শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০১৭
কোচিং ফি বাড়লে কী হবে?০
Home Page » শিক্ষাঙ্গন » কোচিং ফি বাড়লে কী হবে?০
Lik
বঙ্গ নিউজঃ শুরুতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কোচিং শিক্ষকেরা টিউশন ফি বাড়িয়েছেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও বাড়িভাড়া বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে তাঁরা এটা করেছেন। এতে মধ্যবিত্ত অভিভাবকেরা আরও এক দফা চাপে পড়তে যাচ্ছেন। কারণ, নিশ্চিতভাবেই এ কথা বলা যায়, বাড়িভাড়া শুধু কোচিং শিক্ষকদেরই বাড়েনি, সবারই কমবেশি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ সবাই সমানভাবে অনুভব করেন। নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জন্য ব্যাপারটা দুর্বিষহ।
খুব সাধারণ হিসাব থেকেই ব্যাপারটা বোঝা যায়। একটি নির্দিষ্ট আয়ের পরিবারের দুই সন্তান যদি স্কুলে পড়াশোনা করে, তাহলে তাদের পেছনে সেই পরিবারের কত টাকা ব্যয় হতে পারে? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই শিশুরা যদি সরকারি স্কুলে পড়ে, তাহলেও তাদের কোচিং বাবদ মাসে অন্তত ১০-১২ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এর সঙ্গে স্কুল-কোচিংয়ে আসা-যাওয়া, টিফিন, শিক্ষাসামগ্রী বাবদ ব্যয় তো আছেই। এর সঙ্গে বাড়িভাড়া, খাবার, সামাজিকতা, যোগাযোগ বাবদ আরও কত টাকা ব্যয় হতে পারে, সেই হিসাব আর না-ই বা করলাম। এখন সেই ব্যক্তির মাসিক রোজগার যদি ৩০ হাজার টাকা হয়, তাহলে তিনি কীভাবে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করবেন, সেই কথা কি আমরা ভেবে দেখেছি? আর শিশুরা যদি বেসরকারি বা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করে, তাহলে কী পরিমাণ টাকা ব্যয় হতে পারে, তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ কথা ভাবার অবকাশ নেই যে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শুধু বিত্তবানের সন্তানেরা পড়াশোনা করে না, নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যবিত্তের সন্তানেরাও এখন ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করছে। এই মানুষদের অবস্থা কেমন হচ্ছে, তা কি আমরা একবার ভাবছি? আবার কেউ যদি সন্তানকে কোচিংয়ে না পড়াতে চান, তাহলে শিক্ষকেরা এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন, যাতে অভিভাবকেরা সন্তানকে কোচিংয়ে দিতে বাধ্য হন।
নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জ্বালাটা বেশি। বাস্তবতা হচ্ছে, অন্তত ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরের বাসিন্দাদের পক্ষে এখন আর বেতনের টাকা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হয় না। তাঁদের সবাই কমবেশি অতিরিক্ত উপার্জনের চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে তাঁদের ওপর কী পরিমাণ চাপ পড়ছে, তা আমাদের রাষ্ট্র কখনো ভেবে দেখে না!
অন্যদিকে সৃজনশীল পদ্ধতির সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে আমাদের শিক্ষা যেভাবে কোচিং ও প্রাইভেট টিউশন-নির্ভর হয়ে উঠছে, তাতে মধ্যবিত্তের অবস্থা ত্রাহি মধুসূদন। অথচ কথা ছিল, এই সৃজনশীল পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মুখস্থবিদ্যার চাপ থেকে রেহাই দেবে। তাদের সৃজনশীলতা ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটাবে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেট শিক্ষকের ওপর নির্ভরতা কমে আসবে। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টোটা ঘটছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ না দেওয়া এবং সামগ্রিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে সৃজনশীল পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে গড়ে না তোলার জন্য শিক্ষার্থীরা আরও বেশি করে কোচিং সেন্টারের দ্বারস্থ হচ্ছে। আবার অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলে মোটেও পড়ানো হয় না। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে পড়তে বাধ্য করছেন। রাজধানীর বড় বড় কোচিং সেন্টারের সামনে গেলে এই বাস্তবতা বোঝা যায়। ওখানে অভিভাবকদের সে কী ব্যস্ততা, সন্তানকে এক কোচিং সেন্টার থেকে আরেক কোচিং সেন্টারে নিয়ে যেতে হবে! ফলে অনেক নারী যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি করতে পারছেন না। এ অবস্থায় আমাদের বিপুল পরিমাণ শ্রমশক্তির অপচয় হচ্ছে, যা নিয়ে পৃথকভাবে গবেষণা করা যেতে পারে।
কথা হচ্ছে, শিক্ষা যে পুরোপুরি ব্যক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে, সেখানে রাষ্ট্রের ভূমিকা যে ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে, এ জন্য মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। তার জীবন কষ্টকর হয়ে উঠছে। শিক্ষাও যদি সবকিছুর মতো পণ্য হয়ে যায়, তাহলে বৈষম্য আরও বেড়ে যায়। এটা মোটেও আমাদের কাঙ্ক্ষিত নয়
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৫৩:০৬ ৩৪৭ বার পঠিত
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]