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে ১৬০টি কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টারের প্রয়োজন। আছে মোটে ২০টি। এছাড়া দেশি হাসপাতালগুলোয় মানসম্মত মেশিনের অভাবও রয়েছে। হাসপাতালগুলোর পুরনো মেশিন সরিয়ে নতুন মেশিন আনতে হবে যেন সেগুলো দিনের পর দিন বন্ধ হয়ে না থাকে। দরিদ্র রোগীদের যেন সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারিতে উচ্চমূল্যে চিকিৎসা করাতে না হয়।’
তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোয় মেশিন কেনার আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও কমাতে হবে। যে মেশিন কিনতে ছয়মাস লাগার কথা, সে মেশিন কিনতে ৩ বছর লেগে যায়।
ক্যান্সার হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা ১২০ জন। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ক্যান্সার রোগীদের জন্য সিট রয়েছে ৬০০ টির মতো। বেসরকারি হাসাপাতালে নিম্ন আয়ের লোকজন তাদের স্বজনদের ভর্তি করতে পারে না। আর সরকারি হাসপাতালে আসনের অভাবে তারা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৩:২১ ৩৫৭ বার পঠিত
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]